শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

বাঘ বাঁচাতে বনে ছাড়া হচ্ছে হরিণ 

যাযাদি ডেস্ক
  ২০ জুন ২০২৫, ২৩:০৩
বাঘ বাঁচাতে বনে ছাড়া হচ্ছে হরিণ 
collected

খাঁচা থেকে বেরিয়ে পশ্চিম থাইল্যান্ডের ঘন ও আর্দ্র বনে ছূটে যায় বিশটি সাম্বার হরিণ। অবমুক্তির আনন্দে বিভোর হরিণগুলো জানেই না, আশপাশেই ঘোরাফেরা করছে প্রায় ২০০টি বিপন্ন বাঘ। তবে এই শিকারের মুখেই ঠেলে দেওয়াটাই এখন বাঘ রক্ষার কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

থাইল্যান্ড সরকারের বন বিভাগ ও আন্তর্জাতিক সংরক্ষণ সংস্থা ডব্লিউডব্লিউএফ -এর যৌথ প্রকল্পে হরিণ ছাড়ার এই কর্মসূচি বাঘের জন্য খাদ্য সরবরাহ করে। আর এর ফলেই পশ্চিম থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী বনে প্রায় বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যাওয়া বাঘ আজ আবার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।

থাইল্যান্ডের জাতীয় উদ্যান ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ দপ্তরের (ডিএনপি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালে পশ্চিমাঞ্চলীয় বনাঞ্চলে বাঘের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭৯ থেকে ২২৩-এর মধ্যে। ১৭ বছরেই এ বনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। হরিণ অবমুক্ত করাই বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাঘ সংরক্ষণের সবচেয়ে সফল উদ্যোগ।

ডব্লিউডব্লিউএফ -এর টাইগারস অ্যালাইভ প্রকল্পের নেতা স্টুয়ার্ট চ্যাপম্যান একে ‘অসাধারণ অর্জন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। কারণ এরইমধ্যে কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনামে ইন্দোচাইনিজ বাঘ বিলুপ্ত হয়েছে। আর মিয়ানমারে বনে টিকে আছে মাত্র ২৩টি।

পঞ্চম বছরে গড়িয়েছে বাঘ রক্ষার লক্ষ্য হরিণ অবমুক্তকরণ এই প্রকল্প। ডব্লিউডব্লিউএফ থাইল্যান্ডের গবেষণা ব্যবস্থাপক ওয়ারাপান ফুমানি বলেন, আগে এই অঞ্চলে হরিণ ছিল অত্যন্ত বিরল। ফলে বাঘের খাদ্য সংকট ছিল প্রকট। সাম্বার হরিণ, যা নিজেও একটি বিপন্ন প্রজাতি, তা এখন কৃত্রিমভাবে প্রজনন করে ছাড়ার মাধ্যমে এক ঢিলে দুই পাখি মারার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একদিকে বাঘের খাদ্য জোগান হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে হরিণের সংখ্যাও।

হরিণ ডিএনপি কর্মকর্তা চাইয়া দানফো বলেন, প্রতিটি হরিণই বাঘের আহারে পরিণত হয় না। বেশির ভাগই বনে মানিয়ে নেয় ও সন্তান উৎপাদন করে। এই প্রক্রিয়ায় তারা নিজেও টিকে থাকে, আবার বাস্তুতন্ত্রেও ভূমিকা রাখে।

বনে ছাড়া হরিণদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয় জিপিএস কলার দিয়ে। গবেষকদের মতে, এরা বন্য পরিবেশে নিজ উদ্যোগে শত্রু এড়িয়ে নিরাপদ জায়গা বেছে নিতে শিখেছে। শুধু খাঁচায় বড় হওয়া প্রাণী বলে তারা অসহায় থাকে না।

বাঘ রক্ষায় এই উদ্যোগটির ধারণা এসেছে আফ্রিকার পুরোনো প্রকল্পগুলো থেকে। যেগুলো এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ভারতের মতো দেশেও বাঘ সংরক্ষণে বড় সফলতা এসেছে। সেখানে বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা এখন প্রায় ৩ হাজার ৬০০। আর নেপালে রয়েছে প্রায় ৩৫৫টি বাঘ।

একশো বছর আগে যেখানে সারা বিশ্বে বাঘ ছিল প্রায় ১ লাখ। এখন তা কমে মাত্র ৫ হাজার ৫০০-তে নেমে এসেছে। তাই থাইল্যান্ডের এই ‘প্রি-রিলিজ কৌশল’ বিশ্বব্যাপী বাঘ সংরক্ষণের নতুন মডেল হিসেবে উঠে আসছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে