কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর পৌর শহরের 1নং ওয়ার্ডের বসন্তপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অবস্থিত। এ বিদ্যালয়ের পাশে 4-5 গজ দরে গড়ে উঠেছে বিদ্যালয়টি। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা 114 জন। এই পৌরসভাটি 'খ' শ্রেণীভূক্ত ১৮৬৯খ্রীঃ ৮ এপ্রিল ময়মনসিংহ পৌরসভারও একদিন আগে প্রতিষ্ঠিত হয় ০৯ টি ওয়ার্ড নিয়ে। যার আয়তন ৯.৮৪ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায় ২৬,৯২৫ জন। পৌরসভায় প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ টনের উপরে বর্জ্য আবর্জনা তৈরী হয়। অথচ এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য আবর্জনা অপসারণের জন্য নেই কোনো ভাগাড়, নেই কোনো ডাম্পিং স্টেশন।
নির্দিষ্ট কোনো ময়লার ভাগাড় না থাকার কারণে পৌর শহরের সকল ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও বিভিন্ন স্থাপনার আশেপাশে ফাঁকা জায়গাগুলোতে। সিলিমেরকান্দি নামের একটি খাল পৌর শহরের থানা রোড হয়ে বাজিতপুর বাজারের মধ্য দিয়ে এসে বাজারের পিছন সংলগ্ন ৭৯ নং বসন্তপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একেবারে পাশ ঘেঁষেই বয়ে যেতো। বর্তমানে খাল খনন ও পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবে শুকিয়ে এখন ময়লা আবর্জনা ফেলার স্থায়ী ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। বাজিতপুর বাজারের সকল বর্জ্য ও দোকানীদের মলমূত্রত্যাগ ও বিদ্যালয়ের পাশেই গড়ে উঠেছে একটি মার্কেট। এই স্তূপকৃত বর্জ্য আবর্জনার পাহাড় থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্যালয়ে। ফলে বিদ্যালয়ে পড়তে আসা কোমলমতি খুদে শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ পথচারীদের প্রতিনিয়ত দূগন্ধের শিকার হতে হচ্ছে। এ নিয়ে পৌরবাসীসহ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী অভিভাবক ও পথচারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে।
৭৯ নং বসন্তপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী গায়ত্রী দাস জানায়, সামনে ময়লা ও এর আশেপাশে মলমূত্রের দুর্গন্ধে আমরা ক্লাসে বসে ঠিক মতো ক্লাস করতে পারি না। দুর্গন্ধে পেটফাঁপা হয়। মাঝে মধ্যে বমি হয়, পাতলা পায়খানাও হয়। ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র ফাহিম বলে এই দুর্গন্ধে আমরা স্বাস নিতে পারি না। দম বন্ধ হয়ে আসে। প্রচন্ড মাথা ব্যথা হয়। বাড়ি থেকে নিয়ে আসা টিফিন খেতে গেলে গা গুলিয়ে উঠে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বিদ্যালয়ে আসতে ইচ্ছে করে না। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম যায় যায় দিনকে বলেন, এই স্কুলে তিনি দীর্ঘদিন যাবত চাকুরী করেছেন। ময়লার দুর্গন্ধের কারণে প্রতিবছরই ড্রপআউটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিভাকরা এই পরিবেশ দেখে তাদের সন্তানদের এখানে ভর্তি করতে চায় না। দিন দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে আমার আরেক বাচ্চাকেও নিয়ে গেছি। এই দুর্গন্ধময় পরিবেশে পড়তে পাঠিয়ে আমি আমার বাচ্চাকে আর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রাখতে পারছি না। পথচারী মইনুল বলেন, আমরা বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যেতে পারি না, এই ছোট ছোট পোলাপান কি কইরা পড়াশোনা করবে। এইহানে পড়ানোর চাইতে আমার বাচ্চারে অশিক্ষিত রাহুম, অন্ততঃ সুস্থভাবে বাইচ্যাতো থাকবো।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোনো মানুষ সুস্থ স্বাভাবিক থাকাতে পারা আল্লাহর বিশেষ রহমত। বর্জ্য ও আবর্জনা থেকে বাতাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কযেক গুণ বেশী। পাতলা পায়খানা, আমাশয়, শ্বাসকষ্ট জন্ডিস, অবসাদগ্রস্ত সহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।