ভূমিহীন, প্রতিবন্ধী, অসহায়, দরিদ্র এক নারী আয়েশা খাতুন। ভিটে মাটি নেই তাই থাকেন অন্যের জমিতে। প্রায় ২৫ বছর আগে ছোট দুই ছেলে সন্তানকে রেখে মারা যান স্বামী তারা মিয়া। সেই থেকে নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও অনেক কষ্ট করে বড় করেছেন ছেলেদেরকে। এক সময় স্বামী সন্তান নিয়ে বাপের বাড়ীতে থাকলেও পরবর্তীতে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা সদর ইউনিয়নের নারায়নডহর গ্রামে অন্যের জমিতে একটি ছাপড়া ঘর করে বসবাস করে আসছিলেন। আয়েশা খাতুনের দু:খের কথার যেন শেষ নেই। প্রতিবন্ধী হয়েও তিনি পাননা প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা হয়েও পাননা বিধবা ভাতা। এই অবস্থায় পূর্বধলা থানা পুলিশ তাকে জমিসহ একটি ঘর উপহার দেওয়ার জন্য নির্বাচন করেন। যা গত রোববার ভার্চুয়ালি পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃক দেশের প্রতিটি থানায় স্থাপিত নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক উদ্বোধন ও গৃহহীন ৪০০নারীর মাঝে গৃহ হস্তান্তরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বুঝিয়ে দেন পূর্বধলা থানা পুলিশ।
স্বপ্নের ঘর পেয়ে খুশি হলেও শেষ হাসি হাসতে পারছে না প্রতিবন্ধী আয়েশা খাতুন। কারণ ঘর দিলেও ঘরের সাথে টয়লেটের কোন ব্যবস্থা না থাকায় তিনি ঘরে উঠতে পারছেন না। এমন অভিযোগে গত মঙ্গলবার আয়েশা খাতুনের বাড়ী গিয়ে খোঁজ নিতে গেলে নানা সমস্যা কথা তুলে ধরেন এই প্রতিবেদকের কাছে।
তিনি জানান, পূর্বধলা থানার ওসি স্যার তাকে ঘর দিয়েছেন এ জন্য তিনি খুশি। তবে ঘরের সাথে টয়লেটের কোন ব্যবস্থা না থাকায় তিনি ঘরে থাকতে পারছেন না। তিনি বলেন, আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। দুই পা নিয়ে চলতে পারি না। এই অবস্থায় ওই ঘরে গেলে আমি টয়লেটের কাজ করব কিভাবে। আয়েশা খাতুনের পুত্র শহিদ মিয়া জানান গত সোমবার রাতের বৃষ্টিতে পুরোঘর পানিতে ভরে গেছে। এভাবে বৃষ্টির পানি ঘরে আসলে মা কিভাবে থাকবে ওখানে? সরেজমিনে দেখা গেছে ৩কক্ষ বিশিষ্ট আধাপাকা ঘরটি পানিতে ভিজে সেঁতসেঁতে হয়ে আছে। কোন কক্ষের সাথেই টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলেও ওয়্যারিং করতে হয় দরিদ্র পরিবারটির নিজ খরচেই। এ সময় পরিবারের লোকজন জানান ঘর বুঝিয়ে দিলেও জমির মালিকানার দলিল এখনো দেওয়া হয়নি।
ভাতা না পাওয়ার বিষয়ে পূর্বধলা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মহিবুল্লাহ হক জানান আয়েশা খাতুনকে প্রতিবন্ধী তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তার একাউন্টে টাকা ঢুকবে।
পূর্বধলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম জানান, ঘর নির্মানের ডিজাইনে টয়লেট ছিলনা তাই টয়লেট নির্মাণ হয়নি। তবে উপকারভোগীর সমস্যার কথা ভেবে খুব দ্রুত একটি টয়লেট নির্মাণ করে দেওয়া হবে এবং ঘরে পানি পড়াসহ অন্যান্য সমস্যাগুলি সমাধান করে দেওয়া হবে। আর জমির দলিল হস্তান্তরের বিষয়ে বলেন, সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল লিখা ও সম্পাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। দলিল আসা মাত্র উপকারভোগীর হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
যাযাদি/এস