শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে পদত্যাগপত্র

চার শর্ত মানলে শিল্পকলায় ফিরবেন জামিল আহমেদ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
চার শর্ত মানলে শিল্পকলায় ফিরবেন জামিল আহমেদ
চার শর্ত মানলে শিল্পকলায় ফিরবেন জামিল আহমেদ

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে থাকতে চারটি শর্ত দিয়েছেন নাট্যনির্দেশক ও শিক্ষক সৈয়দ জামিল আহমেদ। মন্ত্রণালয়ের 'অযাচিত হস্তক্ষেপে' ক্ষুব্ধ হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে মহাপরিচালক পদ ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর রাতে চার শর্তের কথা জানিয়েছেন তিনি।

জামিল আহমেদ অভিযোগ করে বলছেন, 'মন্ত্রণালয় থেকে শিল্পকলাকে অধীনস্ত করে রাখতে চায়। শিল্পকলা যে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান- তারা সেটা মানতে চায় না।'

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় মহাপরিচালক পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি।

এ সময় 'আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপের' অভিযোগ তুলে শিল্পকলার সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের কাছে পদত্যাগপত্র দেন।

জামিল আহমেদ বলেন, 'আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় বলেছিলাম, শিল্পকলার কাজে সচিবালয় থেকে যেন কোনো হস্তক্ষেপ না করে। আসিফ নজরুল সাহেব থাকার সময় করেননি। কিন্তু ইদানিং ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ হচ্ছে।'

এরপর নিজের পরিকল্পনা এবং তাতে সরকারের সহযোগিতা না পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমি এ জন্য এটা সঠিক সময় মনে করি, আর মনে হয় ভবিষ্যতে কাজ করা সম্ভব হবে না এখানে। আমার পদত্যাগপত্র আপনাদের সামনে হস্তান্তর করছি আমাদের সচিবের কাছে।'

তবে ওই অনুষ্ঠানেই শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন বলেন, 'আমরা এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করিনি।'

অনুষ্ঠানে জামিল আহমেদের বক্তব্যের পরই দর্শক সারি থেকে কেউ কেউ তার পদত্যাগ 'মানা হবে না' বলেও আওয়াজ তোলেন। বক্তব্যের পর মঞ্চস্থ হয় বান্দরবান জেলা শিল্পকলা একাডেমির নাটক 'চইংজাঃ খ্রাং (কাল্পনিক)'। সুবীর মহাজন নির্দেশিত এই নাটকটি দর্শক সারিতে বসেই উপভোগ করেন জামিল আহমেদ।

নাটক শেষ হওয়ার পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপস্থিত দর্শকদের কেউ কেউ ঘিরে ধরেন জামিল আহমেদকে। তারা তাকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে অনুরোধ জানান।

এ সময় শিল্পকলা একাডেমির পরিচালনা পরিষদের সদস্য সামিনা লুৎফা নিত্রাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জুলাই আন্দোলনে নিহত আনাসের মা সানজিদা খান দিপ্তী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। তিনিও জামিল আহমেদকে মহাপরিচালক পদে থাকতে অনুরোধ করেন।

পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, 'এটি শিল্পকলার পরিচালনা পরিষদে আলোচনা করা হোক।'

তখন জামিল আহমেদ আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতার বিষয়ও প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেন।

এ সময় দর্শক সারি থেকে কেউ কেউ ভিডিওচিত্রে তার এই বক্তব্য ধারণ করতে চাইলে, সেখানে থাকা একজন ভিডিও করতে মানা করেন।

জামিল আহমেদ বলেন, 'ভিডিও করা হোক। আমার কাছে লুকোছাপা কিছু নাই। শিল্পকলায় আমাকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এখানে কাজ করতে পারছি না।'

পরিষদের সভার বিষয়ে জামিল আহমেদ বলেন, 'গত পরিষদে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার রেজু্যলেশনই অনুমোদিত হয়ে আসতে পাঁচ সপ্তাহ সময় নিয়েছে মন্ত্রণালয়। শিল্পকলায় তিন মাস পর পর পরিষদের সভা করার নিয়ম। পরবর্তী সভা কবে করা যাবে, আমি জানি না।'

এ সময় জামিল আহমেদ সবার সামনেই মন্ত্রণালয় এবং বর্তমান সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর হস্তক্ষেপের কিছু বিষয় তুলে ধরেন। শিল্পকলাকে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত ভাবার 'আমলাতান্ত্রিক' মনোভাবের বিষয়েও সমালোচনা করেন জামিল আহমেদ।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'তারা কেউ কেউ এখানে টাকা দিতে এমন মনোভাব দেখান, যেন মনে হয় তারা ভিক্ষা দিচ্ছেন। অথচ জনগণের টাকা এখানে দিচ্ছেন শিল্পকলাকে, কারো ব্যক্তিগত টাকা নয়।'

আইন অনুযায়ী শিল্পকলা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও মন্ত্রণালয় থেকে তা মানা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন জামিল আহমেদ।

শিল্পকলার মহাপরিচালকের ভাষায়, 'মন্ত্রণালয় থেকে শিল্পকলাকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানছে না। তারা অধীনস্ত করে রাখতে চায়। তারা চায়, আমাদেরকে তাদের সকল নির্দেশ মেনে চলতে হবে। যত পরিকল্পনা আছে, সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য শিল্পকলা একাডেমি। শিল্পকলা একাডেমি যে একটা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এটা তারা মানে না। আমাকে চার দিকে ঘিরে রেখেছে, একটা পা ফেলতে দিচ্ছে না। কাজ করতে দিচ্ছে না।'

জামিল আহমেদের চার শর্ত

নাট্যশালা মিলনায়তনে নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পর উপস্থিত সবাই জামিল আহমেদকে মহাপরিচালক পদে থাকার অনুরোধ করলে তিনি চারটি শর্তের কথা বলেন। তিনি বলেন, এই শর্তগুলো মানা হলে তিনি সিদ্ধান্ত বিবেচনা করবেন।

প্রথম শর্ত হিসেবে সৈয়দ জামিল বলেন, 'মন্ত্রণালয় থেকে শিল্পকলা একাডেমির কাজে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না। এটা সংবাদ সম্মেলন করে বলতে হবে।

'শিল্পকলাকে একটা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে দিতে হবে। যদি শিল্পকলা আইনগত সমস্যা করে, তবে পরামর্শ দেবে। কিন্তু হস্তক্ষেপ করবে না।'

এছাড়া শিল্পকলার কাজের জন্য তিনি ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন, যার চিঠি দিতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে।

তিন নম্বর শর্ত হিসেবে তিনি বলেছেন, 'শিল্পকলায় মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ফোকাল পয়েন্ট থাকবে না। এটা নিশ্চিত করতে হবে।'

আর চার নম্বর শর্ত হিসেবে 'আদিবাসী' বলার অধিকার চেয়েছেন সৈয়দ জামিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে