সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
নতুন বই এসেছে ৯৮টি

বইমেলায় দর্শনার্থী বেশি, ক্রেতা কম

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বইমেলায় দর্শনার্থী বেশি, ক্রেতা কম
বুধবার ঢাকায় বাংলা একাডেমি ভবনে কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আহম্মদ ফয়েজ-এর লেখা 'সংবাদপত্রে জুলাই অভু্যত্থান' গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম -ফোকাস বাংলা

দেখতে দেখতে পার হয়ে গেল এবারের বইমেলার পঞ্চম দিন। এদিনও যথারীতি মেলার দুয়ার খোলা হয় বেলা তিনটায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। বুধবার মেলার শুরু থেকেই লোক সমাগম হতে থাকে। সন্ধ্যায় এসে তা পূর্ণতা পায়। তবে লোক সমাগত বাড়লেও সে অনুসারে বিক্রি বাড়েনি বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। আর বাংলা একাডেমি জানিয়েছে পঞ্চম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৯৮টি।

এদিন বিকাল চারটার দিকে মেলায় ঢুকেই ধুলার গন্ধে আচ্ছন্ন হতে হলো। মেলা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত পানি ছিটালেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানালেন কবি ও সম্পাদক বদরুল হায়দার। তিনি জানান, পাঁচ দিনেও লিটল ম্যাগাজিন প্রাঙ্গণে অনেক সম্পাদক আসেননি। এই চত্বরের বেশিরভাগ স্টলেই কেউ নেই। তিনি কবিতাচর্চা স্টলে নিয়মিত বসছেন।

তিনি বলেন, মেলায় ধুলার যে অবস্থা তাতে বেশি করে পানি ছিটানো জরুরি। এছাড়া মেলায় আগত ক্রেতা দর্শনার্থীদের মাস্ক পরিধান করা দরকার। লিটলম্যাগ চত্বরে এখনো পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা হয়নি বলেও উলেস্নখ করেন তিনি।

মেলার পঞ্চম দিন বুধবারও দেখা গেল কয়েকটি স্টলের সাজসজ্জার কাজ করছেন শ্রমিকরা। যদিও মেলা কর্তৃপক্ষ আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন চার তারিখের মধ্যেই সাজসজ্জার কাজ সম্পন্ন হবে।

এদিন ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় প্রাণের অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ জমে উঠলেও হাসি ফোটেনি বইয়ের স্টল ও প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষের। তারা বলছেন, ক্রেতার থেকে দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি।

বেলা তিনটায় বইমেলা শুরু হলেও লোক সমাগম বাড়তে থাকে বিকেলের দিকে। এসময় দর্শনার্থীরা স্টল ও প্যাভেলিয়নগুলোতে ভিড় জমান। অনেককে আবার ঘোরাফেরার ফাঁকে স্বাধীনতা স্তম্ভের পাশে আড্ডায় সময় কাটাতে দেখা যায়।

এদিকে, পাঠক ও দর্শনার্থী বাড়ায় স্বস্তি থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কম জানিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, বেশিরভাগই দর্শনার্থী। তারা স্টলে এসে বই দেখছেন, অনেকে বই পড়ে দেখছেন তবে কিনছেন না। অনেকে আবার বই হাতে নিয়ে ছবি তুলছেন। কাকলী প্রকাশনীর এক বিক্রয়কর্মী বলেন, এখন পর্যন্ত দর্শনার্থীই বেশি। বেশিরভাগ লোকজন বই দেখছেন। প্রতিবছরই এমন হয়। মাসের ১০ তারিখের পর থেকে ক্রেতা বাড়ে। এর আগে বেশিরভাগ লোকজন শুধু ঘুরে ঘুরে দেখে।

মিরপুর থেকে বইমেলায় আসা আতিক বলেন, এখনও মাসের বেতন হয়নি। এদিকে একটা কাজে এসেছিলাম, ভাবলাম বই মেলায় ঘুরে যাই। শুক্রবার বাচ্চাদের নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে। তখন তাদের পছন্দমতো বই কিনে দেব। আর নিজেও কিছু বই কিনার পরিকল্পনা

আছে। আজ শুধু ঘুরতে এসেছি।

বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'হোসেনউদ্দীন হোসেন : প্রান্তবাসী বিরল সাহিত্য-সাধক' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহমেদ মাওলা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আবুল ফজল। সভাপতিত্ব করেন শহীদ ইকবাল।

প্রাবন্ধিক বলেন, গভীর জীবনবোধ, ইতিহাস-চেতনা এবং প্রাগ্রসর চিন্তাশক্তি হোসেনউদ্দীন হোসেনকে সৃষ্টিশীল ও বিরল সাহিত্য-ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি নিজেকে কৃষক পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। হোসেনউদ্দীন হোসেনের কর্মজীবন যেমন বৈচিত্র্যময়, লেখালেখির ক্ষেত্রেও ছিলেন বহুমুখী। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জীবনীমূলক রচনা ইত্যাদি বিষয়ে স্বতন্ত্র চিন্তার মৌলিকগ্রন্থ রয়েছে তাঁর। গভীর জীবনবোধ ও বাস্তবতার বিনির্মাণ, রূপক তৈরির কুশলতা তাঁকে কালোত্তীর্ণ শিল্পীর মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে। তিনি ইতিহাসের দায়বদ্ধতা থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে বাংলার সংগ্রামী চেতনাকে দেখেছেন।

আলোচক বলেন, হোসেনউদ্দীন হোসেন মানুষ হিসেবে ছিলেন অত্যন্ত সাধারণ। বিস্তৃত পঠন-পাঠন ও জ্ঞানের গভীরতা তাঁর লেখালেখির জগৎকে সমৃদ্ধ করেছে। চিন্তার গভীরতায় ও জ্ঞানের পরিশীলনে তিনি ছিলেন মৌলিক। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সাহিত্যের নানাবিধ বিষয় নিয়ে যেমন তিনি তাঁর গভীর প্রজ্ঞার আলো ছড়িয়েছেন, তেমনি এদেশের ইতিহাস- ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়েও তাঁর নিবিড় পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে শহীদ ইকবাল বলেন, হোসেনউদ্দীন হোসেন ছিলেন একজন সহজাত লেখক। কবিতা দিয়ে সাহিত্যজীবন শুরু করলেও গদ্যের জগতে নিজ প্রতিভার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। তাঁর লেখায় বুদ্ধিবৃত্তি ও মননশীলতার ছাপ স্পষ্ট। লেখক হতে গেলে যে সততা, নিবিষ্টতা ও একাগ্রতা দরকার, তিনি আজীবন তার চর্চা করে গেছেন।

লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন এবং কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক শিবলী আজাদ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি আতাহার খান এবং আলমগীর হুছাইন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রানা আহমেদ এবং কাজী সামিউল আজিজ। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী বুলবুল ইসলাম, মো. আরিফুর রহমান, তাপসী রায়, পাপড়ি বড়ুয়া, ফারাহ হাসান মৌটুসী, মো. হারুনুর রশিদ, কামাল আহমেদ এবং নুসরাত বিনতে নূর। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ পাল (তবলা), মো. রিফাত হোসেন (কী-বোর্ড), অসিত বিশ্বাস (এসরাজ) এবং মো. হাসান আলী (বাঁশি)।

আজ বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'স্মরণ : মাহবুবুল হক' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তারিক মনজুর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মাহবুব বোরহান এবং মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ আজিজুল হক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে