শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ধানের গায়ে হেমান্তের শিশির আমনের চনমনে গন্ধে মাতোয়ারা দামুড়হুদার কৃষকরা ঘাম ঝরানো স্বপ্নের ফসল কাটতে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণী

হাসমত আলী দামুড়হুদা(চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি
  ২০ নভেম্বর ২০২৩, ২০:৩৮
ধানের গায়ে হেমান্তের শিশির আমনের চনমনে গন্ধে মাতোয়ারা দামুড়হুদার কৃষকরা ঘাম ঝরানো স্বপ্নের ফসল কাটতে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণী

অগ্রহায়ণের ঝকঝকে আকাশ। মাঠে মাঠে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন দুলছে। বাতাসে হিমগন্ধে শীতের মাঠজুড়ে সোনারঙা ধানের ছড়াছড়ি। আমন ধানের চনমনে গন্ধে মাতোয়ারা কৃষক-কৃষাণীরা। দিগন্তজোড়া মাঠ সেজেছে যেন হলুদ-সবুজ রঙে। ঘাম ঝরানো স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক। কোমর বেঁধে উৎসাহ-উদ্দীপনায় চলছে কৃষকের কাস্তে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় নির্বিঘেœ ধান কাটা মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে পারছেন কৃষক। এবার ধানের দাম বেশি পেয়ে খুব খুশি কৃষকরা। ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দুর আলতো পরশ আর মিষ্টি রোদের স্নিগ্ধতা জানান দিচ্ছে বছর ঘুরে আবার এসেছে অগ্রহায়ণ। এসেছে বাঙালির প্রধান কৃষিজ ফসল ধান কাটার ক্ষণ। কৃষকের আঙিনায় গড়াগড়ি খাচ্ছে নতুন ধান। গ্রামেগঞ্জে মাঠে মাঠে ম-ম গন্ধ। বাংলার ঘরে ঘরে মানুষ মেতে উঠছে এই নব-অন্নের ঘ্রাণে। স্মরণাতীতকাল থেকেই বাঙালির জীবনে নতুন ধান কাটা আর সেই ধানের প্রথম অন্ন গ্রহণকে কেন্দ্র করে আয়োজন হয় নবান্ন উৎসব। সুঘ্রাণ খেজুর রস সংযোগে নতুন চালে তৈরি হচ্ছে পায়েস ও পিঠা-পুলি। বউ-ঝিদের নাইওর করার ধুম পড়েছে গ্রামে গ্রামে। দামুড়হুদা উপজেলায় পুরোদমে ধান কাটার নবান্নের উৎসব। আর এ ফসল কাটার মহোৎসবে ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছেন এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা। শীতের সকাল থেকে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত মাঠে-মাঠে ফসল কাটার চিরাচারিত দৃশ্য এখন বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে দেখা যাচ্ছে। তবে শ্রমিক সঙ্কটে ধান কাটা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। চলতি আমন মৌসুমে দামুড়হুদায় উৎসাহ নিয়ে আমন ধান কাটার কাজ শুরু করেছেন কৃষকরা। দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা তাদের চাষাবাদকৃত ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। এ বার উৎসাহ নিয়ে ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু করলেও বাজারে ধানের ফলন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে কৃষক । ধানের ফলন এ বছর খুব ভালো না হওয়ার কারণে অনেক কৃষকের খরচ হঠবে না । তবে বর্তমান বাজারে ধানের দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি । এবারে বর্ষা মৌসুমে সঠিক সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকুলে ধানের ফলন ভালো হবে বলে তাদের মধ্যে আশার সঞ্চার দেখা দিয়েছিলো। এ বছর আমন ধান পাকার সময়ে কিছু ধানের জমিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ হলেও তারপরেও ধানের ফলন ভালো হচ্ছে । বিঘাপ্রতি ১৬-১৯ মন ধান হচ্ছে।

দামুড়হুদা উপজেলার ধান্যঘরা গ্রামের কৃষক ইউসুপ বলেন, ধান উৎপাদন খরচ একটু বেশি হয়েছে। বাজারে ধানের দাম যদি মণ প্রতি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা হয় তাহলে তাদের উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা লাভবান হবে । এ ছাড়া মাঠ থেকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য শ্রমিকদের মুজুরি মূল্য বেশী দিতে হচ্ছে। এসব খরচ বাদ দিলেও কৃষকরা এ বছর অনেক লাভ না হলেও লোকসান হবে না।

উপজেলার মদনা গ্রামের শফিকুল জানায়, আমার প্রায় ৩বিঘা জমিতে মাত্র ৩৭ মন ধান হয়েছে। এবছর মাজরা ও বাদামি ফটিংয়ের কারণে ধানের শিষ কেটে দিয়েছে। এবছর ভালো ফলন না হবার কারণে ১০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

সরকারপাড়া এলাকার কৃষক সাইনুল রহমান বলেন, '৫ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আমন ধান আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করছি প্রত্যাশিত দাম পাব। ধানের কাঁচা আঁটি (খড়) বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছি। ধান মাড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই জমিতে বাড়তি ফসল হিসেবে আলু, বেগুনসহ শীতকালীন সবজি ও সরিষা চাষ করতে পারব। এটা বাড়তি ফসল আমার জন্য।'

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা জানান, এবারে দামুড়হুদা উপজেলায় আমন ধানের লক্ষমাত্রা ছিল ৭ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে।আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষমাত্রর চেয়ে ২৯৫ হেক্টর বেশি। উৎপাদন ধরা হয়েছিল ৩৭হাজার ৯৯৫ মেট্রিকটন।ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন মাঠের ধান কাটা-মাড়াই শুরুহয়েছে। তারপরও কৃষি বিভাগের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণ করার পাশাপাশি অনুকূল আবহাওয়া ও সুষম সার ব্যবহারের কারণে এবার আমন ধানের আশাতীত ফলন হয়েছে। আশা করছি উতৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তবে এ বছর আবহাওয়া জনিত কারনে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারনে মাজরা ও বাদামী ঘাস ফড়িং পোকার আক্রমন বেশি ছিলো। যা আমরা কৃষকদের বালাই নাশকের মাধ্যমে জমির ধানে দেবার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে