বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিলুপ্ত স্টেশনে ট্রেন আসার ঘণ্টা বাজার শব্দ

বারহাট্টা (নেত্রকোণা)  প্রতিনিধি
  ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৫৭
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিলুপ্ত স্টেশনে ট্রেন আসার ঘণ্টা বাজার শব্দ
ছবি: যায়যায়দিন

একসময়ে রেল স্টেশনের এক কোনে পিলারে ঝুলন্ত রেল লাইনের টুকরোটিতে ঘন্টা বাজনো মানেই পূর্ববর্তী স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে আসার সংকেত। পূর্ববর্তী স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর সিগন্যালম্যান অপেক্ষমান যাত্রীদের মনযোগ আকর্ষনের জন্য ঘন্টাটি বাজাতেন। তখনই শুরু হয়ে যেতো টিকিট কাটার লাইন। কালের বিবর্তনে ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে ট্রেন আসার সংকেত ঘন্টা বাজানোর টুংটাং শব্দ।

ঘন্টা বাজানোর পর সিগন্যালম্যান ট্রেনের আসার সংকেত দিতে প্লাটফর্মে থাকা লোহার চাকতির চেইন টেনে স্টেশন থেকে দূরে থাকা এনালগ সিগন্যালটি নিচের দিকে নামিয়ে দিতেন। তখন অপেক্ষমান যাত্রীসহ অন্যান্যরা বুঝতে পারতেন ট্রেন আসছে। অথচ বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যাত্রীরা ঘরে বসেই রেলওয়ে ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই ট্রেনের সময় ও অবস্থান খুব সহজেই জেনে নিচ্ছেন। অনলাইনে সহজেই টিকিট কাটার ফলে ভীড় নেই স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে। ট্রেনের সিগন্যালের জন্য এখন ব্যবহৃত হয় লাল, সবুজ, হলুদ সিগন্যাল।

কবি বিনয় মুখোপাধ্যায়ের ভাষায়- ‘বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ’। কবির কথাকে সত্য প্রমাণ করে দিন দিন বিজ্ঞান উৎকর্ষিত হচ্ছে আর পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে আবেগ। এখন আর আগের মতো টিকিট কাটার জন্য রেল স্টেশনে নেই যাত্রীদের লম্বা সারি, স্টেশনে নেই কোলাহল, নেই চায়ের দোকানের আড্ডা, গরম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আড্ডার সাথে অপরিচিত ব্যক্তির সাথে হয়না পরিচয়, গড়ে ওঠে না সখ্যতা, আন্তরিকতা। সেই সাথে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সামাজিক বন্ধন। বর্তমানে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার স্থান দখল করে নিয়েছে ট্রেনের মোবাইল অ্যাপস। আজও অবহেলায় রয়েগেছে জরাজীর্ণ টিকিট কাউন্টার, যাত্রী বিশ্রামাগার। আছে স্টেশন মাষ্টার, আছে রেল কর্মচারী নেই টিকিট প্রাপ্তির আশায় লাইনে দাড়ানো যাত্রীদের কোলাহল, নেই ট্রেনের সিগন্যালের ঘন্টার অপেক্ষা।

নেত্রকোনা জেলা সদরের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক কান্তি রঞ্জন রায় চৌধুরীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘৯০’ এর দশকেও আমাদের স্টেশনে ট্রেন আসার সংকেত হিসাবে সিগন্যালম্যান ঘন্টা বাজানোর পর বুঝতে পারতাম কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেন আসবে। এখন ঘন্টা বাজানোর শব্দ আর শোনা যায় না, টিকিট কাউন্টারেও ভীড় দেখা যায় না। রেল স্টেশনের যাত্রীদের কেন্দ্র করে প্লাটফর্মে গড়ে ওঠা চায়ের দোকানগুলো এখন প্রায় সময়ই জনশূন্য।

দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল বলেন, বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ, এখন ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রেন যাত্রীরা বাড়িতে বসেই মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে পছন্দ মতো টিকিট বুকিং দিয়ে যথা সময়ে স্টেশনে হাজির হয়। ঘন্টার পড়ার আশায় আর বসে থাকতে হয় না। টিকিট কাউন্টারেও ভীড় করতে হয় না। বাসায় বসেই ট্রেন কখন কোন স্টেশনে আছে সবকিছুই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে সহজেই পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, একসময়ে আমাদের রেলপথে যাতায়াতের জন্য ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ একটি লোকাল ট্রেন দুইবার (সকাল-বিকাল) যাতায়াত করতো এবং সরাসরি ঢাকায় যেতো একটি ট্রেন (মহুয়া)। তখন স্টেশনে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থাকতাম কখন সিগন্যালম্যান ঘন্টা বাজাবে। এখন দুইটি এক্সপ্রেস ট্রেন ও একটি কমিউটর ট্রেন চলে। এখন আর স্টেশনে অপেক্ষায় থাকতে হয় না, ট্রেনের অবস্থান জেনেই যথা সময়ে স্টেশনে উপস্থিত হই।

উপজেলা সদরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্টেশন মাষ্টার শ্যামল দে বলেন, আগে একটু পর পর ফোনের মাধ্যমে ট্রেনের অবস্থান জানতে হতো এবং যাত্রীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে বিরক্ত লাগতো। ট্রেনের অবস্থান জেনে ঘন্টা বাজানো ও সিগন্যাল দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে টিকিট কাউন্টার নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। এখন আর সেই ব্যস্ততা নেই, যাত্রীরা নিজেই ট্রেনের অবস্থান সম্পর্কে জানেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে