আসন্ন কোরবানির ঈদযাত্রার বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে শুক্রবার। কিন্তু বিক্রি শুরুর কিছু সময়ের মধ্যেই ৪ ও ৫ জুনের টিকেট শেষ হয়েছে বলে দাবি করছেন অপারেটররা।
তাদের ভাষ্য, আগামী ৬ জুন কোরবানির ঈদ ধরে নিয়ে টিকেট বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসাবে এবার ঈদের আগে সময় পাওয়া গেছে মাত্র দুদিন। ৪ জুনের দিনের কিছু টিকেট এখনো থাকলেও রাতের টিকেট আর নাই।
বরাবরের মতো এবারও ঈদের বাস ভাড়া বেড়েছে। নন-এসি বাসের ভাড়া ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়লেও এসি বাসের ভাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ হয়েছে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়। বেলা ৯টার দিকে হানিফ এন্টারপ্রাইজের গাবতলী বালুরমাঠ মূল কাউন্টারে গিয়ে তেমন লোকজন দেখা গেল না। ঈদের অগ্রিম টিকেট দেওয়ার বুথে চারজন বসে আছেন। দু-একজন যাত্রী আসছেন, কাউন্টার থেকে বলে দেওয়া হচ্ছে ৪ ও ৫ জুনের টিকেট শেষ।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা হাজী মাজহারুল হক বললেন, ‘ঈদের আগে টাইমই তো পাইতাছি দুইদিন। তাও মানুষ টিকিট চাইতেছে ৪ তারিখ (জুন) রাইত থিকা। সকাল সাড়ে ৬টায় বিক্রি শুরু করছি, এখন আর বেশি বাকি নাই। আমরা এতো টিকেট কইত্থিকা দিমু।’
হানিফ এন্টারপ্রাইজের শ্যামলী কাউন্টারে আসা যাত্রী শিমুল ইসলাম বললেন, ‘হানিফ, শ্যামলী- সব পরিবহনে ঘুরলাম; কিন্তু ৪ তারিখ নাইটে কোনো টিকেট নাই। যাব রাণীরবন্দর (দিনাজপুর)। কাউন্টারওয়ালারা দুপুর বেলায় দুইটা টিকেট দিতে চাইল, কিন্তু ভাড়া দিতে হবে পঞ্চগড়ের। কিছু স্লিপার (এসি) বাসে এখনো টিকিট আছে শুনছি। ওই জন্য ওই টিকেট কিনি নাই।’
শ্যামলী পরিবহনের শ্যামলী রিং রোডের কাউন্টারে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যাওয়ার টিকেট কাটতে এসেছিলেন জোনায়েদ। কাউন্টার থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো, দুটো টিকেট আছে কিন্তু দিনাজপুর পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হবে। এজন্য যাত্রীকে দিতে হবে আড়াই হাজার টাকা।
রংপুর, দিনাপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়- এসব গন্তব্যের জন্য এসি স্লিপার বাসে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা সিটপ্রতি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে, যা সাধারণ সময়ে ১৪০০ থেকে ১৭০০ টাকার মধ্যে করে ওঠানামা করে।
আরাফাত পরিবহনের শ্যামলী রিংরোড কাউন্টারের কর্মী মো. রাফি বললেন, ‘আমাদের গাড়ি আছে ঠাকুরগাঁও পর্যন্ত। আপনি যেখানেই নামেন, আমরা লাস্ট স্টপেজের ভাড়া নিচ্ছি এখন, তিন হাজার করে পড়বে প্রতি সিট।’
এসি বাসের অনেক ভাড়া বাড়লেও নন-এসিতে বেড়েছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। কাউন্টারের কর্মীরা বলছেন, নন-এসি বাসের ভাড়া ঠিক করে দেয় সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিআরটিএ। সাধারণ সময়ে নন-এসিতে বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নেওয়া হয়। কিন্তু ঈদের সময় বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়াটাই নেওয়া হয় এবং অনেক কোম্পানি সব টিকেটের ক্ষেত্রে বাসের শেষ গন্তব্যের ভাড়া আদায় করেন।
নাবিল এন্টারপ্রাইজের কর্মী হাবিব বলেন, ‘ঈদের টাইমে কেউ যদি এখন পঞ্চগড়ের বাসে চড়ে রংপুর যাইতে চায়; তাহলে পঞ্চগড় বা ঠাকুরগাঁও পর্যন্ত ভাড়া রাখা হবে। কারণ আমাদের ফিরতি গাড়িগুলো সব ফাঁকা আসবে। কোনো কোনো ফিরতি গাড়িতে একটা যাত্রীও থাকে না, কিন্তু ঢাকা থেকে ট্রিপ ধরার চাপ থাকে।’
তার ভাষ্য, ‘যার কারণে ফাঁকা হলেও আমাদের সেটা নিয়েই আসতে হয়। ফলে আপ-ডাউন দুই ট্রিপের খরচ তুলতে হয় এক ট্রিপ থেকে। এসি বাসগুলান নিজেদের মতো করে ভাড়া বাড়াইতে পারলেও আমরা (নন-এসি) তো পারি না।’
এবারের ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের নিয়ে বেশ চাপে পড়ার শঙ্কার কথা জানালেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। গত রোজার ঈদে এক কোটি সাত লাখ মোবাইল সিম ব্যবহারকারী ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিল টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
রোজার ঈদের আগে ২৮ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত সাত দিনে তারা ঢাকা ছাড়েন। একজন ব্যবহারকারীর দুটো করে সিম ধরলেও পঞ্চাশ লাখের বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছিল বলে ধারণা করা যায়।
হানিফ পরিবহনের কর্মকর্তা হাজী মাজহারুল হক বলছেন, ঈদের পরে লম্বা ছুটি, অনেক মানুষ বাড়ি যাবেন। কিন্তু ঈদের আগের মাত্র দুদিনে বাস-ট্রেন মিলিয়ে এতো মানুষ যেতে পারবে কি না, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।