চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইনজুরির কারণে প্রথম ম্যাচ খেলেননি মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ। তবে দুই ম্যাচই খেলেছেন আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। দলের দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার চলতি টুর্নামেন্টে কোন অবদানই রাখতে পারেননি। তাদের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোন কাজেই লাগছে না। সোমবার নিউজিল্যন্ডের বিপক্ষে দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের পারফরম্যান্স নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানিয়েছেন, দলের প্রয়োজনেই মাহমুদউলস্নাকে ফেরানো হয়েছে। আর দুই ম্যাচ ব্যর্থ হওয়া মুশফিক পরের ম্যাচে ক্যামবেক করবেন। শান্তর দাবি, দলের কেউ অটোচয়েজ নয়।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে গোল্ডেন ডাক মারা মুশফিক গতকাল (সোমবার) দ্বিতীয় ম্যাচে করেছেন ৫ বলে ২ রান। অন্যদিকে মাহমুদউলস্নাহর প্রথম ম্যাচে খেলা হয়নি। সোমবার খেলতে নেমে ১৪ বলে করেছেন ৪ রান। ফিল্ডিংয়ের সময় সেঞ্চুরিয়ান রাচিন রবীন্দ্রর ক্যাচও মিস করেছেন। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে নিয়ে উঠে প্রশ্ন। অটো চয়েজ বলেই কি একাদশে সুযোগ পাচ্ছেন মুশফিক-মাহমুদউলস্নাহ?
জবাবে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছেন, 'না না, এই টিমে কেউ অটোচয়েজ না। সৌম্য টপ অর্ডারে খেলে, রিয়াদ ভাই লোয়ার মিডল অর্ডারে। সৌম্য যদি খেলতো তাহলে ব্যাটিং অর্ডারটা অনেক বেশি পরিবর্তন করা লাগতো। রিয়াদ ভাইয়ের খেলাটা প্রয়োজন ছিল। শেষ ৪-৫ ইনিংস যদি দেখেন রিয়াদ ভাই খুবই ভালো ব্যাটিং করেছে। তাই দরকার ছিল।'
বাংলাদেশের অধিনায়ক দুই সিনিয়র ক্রিকেটারকে আলাদা ভাবে দেখতে চান না বলে জানিয়েছেন, 'দুই সিনিয়রকে আলাদাভাবে দেখতে চাই না। আমার মনে হয় দল হিসেবে আমরা ভালো খেলিনি। সিনিয়র দেখে তাদের প্রতি প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকবে এমনও না। পুরো ব্যাটিং গ্রম্নপ আমরা ভালো করিনি।'
মুশফিককে নিয়ে শান্ত বলেছেন, 'মুশফিক ভাইয়ের ৪-৫ ইনিংস নিয়ে চিন্তিত ছিলাম না। কিপিংটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আগে আমরা দেখেছি উনি কীভাবে দলের জন্য অবদান রেখেছেন। শেষ ৩ ইনিংস হয়তো হয়নি, হতে পারে। হয়তো পরের ম্যাচে উনি কামব্যাক করবেন।'
আইসিসি ইভেন্ট আসে যায়, কিন্তু বাংলাদেশের একের পর এক ব্যর্থতার গল্পের যেন শেষ নেই। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ব্যর্থতার গল্প লিখেছে নাজমুল হোসেন শান্তরা। টানা দুই ম্যাচে ভারত, নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। সাম্প্রতিক সময়ে বোলিং নিয়ে সন্তুষ্টি থাকলেও ব্যাটিংয়ের দুর্দশা কোনওভাবেই কাটছে না। একেকটি সিরিজ, একেকটি টুর্নামেন্ট আসে, কিন্তু বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের চিত্রটা একই। ম্যাচের আগে কিংবা পরে অধিনায়ক যেন পুরনো টেপ রেকর্ডারই নতুন করে বাজান, নতুন করে স্বপ্ন দেখান। যদিও সেই স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয় না।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে পুরনো কথাই নতুন করে বললেন শান্ত, 'আমাদের রসদ যা আছে, এদেরকেই সুযোগ দিয়ে দিয়ে এই জায়গাটায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং দায়িত্ব নিতে হবে। আমার মনে হয়, এই জায়গাটিতে (ব্যাটিং) আমরা একটু হালকাভাবে নিচ্ছি। আরেকটু দায়িত্ব নেওয়া উচিত।'
