নিয়মনীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করে চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ডক কমিটি গঠিত হয়েছে। ইতিমধ্যে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগও উঠেছে সদ্য ঘোষিত এই কমিটির বিরুদ্ধে।
শ্রম আইন অনুযায়ী এই সংগঠনটির কোনো বৈধতা নেই বলে উলেস্নখ করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মুনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
গত ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ডক বন্দর শ্রমিক-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ গঠিত হয়। ৫০৫ সদস্যের এই আংশিক ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির পাশাপাশি পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদও গঠিত হয়। এ নিয়ে দেখা দেয় নানা বিতর্ক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর সরকার গেজেট প্রকাশ করে চট্টগ্রাম বন্দরের সব ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে। সরকারি গেজেটের কারণে তখন বন্দর জাতীয় শ্রমিক লীগ, চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিক লীগ, চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, বন্দর শ্রমিক ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম বন্দর ইসলামি শ্রমিক সংঘ- এই পাঁচটি রেজিস্টার্ড শ্রমিক সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছিল। পরে সরকারি নির্দেশে ২০১০ সালের ১৬ ফেব্রম্নয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ সিবিএ গঠন করা হয়।
এছাড়া বন্দর ব্যবহারকারী সব শ্রমিকদের আরেকটি সংগঠন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০০৮ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী এই দু'টি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার এখতিয়ার আছে বলে জানা যায়। কিন্তু নতুন সংগঠনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। নতুন এই কমিটি সাইফ পাওয়ার টেকের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
সূত্র জানায়, সাইফ পাওয়ার টেকের কর্মচারী আবুল বশরকে নতুন এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে রাখা হয়। বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তৎকালীন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আ.জ.ম নাছির উদ্দিনসহ একাধিক শীর্ষনেতার মদদে বন্দরে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল সাইফ পাওয়ার টেক। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয় থেকে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের সমর্থনে সিসিটি এবং এনসিটির টার্মিনাল পরিচালনার কাজ বাগিয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে হয়ে উঠে বন্দরের 'সুপার পাওয়ার'। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ডক কমিটি আত্মপ্রকাশের শুরুতেই বন্দরে এক বিদেশি আউটারে জাহাজে অপারেশন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। গত ১৫ জানুয়ারি বুধবার আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা এক কর্মচারীর শাস্তি মওকুফের দাবি তুলে পণ্য খালাসে বাধা দেয় সংগঠনটি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মুনিরুজ্জামান বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী এই সংগঠনটির কোনো বৈধতা নেই। কমিটি গঠনের আগে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। অযৌক্তিক দাবি জানিয়ে বন্দরে বিদেশি জাহাজের কাজে বাধা সৃষ্টি অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমরা চট্টগ্রাম বন্দরে বিতর্কিত ডক কমিটি গঠনের ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপে যাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন ডক কমিটির আহ্বায়ক আবুল বশর বলেন, আমরা এডহক কমিটি গঠন করেছি। এডহক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কোনো নিবন্ধনের প্রয়োজন হয় না। আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি সাইফ পাওয়ার টেকের কর্মচারি কিনা জানতে চাইলে বলেন, আগে ছিলাম, এখন নেই।
এদিকে বিতর্কিত ডক কমিটির কার্যক্রমের ব্যাপারে অনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে উলেস্নখ করা হয়, নিবন্ধনহীন এ সংগঠন অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করে জাহাজের কাজে বাধা সৃষ্টি করে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর ও দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। এ ধরনের কার্যক্রম জুলাই বিপস্নবের চেতনার পরিপন্থি। অসাধু চক্রটি পতিত স্বৈরাচারের দোসর। তারা দেশের বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকারী অবৈধ সিন্ডিকেট। দেশের সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং টাস্ক ফোর্সের সহায়তায় কুচক্রীমহলের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বদা সোচ্চার এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে বদ্ধপরিকর। জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে উপ-পরিচালক (নিরাপত্তা) আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠনের কথাও জানানো হয়।