খুলনায় মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ অফিস, শেখ হেলালউদ্দিন এমপির বাড়ি,খুলনা জেলা পরিষদ, খুলনা ক্লাব এবং খুলনা প্রেসক্লাব ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম মূর্শেদীর বাড়ি সম্পাদক কামরুজ্জামান জামালের অফিসে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রবিবার এই ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এদিকে, সংঘর্ষে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহজালাল সুজন, জেলা যুবলীগের সভাপতি চৌধুরী রায়হান ফরিদ, জেলা স্ব্চ্ছোসেবক লীগ সভাপতি শেখ মো. আবু হানিফ ও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি পারভেজ হাওলাদার, এনটিভির সাংবাদিক আবু তৈয়বসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনব্যাপী নগরীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও তা-বের ঘটনা ঘটলেও পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা দেখা যায়নি। খুলনা মহানগীর বিভিন্ন যায়গাতে চার প্লাটুন বিজিবি টহল দিতে দেখা গেছে।দিনব্যাপী নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র পিকচার প্যালেস মোড়ে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল বের হয়। অপরদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় থেকে পাল্টা মিছিল বের করে। দুটি মিছিল মুখোমুখি হলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহজালাল সুজন, জেলা যুবলীগের সভাপতি চৌধুরী রায়হান ফরিদ, জেলা স্ব্চ্ছোসেবক লীগ সভাপতি শেখ মো. আবু হানিফ, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি পারভেজ হাওলাদার, অ্যাডভোকেট কণিকা বিশ^াস, অ্যাডভোকেট বিজন কুমার ম-লসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিছু হটলে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় দোকানপাট ভাঙচুর ও আওয়ামী লীগ অফিসের নিচে রাখা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে সিটি করপোরেশন ভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর জেলা পরিষদ ভবন ভবন ভাঙচুর করে। এ সময় জেলা পরিষদের নিচেয় রাখা যমুনা টেলিভিশনের খুলনা প্রতিনিধি প্রবীর বিশ^াসের মোটরসাইকেলসহ ৫টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এছাড়া আহসান আহমেদ রোডে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান জামালের অফিস ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া জামালের অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং ৩টি মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে যশোর রোডস্থ নৌপরিবহন অফিস ভাঙচুর করা হয়। এরপর খুলনা প্রেসক্লাবে হামলা ও প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।
এ সময় সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুপুর ৩টার দিকে নগরীর গগনবাবু রোডস্থ আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম মূর্শেদীর (এমপি) বাসভবনে হামলা করে। এ সময় বাড়ির নিচেই রক্ষিত ৩টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের বাড়িতে হামলা হরা হয়। এ সময় মেয়রের বাড়ির দায়িত্বরত গানম্যানরা গুলি করলে বিক্ষোভকারীরা পিছু হটে। বিকাল ৪টার দিকে জেলা পরিষদ ভবনে পুরনায় অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ সময় ১টি পাজেরো, একটি একজিও জিপ ও দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। বিকাল পৌঁনে ৫টার দিকে পুনরায় খুলনা প্রেসক্লাবে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া শেখ হেলালউদ্দিন এমপি ও সেখ সালাউদ্দিন এমপির বাসায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়াও নগরীর শিববাড়ী মোড়, সাতরাস্তার মোড়, ডাকবাংলোর মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, সদর থানা মোড়সহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
খুলনা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রুলিয়া আফরোজ জানান, সংঘর্ষে আহত ২৫-৩০ জন সদর হাসপাতালে আসার পর কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহত এমডিএ বাবুল রানা ও শেখ শাহজালাল হোসেন সুজনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে গতকাল রবিবার খুলনা থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। নগরীর অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। অফিস-আদালত খোলা থাকলেও মানুষের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। নগরীতে ইজিবাইক, রিকশা, বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চলাচল করলেও ভারী কোনো যানবাহন চলাচল করেনি।
যাযাদি/ এম