শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তফসিলের খবর নেই, ফেসবুক-পোস্টারেও সরগরম হবু প্রার্থীরা

গাজীপুর প্রতিনিধি
নতুনধারা
  ২০ মার্চ ২০২৩, ১৮:৫৫

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা না করা হলেও ইতিমধ্যেই নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

কেউ কেউ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে নানা প্রতিশ্রুত কথা ব্যক্ত করছেন। হবু প্রার্থীরা ফেসবুক এবং এলাকার দেয়ালে, খুটিতে নিজেদের এবং দলীয় নেতাদের ছবিসহ রং-বেরংয়ের পোস্টার, বিলবোড ও ব্যানার টানিয়ে নিজেদের প্রার্থীতা ঘোষণা করছেন তারা। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ধমীয় প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজেদের প্রার্থীতা ঘোষণা করে দোয়া ও সমর্থন চাইছেন।

সোমবার দুপুরে আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সাবেক সদস্য ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩৫ নং ওয়ার্ডের স্বর্ণপদক কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন।

তিনি এদিন নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি ১৯ দফা প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। ন্যায়, নীতি, সততা, ইনসাফ, আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, আদিবাসী, উপজাতিসহ সকল মানুষের জন্য শান্তির নগরী হিসেবে গড়ে তোলা।

বিগত দুই মেয়াদে যা হয়নি কিন্তু খুবই প্রয়োজনীয় নগরবাসীর সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আধুনিক স্মার্ট নগর ভবন গড়ে তোলা। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিক্ষা বান্ধব নগরী গড়ে তোলা।

শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ের মাধ্যমে এবং শিল্প মালিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে শ্রমিক ও শিল্পবান্ধব নগরী গড়ে তোলা। চাঁদাবাজী ও হয়রানী মুক্ত পরিবেশে ব্যবসায়ীদের জন্য হালাল ও বৈধ ব্যবসার মাধ্যমে ব্যবসা বান্ধব নগরী গড়ে তোলা।

রাস্তা ঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন ও সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিক ও স্মার্ট নগরী গড়ে তোলা। খাল খনন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও পয়নিষ্কাশনের যুগোপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নাগরিক সেবা প্রদান করা।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতা নিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক নির্মূল করা, ইভটিজিং ও ধর্ষণ প্রতিরোধ করে নিরাপদ নগরী গড়ে তোলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা। নগরের প্রত্যেক বাড়ী ঘরের, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের, শিল্প-কলকারখানা, হাসপাতাল, মার্কেট, বাজার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পরিস্কারের মাধ্যমে স্মার্ট ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জৈব সার উৎপাদন করা।

নগরের প্রত্যেক অঞ্চল এলাকায় একটি করে গণকবরস্থান, একটি করে খেলার মাঠ, একটি করে পার্ক নির্মাণ করা। নারী ও পোশাক শ্রমিক সহ সকল পেশাজীবী ও শ্রেণি পেশার মানুষদের রাতে রাস্তায় চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত সড়কবাতির ব্যবস্থা করা। মসজিদের খতিব, ইমাম, মোয়াজ্জিন, কওমী মাদরাসা, এবতেদায়ী মাদরাসা, দাখিল, আলীম, ফাজিল, কামিল মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন স্কুল, হাই স্কুল, ল' কলেজ, নার্সিং কলেজ, কারিগরি স্কুল ও কলেজ, মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জন্য একটি আধুনিক স্মার্ট মিলনায়তন, কম্পিউটার ল্যাব ও লাইব্রেরী এবং রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠা করা।

নগরীর সব শ্রেণী পেশার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নগরের প্রত্যেক অঞ্চলে একটি করে স্বাস্থ্য কেন্দ্র/মাতৃসদন হাসপাতাল নির্মাণ করা যেখানে এম্বুলেন্স ও অনলাইন হেল্প হেলথ সেন্টারের সুবিধা থাকবে। নিয়মিত মশক নিধনের মাধ্যমে নগরবাসীর সেবা প্রদান করা। নগরীর সব ওয়ার্ডে-পাড়া-মহল্লায় ও বাড়ীতে ব্যাপকভাবে বৃক্ষ বিতরণ ও বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী ভাওয়ালের শালবনের গাজীপুর মহানগরীকে সবুজ নগরী হিসাবে গড়ে তোলা।

সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থ থেকে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী, বিধবা, বয়স্ক মানুষদের এবং মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী সহ অন্যান্য মানুষদের ভাতা প্রদান করা। নগরীর প্রত্যেক বাসায় বাসায় সুপেয় পানি সরবরাহ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা। আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্পহোল্ডিং ট্যাক্সের ক্ষেত্রে নগরবাসীর জন্য বাস্তব সম্মত কর নির্ধারণ করা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের শুরু ও শেষ সীমানায় (স্বাগতম ও বিদায় গেইট) তোরণ নির্মাণ করা। নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা কালে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে প্রায় দেড় হাজার লোক অংশ নেন।

এরআগে গত শনিবার বিকেলে গাজীপুর মহানগরের তেলিপাড়া এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলনে দলীয় প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন ইসলামী আন্দেলনের আমীর চর মোনাইয়ের পীরখ্যাত সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচণের জন্য সংগঠণটির যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানকে ঘোষনা দেন। এদিন তার হাতে সংগঠনের প্রতীক পাখা তুলে দিয়ে দলের আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম সকলের কাছে ও সহযোগীতা চেয়েছেন এবং সেখানেও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

এছাড়াও গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাড. আজমত উল্লাহ খান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন, গাজীপুর সিটির সাময়িক বরখাস্ত মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও কাউন্সিলর মো. আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহবায়ক মো. কামরুল আহসান সরকার রাসেল, যুগ্ম আহবায়ক মো. সাইফুল ইসলামসহ বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দের নাম শোনা যাচ্ছে।

তাদের অনেকেই নিজেদেরকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে এলাকায় ভোটারদের আগাম প্রচারণা শুরু করেছেন। শুধু মেয়র পদেই নয় কাউন্সিলর পদেও অনুরূপ প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। ১৫ মার্চ ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, আগামী জুনের মধ্যে গাজীপুর, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এপ্রিলের মাঝামাঝি এসব সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কমিশনের এ খবর পেয়ে গাজীপুর সিটির হবু প্রার্থীদের মধ্যে সাড়া পড়েছে। তারা এখন আগাম প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে