সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারে নতুন জেলার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মো. শাহরিয়ার আলম চৌধুরী। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি জেল সুপার পলাশ তালুকদারের সঙ্গে সমন্বয় করে কারাগারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে নানা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কারা অধিদপ্তরের মূল লক্ষ্য হলো, কারাগারকে দুর্নীতিমুক্ত করা, বন্দিদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা। তারই ধারাবাহিকতায় কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকের দিকনির্দেশনায় তিনি যোগদানের পর কারাগারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিদর্শন করেন এবং বন্দিদের আবাসন, খাদ্য সরবরাহ, চিকিৎসা ব্যবস্থা, পানি সরবরাহ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। বিশেষ করে, দীর্ঘদিন ধরে চলমান পানির সমস্যার সমাধান দ্রম্নত করার জন্য তিনি বিশেষ উদ্যোগ নেন এবং পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে নতুন পাইপলাইন স্থাপনের নির্দেশ দেন।
এছাড়া, তিনি কারাগারের শৌচাগার ও রান্নাঘরের অবস্থা পরিদর্শন করেন এবং সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেন। জেলার যোগদানের পরপরই দর্শনার্থীদের জন্য একটি দর্শনার্থী শেড নির্মাণ ও বসার জায়গায় টাইলস লাগানোর ব্যবস্থা করেন। দর্শনার্থীদের পানির সমস্যা দূর করতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহায়তায় দর্শনার্থী কক্ষের ওপর দুটি পানির ট্যাংক স্থাপন করেন।
সমাজসেবার সহায়তায় বন্দিদের মধ্যে ২০০টি কম্বল বিতরণ করেন। এছাড়া, বন্দিদের মানসিক সুস্থতা, আনন্দ ও মোটিভেশনের জন্য খেলাধুলার প্রতিযোগিতা আয়োজন করেন।
বন্দিদের খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি কারাগারের রান্নাঘর সরাসরি পরিদর্শন করেন এবং খাদ্য প্রস্তুতের নিয়মকানুন কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ দেন। বন্দিদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে খাদ্য তালিকা পর্যালোচনা করেন এবং মানসম্মত খাবার সরবরাহের নিশ্চয়তা দেন।
তিনি বন্দিদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কারাগারের হাসপাতাল পরিদর্শন করে তিনি ওষুধের সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশ দেন এবং বন্দিদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা চালুর জন্য একজন স্থায়ী চিকিৎসকের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেন।
নতুন জেলার দায়িত্ব গ্রহণের পরই কারাগারের অভ্যন্তরে চলমান অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। তিনি ঘোষণা দেন যে, কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী বা বন্দি যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরপরেও দুইজন কারারক্ষী বন্দিদের স্বজনদের কাছ থেকে সাক্ষাতের কথা বলে অনৈতিকভাবে টাকা গ্রহণের ভিডিও তার নজরে এলে তিনি দ্রম্নত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে তিন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন্ত সাময়িক বহিষ্কার, বিভাগীয় মামলা এবং অন্যত্র বদলি।
তিনি আরও বলেন যে, কারাগারের ভেতরে অবৈধ লেনদেন ও অনিয়ম বন্ধে নিয়মিত চেকিং চালু থাকবে। কারাগারের নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে নতুন জেলার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে।
কারাগারের সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো। কারাগারের প্রধান ফটকে আধুনিক স্ক্যানিং ব্যবস্থা চালু করা। বন্দিদের নিয়মিত তলস্নাশি এবং অবৈধ পণ্য প্রবেশ বন্ধে বিশেষ দল গঠন। কারারক্ষীদের দায়িত্ব পালনে শৃঙ্খলা মেনে চলার নির্দেশ এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু।
তিনি বন্দিদের জন্য পুনর্বাসন কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন, যাতে তারা ভবিষ্যতে সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। বন্দিদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে নিয়মিত কাউন্সেলিং, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, কর্মমুখী প্রশিক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।
এছাড়া, তিনি বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ নিশ্চিত করতে নিয়মিত সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে রংপুর বিভাগের ডিআইজি প্রিজন তহিদুল ইসলাম জানান, বর্তমান কারা মহাপরিদর্শকের দিকনির্দেশনায় দেশের অন্যান্য কারাগারের মতোই ঠাকুরগাঁও কারাগারের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে মাদকদ্রব্য ও অতিবাস সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় মামলায় দুইজন কারারক্ষীকে চাকরিচু্যত করা হয়েছে। প্রশাসনিক কারণে ৭-৮ জন কারারক্ষীকে বিভিন্ন কারাগারে বদলি করা হয়েছে। শুদ্ধি অভিযান রংপুর বিভাগে চলমান রয়েছে।
ডিআইজি প্রিজন বলেন, 'বন্দিদের অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে আমরা যথাযথ তদারকি চালিয়ে যাচ্ছি। কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে রূপান্তর করতে হলে কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার, এবং আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।'