গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মত পানিতে তলিয়ে যায় ফেরদৌস বেগমের ঘর। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বাপের ভিটায় থাকতেন। ছোট্ট একটি ঘরে সন্তানকে নিয়েই কোনমতে জীবনযাপন করতেন। কিন্তু বন্যায় সেটিও কেড়ে নিল। অস্বচ্ছল ওই পরিবারে নতুন করে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার মত কেউ নাই। অবশেষে অন্তর্বতীকালীন সরকারের উদ্যোগে বুধবার নতুন ঘরে উঠে খুশিতে আত্মহারা। একমাত্র পুত্র সন্তান এসএসসি পরীক্ষার্থী মাহিম উদ্দিনসহ উভয়ে বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ফেরদৌস বেগম যায়যায়দিনকে বলেন, পুরাতন বাড়ির ঘর বন্যায় ভাসিয়ে নিয়েছে। নতুন করে নির্মাণ করার সে সামর্থ্য নাই। পিতা হারা সন্তানকে নিয়ে দিন চালানো কস্টকর ছিল। সরকার কর্তৃক ঘর নির্মাণের খবর পেয়ে এতদিন নির্মাণরত ঘরের পাশে একটি বিল্ডিংয়ে আশ্রয়ে ছিলাম। এত সুন্দর ঘর পেয়ে আমরা খুশি।
জানা গেছে, গেল আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ভয়াবহ বন্যায় ৩০ হাজার মানুষ গৃহহীণ হয়ে পড়ে। তখন অন্তবর্তীকালীন সরকার সবেমাত্র ক্ষমতায় বসেন। ভয়াবহ বন্যায় দেশের বিভিন্ন জেলার ত্রিশ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হন। অন্তর্বতীকালীন সরকার ক্ষতিগ্রস্থ তিনশ পরিবারের ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেন। দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে। উপজেলা বাস্তবায়ন কার্যালয় সরেজমিনে উপকার ভোগীর তালিকা তৈরি করে। পরে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দরিদ্র গৃহহীন মানুষের নিজ বসতভিটায় বিশেষ আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। অন্যান্য জেলার সাথে চট্টগ্রাম জেলার তিন উপজেলায় ৩০ টি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার স্থান পায়। এর মধ্যে হাটহাজারী উপজেলায় গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নের রাজামিয়া সড়কের জোরারকুল বটতল এলাকার বাদল বাড়ির ফেরদৌস বেগম, একই ইউনিয়নের দিন মজুর পটল বড়ুয়া, মোহাম্মদ মনা চৌধুরী, কৃষক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন, নিরোধ বড়ুয়া, দিন মজুর নাজিম উদ্দিন, ফরহাদাবাদ পূর্ব মন্দাকিনী এলাকার মো. বেলাল, মিস্ত্রী সেকান্দর মিয়া, ড্রাইভার মো. জাহাঙ্গীর, মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া এলাকার গৃহিনী নুর নাহারসহ দশটি পরিবার। বুধবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘরের চাবি হস্তান্তর উদ্বোধন করা হয়।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা যখন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করি সঙ্গে সঙ্গে বন্যা শুরু হয়। সেই বন্যা স্বাভাবিক বন্যা ছিল না। ঠিক বুঝতে পারছিলাম না এ জায়গায় কি বন্যা হবে। অন্যান্য বছর যে বন্যা হয়, এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন জায়গার বন্যা। এটা কত গভীরভাবে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, এটার কোনো ধারণা ছিল না। অথবা আন্দাজ করা হয়েছিল যে তাড়াতাড়ি চলে যাবে। তবে দিন যত যাচ্ছিল এটা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। বন্যা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হয় গৃহহীণ পরিবারগুলোর পাশে দাড়াবো। চাইলে টাকা দিতে পারতাম কিন্তু অনিয়মের আশঙ্কায় সোবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এসময় প্রধান উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
হাটহাজারীতে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে চাবি হস্তান্তর করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ জিয়াউদ্দীন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কালাম রানা, লেঃ কর্নেল তাজুল ইসলাম, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম মশিউজ্জামান, ফটিকছড়ির মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী, মীরসরাই'র মাহফুজা জেরিন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদ প্রমূখ।