বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

বিএসএফ’র নির্যাতনের শিকার যুবকের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৩৯
বিএসএফ’র নির্যাতনের শিকার যুবকের মৃত্যু
ছবি: যায়যায়দিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র নির্যাতনের পর মুরাদ মিয়া ওরফে মুন্না-(৩৬) নামে এক যুবক মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সেজামুড়া সীমান্তে এই ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মুরাদ মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।

মৃত মোঃ মুরাদ মিয়া ওরফে মুন্না বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সেজামুড়া গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। মৃত মুরাদ মিয়ার স্ত্রী রত্না বেগম অভিযোগ করে বলেন, সীমান্তের কাছে আমাদের জমি আছে। সেখানে আমরা সবজি চাষ করি।

সকালে আমি সেই সবজি ক্ষেতে গিয়েছিলাম। বিকেলে আমার স্বামী লিচু গাছে পানি দিয়ে বললো আমি জমি দেখে আসি। দীর্ঘক্ষণ পর না আসায় আমি বিকেল ৫টার দিকে তাকে খোজাখুজি করি। কিন্তু তাকে আমি পাইনি। পরে একজন ফোন দিয়ে জানায় বিএসএফ তাকে ধরে নিয়ে গেছে।

বিভিন্ন জায়গায় আমি ঘটনাটি জানাই, তারপরও তার সন্ধ্যান পাচ্ছিলাম না মাগরিবের নামাজের পর একটি বাচ্চা এসে জানায় সীমান্তে তাকে মারধোর করে ফেলে দিয়ে গেছে। আমরা তাকে পেয়ে জিজ্ঞেস করি করলে সে জানায় বিএসএফ তাকে ডেকে নিয়ে মারধর করেছে। পরে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

মুরাদের বড় বোন আমেনা খাতুন বলেন, সন্ধ্যায় বিজিবি খবর দিলে আমরা ধানক্ষেত থেকে আমার ভাইকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করি। পরে তাকে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। সেখান থেকে এ্যাম্বুলেন্সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। তিনি বলেন, সীমান্ত পিলার থেকে আমাদের বাড়ি ১৫০ গজ দূরে। আমার ভাই সীমান্তে জমিতে চাষ করে। এছাড়াও বাজারে তার ব্যবসা রয়েছে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।

এ ব্যাপাওে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সফিউল্লাহ আরাফাত জানান, জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর আমরা সাথে সাথে ইসিজি করি। ইসিজি অনুযায়ী তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্যে হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয় এবং পুলিশকে জানানো হয়।

এ ব্যাপারে বিজিবি ২৫ ব্যাটালিয়নের (সরাইল ব্যাটালিয়ন) অধিনায়ক লে. কর্নেল ফারাহ্ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, বিএসএফ জিরো লাইন অতিক্রম করার কথা নয় বা করবে না। মুরাদ নামে এক ব্যক্তি অবৈধ ভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে আবার ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু কি কারণে তিনি সেখানে গিয়েছেন বা কে তাকে ধরে নিয়ে গেছে এবং মেরেছে তা এখনো জানা যায়নি। তিনি এসে একটি গাছের নিচে বসে ছিলেন। তখন আমাদের টহল টিম তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানিয়ে ছিলেন, অবৈধ ভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ফিরে এসেছেন। তখন একজনের মাধ্যমে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিএসএফের সাথে কথা বলে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।

এদিকে বুধবার দুপুরে জেলা নাগরিক পার্টির নেতা মোঃ আজিজুর রহমান লিটনের নেতৃত্বে জেলা নাগরিক পার্টির নেতারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে মুরাদ মিয়ার লাশ দেখতে যান। এ সময় তারা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।

যাযাদি/ এমএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে