মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২
নতুন বই এসেছে ১৬৬টি

বইমেলার পর্দা নামছে কাল

'মেলার আয়োজন নিয়ে বাংলা একাডেমির পেশাদারত্বের মান আরও বাড়ানো প্রয়োজন। অন্য বছরের মতো এবারও স্পনসরের ওপর বেশি নির্ভর করতে গিয়ে মেলায় নানা রকম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে'
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বইমেলার পর্দা নামছে কাল
বুধবার বইমেলায় একটি স্টলে বই দেখছেন ক্রেতারা -ফোকাস বাংলা

জুলাই গণ-আন্দোলনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত অমর একুশে বইমেলার পর্দা নামছে কাল শুকবার। বুধবার ছিল মেলার ২৬তম দিন। এদিকে মেলা শেষ হতে চললেও এবারের মেলা নিয়ে প্রকাশকদের আক্ষেপ কাটছে না। প্রথম দিন থেকেই এত মানুষ এল মেলায়, আশা ছিল বিক্রি ভালো হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হলো না। বই বিক্রি গতবারের তুলনায় অর্ধেকের কম।

বুধবারও লোকসমাগম যথেষ্ট থাকলেও বিক্রি যথেষ্ট ছিল না। সন্ধ্যায় বিভিন্ন প্রকাশকের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, এবার একটা ভিন্ন রাজনৈতিক পরিবেশে মেলা হচ্ছে। তাই সবার মনেই একটা দ্বিধা-সন্দেহ ছিল। কিন্তু স্রোতের মতো মানুষ এসেছে। বেচাকেনা কম হয়েছে বটে, তবে বইয়ের সান্নিধ্য পেতে এত মানুষের মেলায় আসাটাও ইতিবাচক বিষয়। এখন বই না কিনলেও হয়তো ভবিষ্যতে কিনবেন। তবে মেলার আয়োজন নিয়ে বাংলা একাডেমির পেশাদারত্বের মান আরও বাড়ানো প্রয়োজন। অন্য বছরের মতো এবারও স্পনসরের ওপর বেশি নির্ভর করতে গিয়ে মেলায় নানা রকম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বইমেলার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও আক্ষেপ করেছেন কেউ কেউ।

এদিন সন্ধ্যায় বইমেলায় একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'ফ্যাসিবাদের সময় ইতিহাসকে বিকৃত করার চক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা এমন, ইচ্ছা করলেই সঠিক ইতিহাসকে বিকৃত করা সম্ভব হয় না।'

এদিকে, বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ১৬৬টি।

এ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা একাডেমি জানায়, এদিন বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'জুলাই প্রজন্ম ও প্রযুক্তি : নতুন সামাজিক বন্দোবস্তের খোঁজে' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সামিনা লুৎফা নিত্রা। আলোচনায় অংশ নেন কলেস্নাল মোস্তফা এবং এহ্‌সান মাহমুদ। সভাপতিত্ব করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

প্রাবন্ধিক বলেন, 'বাংলাদেশের তরুণেরা চব্বিশের জুলাই থেকে তাদের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সংগ্রাম এবং রাজপথে রক্ত ঢেলে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তারা অসাধারণ চিন্তাশীল, প্রতিশ্রম্নতিশীল এবং উপলব্ধিশীল প্রজন্ম যারা তাদের আশেপাশের বিশ্ব সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন। এই প্রজন্ম যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবিষ্যতের মুখোমুখি হচ্ছে, সেই ভবিষ্যতের সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য তারা প্রস্তুত। এই প্রজন্মের তরুণেরা জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। ফলে প্রযুক্তির সঙ্গে এদের সম্পর্ক অনেক গভীর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শহুরে মধ্যবিত্ত তরুণদের সঙ্গে সব অঞ্চলের শিক্ষিত বা নিরক্ষর তরুণদের এক অভূতপূর্ব যোগাযোগের সেতু নির্মিত হয় যা জুলাই অভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে।'

আলোচকদ্বয় বলেন, 'জুলাই গণ-অভু্যত্থানে সবচেয়ে অগ্রগামী সৈনিক ছিলেন নতুন প্রজন্মের তরুণেরা। ফ্যাসিবাদী শক্তির পতনের পর দেশের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে দেশ গঠনের কাজে এগিয়ে এসেছেন তারা। '২৪-এর গণ-অভু্যত্থানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রযুক্তিনির্ভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার দারুণ সম্ভাবনা ও সুযোগ করে দিয়েছে। জুলাই অভু্যত্থানের চেতনার ওপর ভিত্তি করে নতুন সামাজিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রযুক্তিকে যথাযথাভাবে ব্যবহার করতে হবে।'

সভাপতির বক্তব্যে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, 'আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম আমাদের যে নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা উপহার দিয়েছেন তা জনপরিসরে

সংহত করতে হবে। এই সংহতি তখনই টেকসই হবে যখন আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক বন্দোবস্ত হাজির করতে পারব।'

বুধবার লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- শিশুসাহিত্যিক ফরিদ সাঈদ এবং কবি এবিএম সোহেল রশীদ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি শ্যামল জাকারিয়া, মানব সুরত, এ বি এম সোহেল রশীদ, ইউসুফ রেজা, রোকন জহুর, জামিল জাহাঙ্গীর, ক্যামেলিয়া আহমেদ, আশিক আকবর, নুরতার পারভীন, জেসমিন বন্যা, সোহেল আমিন বাবু, রুহুল মাহবুব, মঈন মুরসালীন এবং শাহ সিদ্দিক।

এদিন ছিল মৌসুমী আক্তার সুমি'র পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন 'নৃত্যশৈলী' এবং মো. জাকির চিশতি'র পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'শান্তিধাম ভাবদর্শন চর্যা চর্চা কেন্দ্র'-এর পরিবেশনা। এতে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী, পুতুল দাস, এলবার্ট অনিমেষ দাস, শুক্লা ঘোষ, রুমী আজনবী, বিপুল কুমার, মৌমিতা হক সেঁজুতি, তমালিকা হালদার মলি, জান্নাত-ই-ফেরদৌসী এবং দিপু সমদ্দার। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন কাজী মো. ইমতিয়াজ সুলতান (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), রবিনস্‌ চৌধুরী (কী-বোর্ড), ফিরোজ খান (সেতার), বিশ্বজিৎ সেন (মন্দিরা)।

আজ অমর একুশে বইমেলার সাতাশ-তম দিনে মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'বাংলাদেশ বিনির্মাণ : রাষ্ট্র কাঠামো' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রেজাউল করিম রনি। আলোচনায় অংশ নেবেন সৈয়দ নিজার। সভাপতিত্ব করবেন কাজী মারুফ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে