শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

যৌথ তেল শোধনাগারে কুয়েতকে বিনিয়োগের আহ্বান ড. ইউনূসের

যাযাদি রিপোর্ট
  ১০ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
যৌথ তেল শোধনাগারে কুয়েতকে বিনিয়োগের আহ্বান ড. ইউনূসের
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রোববার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশে কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আলি তুনইয়ান আবদুল ওয়াহাব হামাদাহ সাক্ষাৎ করেন -ফোকাস বাংলা

যৌথভাবে বাংলাদেশে একটি অপরিশোধিত তেল শোধনাগার স্থাপনে কুয়েতকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার ঢাকার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন 'যমুনায়' কুয়েতের নতুন রাষ্ট্রদূত আলি তুনইয়ান আবদুল ওয়াহাব হামাদাহ সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধান উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাক্ষাতকালে প্রধান উপদেষ্টা ও কুয়েতের রাষ্ট্রদূত দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করেন। সেখানে বিনিয়োগ, জ্বালানি, খাদ্য নিরাপত্তা ও অভিবাসী কল্যাণ-এই খাতগুলোতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তারা।

রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ ও কুয়েতের দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন এবং গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে উৎসাহিত করেন।

ড. ইউনূস বলেন, 'কুয়েত ও বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের বন্ধু। এখানে বিনিয়োগের অনেক সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে হালাল খাদ্য খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। বৈশ্বিক হালাল খাদ্যের বাজার বিশাল এবং আমি আশা করি তরুণদেরও এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।'

তিনি কুয়েতি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। এ ক্ষেত্রে ৭ থেকে ৯ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনকেও তাদের জন্য সুযোগ হিসেবে তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, 'সম্মেলনের সময় কুয়েত থেকে বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আসুন। এটি উভয় দেশের জন্য একটি বড় সুযোগ হবে।'

রাষ্ট্রদূত হামাদাহ কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ আহমেদ আব্দুলস্নাহ আল-আহমদ আল-সাবাহ ও কুয়েতের জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান। তিনি বলেন, 'আমরা একসাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ।' উভয় পক্ষ বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে কুয়েত থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা কুয়েতে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের, বিশেষ করে নারী কর্মীদের জন্য আরও ভালো কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার কথাও তুলে ধরেন মুহাম্মদ ইউনূস। কুয়েতে কর্মরত বাংলাদেশি সামরিক সদস্যদের পেশাদারিত্বের প্রশংসা করেনও তিনি। বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তারা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আমাদের অংশীদারিত্ব পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার উপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা বাণিজ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'

প্রধান উপদেষ্টার বিস্ময় : এদিকে, 'সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের ফেজ-৩' ও 'মেঘনা নদী রক্ষায় মহাপরিকল্পনা' প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে রোববার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। প্রকল্প দুটির কাজ ১০ বছর ধরে আটকে থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি।

এ দিন দুপুর ১২টায়

রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগ, ঢাকা ওয়াসা, পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ ও মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া।

বিস্ময় জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প প্রায় ১০ বছর ধরে আটকে আছে! অথচ ঢাকা শহরের মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে দিন দিন আমরা পরিবেশকে বিরাট হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছি। সংকট থেকে উত্তরণের রাস্তা থাকা সত্ত্বেও সে কাজটা এত বছর ধরে করা হয়নি।'

এসময় সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের কাছে এই প্রকল্প দু'টি শুরু করতে কোথায় বাধা রয়েছ্তে তা জানতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এর পাশাপাশি খরচ কমানোর বিষয়েও আলোচনা করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা শহরে মোট পানি সরবরাহের প্রায় ৭০ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ফলে পানির স্তর প্রতিবছর প্রায় ২-৩ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছ্তে যা টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং ভবিষ্যতে বড় রকমের বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করছে।

এ সংকট মোকাবেলায় মেঘনা নদী থেকে সরবরাহকৃত পানি 'সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প (ফেজ-৩)' এ পরিশোধন করে ঢাকা শহরে বসবাসকারীদের জন্য টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে মেঘনা নদী রক্ষা মহাপরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

জার্মানি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ প্রকল্পে সহায়তা করছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য বিদেশি সংস্থা ভবিষ্যতেও তাদের সহযোগিতা অব্যহত রাখবে, প্রয়োজনে সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

মেঘনা নদী রক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ১০ বছর আগে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়। পরিকল্পনার কাজটি সম্পন্ন হলেও বাস্তবায়নের কাজ এখনো শুরু হয়নি।

ঢাকার পাশে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীদূষণের কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, বাংলাদেশের অন্য নদীগুলোও বিভিন্ন রকমের সংকটে রয়েছে। এ অবস্থায় মেঘনা নদীকে রক্ষা করা সরকারের অগ্রাধিকার বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, 'মেঘনা নদী নিয়ে অনেক উৎকণ্ঠা। এটাকে বাঁচানোর জন্য আমাদের দ্রম্নত কাজ শুরু করতে হবে। বাংলাদেশের নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করার সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। তা না হলে এ এলাকার জন-জীবন বাঁচানো যাবে না।'

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অতি দ্রম্নত দাফতরিক কাজ শেষ করে চলতি অর্থবছরের মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

এর পাশাপাশি, নদী রক্ষা কমিশনকে কীভাবে আরও সক্রিয় করা যেতে পারে এবং পরিবেশ অধিদফতর ও নদী রক্ষা কমিশনের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে