চট্টগ্রাম নগরের বাজারগুলোতে শাকসবজির দাম শুরুতে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও রমজানের প্রথম সপ্তাহ পার হওয়ার মুহূর্তে বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে অন্তত ৮ থেকে ১০ টাকা করে কমেছে। বাজারগুলোতে বর্তমানে শাকসবজি, নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিপণ্য, মাছ-মাংসের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে বোতলের সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকট ও দাম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। এমনকি খোদ সিটি মেয়র, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা মাঠে নেমেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি সরবরাহ, কমেনি দাম। তেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ আগের চেয়ে বেড়েছে, দামও কিছুটা কমেছে। নতুন তেল সব দোকানে পৌঁছালে দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
শুক্রবার নগরের অক্সিজেন, আতুরার ডিপো, বহদ্দারহাট, চকবাজার, কর্ণফুলী কমপেস্নক্স, কাজীর দেউড়িসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
শীতকালীন সবজির মধ্যে বাজারে প্রতিকেজি টমেটো ১০ থেকে ২০ টাকা, দেশি গাজর ৪০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৪০ টাকা, মূলা ৪০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আলু প্রতিকেজি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে, তবে দাম বেশি। বাজারে করলা ১০০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁয়াজকলি ৩০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
গেল সপ্তাহে বাজারে শসা প্রতিকেজি ৫০ টাকা ও ক্ষিরা ৬০-৭০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বাজারে শসা মানভেদে প্রতিকেজি ২০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের মধ্যে রুই মাছ ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতলা মাছ ৩০০ থেকে ৪৪০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, ছোট-বড় চিংড়ি মাছ ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, চাষের ও দেশি কৈ মাছ ২০০ থেকে ১০০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, চাষের ও দেশি শিং মাছ ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা, মেনি মাছ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চিতল মাছ ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, সরপুঁটি মাছ ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৪৫০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বাজারে খামারের ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালী মুরগি ২৮০ থেকে ২৮৫ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। হাঁড়সহ গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, কলিজা ৫৫০ টাকা ও হাঁড়বিহীন ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খাসির মাংস আগের মতোই ১১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
অপরির্তিত রয়েছে ডিমের বাজার। বাজারে ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১২০ টাকা, সাদা ডিম ১২০ টাকা আর দেশি মুরগির ডিম ২১০ টাকা ও হাঁসের ডিম ২৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে।
চালের মধ্যে প্রতিকেজি নাজিরশাইল হাফসিদ্ধ মানভেদে ৮৫ ও ৯০ টাকা, মিনিকেট সরু আতপ চাল মানভেদে ৫৮, ৬৫ ও ৭৪ টাকা, পাইজাম সিদ্ধ ৯০ টাকায়, ব্রি-২৮ চাল মানভেদে ৮০ ও ৮৬ টাকা, স্বর্ণা, চায়না ও ইরি মানের মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনিগুঁড়া প্রতিকেজি ১৪০ টাকা এবং কিছুটা উন্নতমানের চিনিগুঁড়া বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে অন্যান্য মুদিপণ্যের মধ্যে ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১২০ টাকা, মাষকলাইয়ের ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১২০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা, খোলা চিনি ১২০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া পেঁয়াজের দাম স্বস্তির পর্যায়ে আছে। বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৭০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর চায়না রসুন প্রতি কেজি ২৩০ টাকা, দেশি রসুন ১০০ টাকা এবং চায়না আদা ২০০ থেকে ২২০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে বাজারে পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৯৫০-৯৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই লিটার বোতল ৩৪৮ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, পাম সুপার ১৬০ টাকা, সরিষার তেল খোলা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়।
অথচ ভোজ্য তেলের দামে নাগাল টানতে গেল সোমবার দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে যৌথ অভিযান পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। সেখানে ভোজ্যতেল না পেয়ে পরদিন ভোজ্যতেলের আমদানিকারক, উৎপাদনকারী ও আড়তদারদের সার্কিট হাউসে বৈঠকে ডাকেন তারা। ওই বৈঠকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা নির্ধারণ ও ব্যবসায়ীদের চূড়ান্তভাবে সতর্ক করা হয়। ওই বৈঠকের পর ভোজ্য তেলের সরবরাহ এবং দাম স্বাভাবিক না হলে গুদামে গুদামে অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক। এরমধ্যে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টানা অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের টাস্কফোর্স। এত উদ্যোগের পরও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি তেলের বাজার। এখনও তেল কিনতে বাড়তি দামই গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
নগরের হালিশহর এলাকার বাসিন্দা ইউনুস বলেন, আমি ১৮০ টাকায় এক লিটার তেল কিনেছি, তবে আগের মতো অন্যকিছু কিনতে হয়নি। দামটা এখনও বাড়তিই রয়ে গেল।
তবে খাতুনগঞ্জের পাইকারি তেল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, এখন আগের চেয়ে সরবরাহ একটু বেড়েছে। দামও আগের চেয়ে ২০-৪০ টাকা কম। আশা করি দ্রম্নতই বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ সাংবাদিকদের বলেন, 'কিছু দোকানে সয়াবিন তেলের বোতল থাকলেও সেগুলো প্রদর্শন না করে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তারা নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন বাড়তি দামে। আর কিছু দোকানে তেল থাকলেও প্রতি লিটার ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা করে বিক্রি করছে। অথচ চট্টগ্রামে দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬০ টাকা। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা জরিমানা করেছি।'