কি হচ্ছে পেশাদারিত্ব সাংবাদিকদের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন সংগঠন রংপুর প্রেস ক্লাবকে নিয়ে। প্রেস ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নিতে কি উদ্দেশ্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। গঠন করা হয়েছে তত্ত্বাবধায়কমন্ডলী। হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা। কারাইবা নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে। এমন প্রশ্ন, উদ্বেগ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সাংবাদিক মহলে।
প্রেস ক্লাব সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রংপুর প্রেসক্লাব। তখন অস্থায়ীভাবে সাংবাদিকদের ওই ক্লাবে বসাবসির জায়গা ছিলো বর্তমানে নগরীর পায়রা চত্বর নামে পরিচিত তিন কানিয়া বিল্ডিংয়ের তিন তলায়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রেস ক্লাব পরিচালনায় করা হয় গঠনতন্ত্র। ওই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি দুই বছর পর হয় দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩ সদস্যের কমিটি ক্লাব পরিচালনা করে থাকে। বর্তমান মেয়াদে সভাপতি পদে মোনাব্বর হোসেন মনা ও সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মেয়াদ এখন শেষের দিকে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী জুলাই মাসে আবারও নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে সদস্যদের গোপন ভোটে ১৫ জন বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক ক্লাবের নতুন সদস্য হয়েছেন।
সূত্র মতে, ১৯৯১ সালের ১৪ জুলাই স্থানীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন প্রাপ্ত হয় সংগঠনটি। সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের আমলে শহরের প্রধান সড়ক সম্প্রসারণের কারণে ওই তিনকানিয়া ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। ফলে বাসাবসির জায়গা হারায় সাংবাদিকরা। এনিয়ে সাংবাদিকরা এরশাদের স্মরনাপন্ন হন। তার বদৌলতে নগরীর প্রধান সড়কের পাশে গুপ্তপাড়ায় অবস্থিত ৩৭ শতক জমি পায় প্রেসক্লাব। সেসময় সমাজসেবা অধিদপ্তরে কোন সহযোগিতা কিংবা হস্তক্ষেপ ছিলোনা এই ক্লাবটিতে। ৯৭ সাল থেকে প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের নিজস্ব অর্থায়নে এই ক্লাবের ভবনটি গড়ে উঠছে। এখন এটি ৫ তলার কাজ চলছে। নিবন্ধিত হওয়া থেকে পট পরিবর্তনের আগে এই ক্লাবের সাথে সমাজসেবার কোন যোগাযোগ কিংবা সম্পর্ক ছিলোনা। এমনকি তাদের কাছ থেকে কোন ধরনের সুবিধা নেয়নি।
এদিকে, হঠাৎ করে সমাজসেবা অধিদপ্তর দাবি করে প্রেসক্লাব নিয়ন্ত্রণে সমাজসেবার অধিনে তত্ত্বাবধায়কমন্ডলী গঠন করা হয়েছে। এনিয়েও চলে সমাজসেবার নাটকীয়তা। তাদের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদককে জানানো হয় বিষয়টি তিনি জানেনা। এমন কি বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা এর দায় নিতে নারাজ। অথচ ১৫ জানুয়ারি সমাজসেবা মহাপরিচালকের অধিনে বিভাগীয়, জেলা ও শহর শাখার কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক মন্ডলী। এই কপি জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে। এটিতে জেলা প্রশাসকের গোপনীয় শাখার প্রাপ্তির সিলে স্মারক নম্বর দেওয়া আছে।
অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণে নিতে সমাজসেবার পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশ নিয়ে এসে ১৯ জানুয়ারি প্রেসক্লাবে তালা লাগিয়ে দেয়। সেনা বাহিনীকে ভুল বুঝিয়ে প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো চেষ্টাও করেন তারা। অবশেষে তাদের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। ওই দিন প্রেসক্লাবে নতুন সদস্যভূক্তির জন্য ভোটের আয়োজন করা হয়েছিল। এবিষয়টি আদালতে গড়ায়। প্রেসক্লাবের পক্ষে আদালতের রায় পায়। পরে প্রেসক্লবে নতুন সদস্যভূক্তির ভোট নেওয়া হয়। ভোটে ১৫ জন নতুন সদস্য হন।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী জানিয়েছেন, তাদের সংগঠনের বিরুদ্ধে সমাজসেবার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি উস্কে দিয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে অনিয়ম ও দূর্নীতির দায়ে বহিস্কৃত সদস্যরা। বহিস্কৃতরা প্রেসক্লাবের ক্ষমতা থাকা অবস্থায় প্রশাসনেরও সুবিধা নিয়েছেন বলেও দাবি করেন সাধারণ সম্পাদক। তিনি প্রেসক্লাবের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রধান উপদেষ্টা ও সেনা প্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অ্যাডভোকেট জোবায়দুল ইসলাম বুলেট বলেন, প্রায় তিন যুগ ধরে পেু্রসক্লাবের সাথে সমাজসেবার কোন সম্পর্ক ও যোগাযোগ ছিলোনা। কোন আর্থিক অনুদান ও সুবিধা নেয়নি। কোন অডিট করেনি। নির্বাচনে তাদের কোন সম্পৃতা ছিলোন। এ অবস্থায় প্রেসক্লাবের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওযার কথা। প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে তাদের কর্মকান্ড অবৈধ।
রংপুর শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান ১৯ সাংবাদিকের বিরুদ্বে মামলা করেন। তিনি বলেন, উপরের নির্দেশে মামলা করা হয়েছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো, সাইদুর রহমানের সাথে এব্যাপারে কথা হয়। তিনি জানান, আইনগত কারণে প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটি ভাংগা ও মামলা হয়েছে। তবে তিনি আইনের ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য নন বলেও জানান তিনি।