আইসিসির ইভেন্টে টানা ব্যর্থতার ব্যাপারে শান্ত বলেছেন, 'অনেক হতাশাজনক অধিনায়ক হিসেবে। গত কয়েক বছরে বোলিং ইউনিটের দিকে তাকালে আমরা বেশ ভালো করেছি। দারুণ কিছু কোয়ালিটি পেসার আছে আমাদের, স্পিনারও আছে। রিস্ট স্পিনার চেয়েছি সবসময়, এখন সেটাও আছে। তবে ব্যাটিং এবং ফিল্ডিংয়ে আমাদের অনেক উন্নতি করা দরকার। আমরা একই ভুল বারবার করছি। ব্যাটিংয়ে উন্নতি করা দরকার আমি এটা অনেকবার বলেছি। ব্যাটিংয়ে উন্নতি করতেই হবে। আশা করছি, এই টুর্নামেন্ট শেষে ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে কিছু পরিবর্তন এনে ব্যাটিংয়ে উন্নতি আনার চেষ্টা করবো আমরা।'
তবে এই পরিবর্তন মানে ক্রিকেটারের বদল নয়, ব্যাটিংয়ের ধরনে পরিবর্তন, 'পরিবর্তন বলতে ক্রিকেটার বদলে যাওয়ার কথা বলিনি। চিন্তাভাবনায় আরেকটু পরিবর্তন কীভাবে আনা যায়, আরেকটু কীভাবে দলের জন্য অবদান রাখতে পারি, দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে পারিৃ আসলে এসব আমাদেরই করতে হবে।'
সিরিজ কিংবা টুর্নামেন্টে ভালো করতে হলে তিন বিভাগে সম্মিলিত ভাবে ভালো করার বিকল্প দেখেন না শান্ত, 'আমরা সিরিজ জিতলেও বেশির ভাগ সময় ঘরের মাঠে জিতি। দেশের বাইরে সিরিজ কমই জেতা হয়। আইসিসি ইভেন্টেও একই অবস্থা। একদিন বোলিং ভালো হয় না, আরেক দিন ব্যাটিং খারাপ হয়, আরেক দিন ফিল্ডিং খারাপ হয়। কেমন যেন এলোমেলো ক্রিকেট হয়। আমাদের এটা থেকে বের হয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে সম্মিলিতভাবে ভালো করার উপায় বের করতে হবে।'
৫০ ওভারের ম্যাচে যদি ৩০ ওভার থেকে রানই না আসে, তাহলে আর বাকি থাকে কী! নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে এই চিত্রই দেখা গেছে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর মতে, মাঝের ওভারগুলোয় ঘনঘন উইকেট হারানো আর বড় জুটি গড়ে না ওঠায় এত বেশি ডট বল হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচে মোট ১৮১ বল থেকে কোনো রান নিতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। মাঝের সময়টায় দ্রম্নত উইকেট যাওয়ার ব্যাপারটি অবশ্য সত্যি। ২১তম ওভার থেকে ২৭তম ওভারের মধ্যে পরপর তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষকে উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউলস্নাহ।
তবে সমস্যাটি তো স্রেফ এই এক ম্যাচের নয়, আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে এরকম নিষ্ফলা ডেলিভারি ছিল ১৫৯টি। দুই ম্যাচ মিলিয়ে ৩৪০ বল থেকেই তাই কোনো রান আসেনি। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে এমনিতে সমস্যার কমতি নেই। ইনিংস বড় করতে না পারা, ম্যাচ পরিস্থিতি পড়তে না পারা, বল নির্বাচন ঠিকঠাক করতে না পারা, প্রয়োজনের সময় বিস্ফোরক হতে না পারা, এমন অনেক ঘাটতিই আছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলির একটি এই ডট বলের আধিক্য। তিনশ ছোঁয়া স্কোর বা বড় ইনিংস নিয়মিত গড়তে না পারার পেছনে বড় একটি কারণ এটি।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পর শান্ত কিছুটা মেনেও নিলেন না। সমাধানের সম্ভাব্য পথও ভাবনায় আছে তার,' এই জায়গায় তো অবশ্যই উন্নতির জায়গা আছে। দেখুন, আমরা নিয়মিত তিনশ করি না। এটা সত্যি। মেনে নিতেই হবে। আজকের যদি আপনি ডট বলের কথা বলেন, আমরা ৫ ওভার, ১০ ওভার পরপরই একটা করে উইকেট হারিয়েছি। ওই জায়গায় ব্যাটসম্যানদের জন্য খুবই কঠিন যে কীভবে স্ট্রাইক রোটেট করব। একটা-দুইটা বড় জুটি হলে এই ব্যাপারটা হতো না।'
"এই অভ্যাসটা তৈরি করা জরুরি যে, নিয়মিত আমরা কীভাবে তিনশ করতে পারি। আমরা হয়তো একদিন-দুদিন তিনশ করি। এখান থেকে বের হওয়ার জন্য অনুশীলনে বলেন, নিয়মিত কীভাবে ভালো উইকেটে খেলা যায়, নিয়মিত বড় দলের বিপক্ষে এই ধরনের স্কোর গড়া যায়, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আজকের ম্যাচে ডট বল হওয়ার কারণ, আমরা মাঝের ওভারগুলোয় কিছুক্ষণ পরপরই উইকেট দিয়ে দিয়েছি।' যোগ করেন বাংলদেশ অধিনায়ক শান্ত।