মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

রূপপুর প্রকল্পের ঋণের অর্থছাড়ের সময় বাড়াবে রাশিয়া

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, রূপপুর প্রকল্পের মোট ব্যয় আনুমানিক ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার রাশিয়ার ঋণ, আর বাকি ১০ শতাংশ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়ন। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণ বিতরণ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।
অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
  ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
রূপপুর প্রকল্পের ঋণের অর্থছাড়ের সময় বাড়াবে রাশিয়া
রূপপুর প্রকল্পের ঋণের অর্থছাড়ের সময় বাড়াবে রাশিয়া

দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদু্যৎ প্রকল্পপের ঋণের অর্থছাড়ের সময় ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়াতে রাজি হয়েছে রাশিয়া। মূলত বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় এই প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় গৃহীত ঋণের ব্যবহারের সময়সীমা দুই বছর বাড়াতে সম্মত হয়েছে রুশ পারমাণবিক কর্পোরেশন রোসাটম।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক বৈঠকে রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ আন্তঃসরকারি ঋণ চুক্তি (আইজিসিএ) সংশোধনের বিষয়ে ঐক্যমত হন। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, উভয় পক্ষ প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে দ্রম্নত 'প্রোটোকল নং ২' স্বাক্ষরের বিষয়ে একমত হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, রূপপুর প্রকল্পের মোট ব্যয় আনুমানিক ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার রাশিয়ার ঋণ, আর বাকি ১০ শতাংশ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়ন। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণ বিতরণ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।

এ পর্যন্ত বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে প্রায় ৭.৭০ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। তবে কোভিড-১৯ মহামারি এবং পরবর্তীকালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রকল্পের গতি শ্লথ হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরো অর্থ গ্রহণ সম্ভব হয়নি। ফলে, বাংলাদেশ ২০২৪ সালের জুনে রাশিয়াকে ঋণ বিতরণের সময়সীমা ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ জানায়। তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়। ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, যার ফলে বাংলাদেশ চুক্তির আওতায় অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি। চুক্তি সংশোধনের পর বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে রাশিয়া থেকে অবশিষ্ট ৩.৬৮ বিলিয়ন ডলার পাবে। প্রস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টা ও রোসাটমের মহাপরিচালক প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি সফলতা নিশ্চিত করতে কর্মীদের প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস লিখাচেভকে জানান, বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণে আগ্রহী। তিনি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক প্রযুক্তিতে দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থ ও অগ্রগতির ওপর গুরুত্ব দেন।

প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক বিদু্যৎ প্রকল্পে চলমান সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা ও বিদু্যৎ কেন্দ্র নির্মাণে রোসাটমের অব্যাহত সহায়তার প্রশংসা করেন অধ্যাপক ইউনূস। এছাড়াও বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করার ওপর জোর দেন।

লিখাচেভ জানান, রূপপুর বিদু্যৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে এবং ইতোমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের যেকোনো সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, বর্তমানে প্রকল্পের ড্রাই রান চলছে এবং শিগগিরই পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু হবে। বিদু্যৎ কেন্দ্রের ড্রাই রান এমন একটি পরীক্ষা, যেখানে প্রকৃত সরঞ্জাম বা সম্পদ ব্যবহার না করেই পরিচালনার মহড়া দেওয়া হয়। এরপর পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু হবে, যেখানে প্রকৃত সরঞ্জাম ব্যবহার করে বিদু্যৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম পরীক্ষা করা হবে।

লিখাচেভ আরও আশ্বস্ত করেন, রোসাটম সুরক্ষা, গুণগত মান ও আন্তর্জাতিক মানদন্ড নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বিদু্যৎ কেন্দ্রের সফল সমাপ্তির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাবে। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, সিনিয়র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন এবং ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার খোজিন, ফেডারেল এনভায়রনমেন্টাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড নিউক্লিয়ার সুপারভিশন সার্ভিসের ডেপুটি চেয়ারম্যান আলেক্সি ফেরোপন্টভ, রোসাটমের ফার্স্ট ডেপুটি-ডিরেক্টর আন্দ্রে পেট্রোভ এবং এএসই জেএসসির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রূপপুর এনপিপির প্রকল্প পরিচালক আলেক্সি ডেরি।

ইআরডি সচিব শাহরিয়ার জানান, ঋণ বিতরণের সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাবে রাশিয়া ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে আমরা সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার কার্যকারিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর আগেও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের আগে ২৫ ফেব্রম্নয়ারি রাশিয়ান প্রতিনিধিদল ইআরডির সঙ্গে একটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করে। এতে ইআরডি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ঋণ বিতরণ ও পরিশোধের সময়কাল বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, ঋণের প্রথম কিস্তি পরিশোধের নির্ধারিত সময় ১৫ মার্চ ২০২৭। তবে, পুরো অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ করা সম্ভব না হওয়ায় বাংলাদেশ ১৫ মার্চ ২০২৯ থেকে পরিশোধ শুরুর প্রস্তাব দিয়েছে। প্রোটোকল স্বাক্ষরের সময় বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। বর্তমানে রাশিয়ার কাছে বাংলাদেশের দেনার পরিমাণ ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার রূপপুর বিদু্যৎ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণের জন্য নেওয়া হয়েছিল। বাকি অংশ ঋণের সুদ ও বকেয়া সুদের অন্তর্ভুক্ত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে