শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

মাতঙ্গিনী দেবী এক অদম্য বিপস্নবী

নন্দিনী ডেস্ক
  ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মাতঙ্গিনী দেবী এক অদম্য বিপস্নবী
মাতঙ্গিনী দেবী এক অদম্য বিপস্নবী

নারীরা একটা সময়ে পর্দার আড়ালে থাকতেন। তাদের ঘরেই আবদ্ধ থাকতে হতো। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপেক্ষিত ছিলেন। ধরে নেওয়া হতো, তারা শুধু ঘরসংসারের কাজ করবেন ও অন্তঃপুরবাসিনী হয়ে থাকবেন। আর বাইরের জগতের লড়াই শুধু পুরুষের জন্য। সেক্ষেত্রেও নারীদের অনুপ্রেরণার উৎস বলে বিবেচনা করা হতো। প্রত্যেক যুগেই নারী তার মেধা, বুদ্ধি, যোগ্যতা, শ্রম এবং মমতার সংমিশ্রণে গড়ে তুলেছে ভবিষ্যতের বুনিয়াদ, জন্ম দিয়েছে নতুন নতুন ইতিহাসের। তেমনই ইতিহাসের সাক্ষী মাতঙ্গিনী হাজরা। তার জন্ম ১৮৭০ সালে। তমলুক থেকে সামান্য দূরে হোগলা গ্রামে অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান তিনি। বাবা ঠাকুরদাস মাহাতী, মা ভগবতী দেবী। কড়া সামাজিক অনুশাসনেই দিন কাটতো মাতঙ্গিনীর। ১৯৩১ সালে মাতঙ্গিনী দেবী দেখলেন তার বাড়ির সামনে দিয়ে একটি শোভাযাত্রা যাচ্ছে। তিনি দেখলেন শোভাযাত্রায় কিছু যুবতী এবং কিশোরী শঙ্খধ্বনি দিয়ে স্বাধীনতাকে আহ্বান জানাচ্ছেন।

তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, এই শোভাযাত্রায় তিনিও যাবেন। তাকে সাদরে গ্রহণ করেন মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা। মিছিল পৌঁছল কৃষ্ণগঞ্জে। সেখানে একটি সভায় স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার শপথবাক্য পাঠ করলেন। শুরু হলো আরেকটি অধ্যায়। এরপরই শুরু সংগ্রাম। দেশের জন্য লড়াই। চরকা কাটা থেকে লবণ সত্যাগ্রহে অংশগ্রহণ। ইংরেজবিরোধী কর্মযজ্ঞে ছিল তার বিচরণ। বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে হয়ে উঠেছিলেন 'গাঁধী বুড়ি'। মাতঙ্গিনী হাজরা হলেন সেই যুগের একজন বিপস্নবী। তিনি সে সময়ে শুধু শাসক ইংরেজদের মাথাব্যথার কারণ ছিলেন না, পুরুষ শাসিত সমাজকেও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, নারীর সাহসের কথা। সে সময় যারা দেশবাসীদের উদ্বুদ্ধ করে সচেতন করেছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা ছিলেন তাদেরই অন্যতম। দরিদ্রতার কারণে লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হন তিনি। তাই ছোটবেলায় পড়ার সুযোগ পাননি। অল্পবয়সে তার বিয়ে হয় ত্রিলোচন হাজরা নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তিনি বিধবা হন। তার কোনো সন্তান ছিল না। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে এই নেত্রীর অবদান অনস্বীকার্য। ১৯০৫ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দেন তিনি, ১৯৩২ সালে অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেন। একাধিকবার জেলে যেতে হয়েছে তাকে- তবুও তিনি হার মানেননি। ১৯০৫ সালে প্রত্যক্ষভাবে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন মাতঙ্গিনী হাজরা। তিনি ইংরেজ পুলিশের বন্দুকের নলের সামনে সাহসের সঙ্গে দাঁড়ান। ১৯৪২ সাল, আন্দোলনে উত্তাল দেশ। সে বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ৭৩ বছর বয়সি মাতঙ্গিনী হাজরা ছয় হাজার মহিলা স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে তমলুক থানা দখলের উদ্দেশে মিছিল নিয়ে যান। শহরের উপকণ্ঠে মিছিল পৌঁছালে ব্রিটিশ পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে- যাতে বিপস্নবীদের জনসমাবেশ ভেঙে যায়। কিন্তু তা হতে দেননি মাতঙ্গিনী। ফলে, ইংরেজ পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। তিনটি গুলি লাগে মাতঙ্গিনী হাজরার শরীরে। সেদিন মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়েন এই অসীম সাহসী বিপস্নবী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে