বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

ছাত্রীকে বিয়ে করে ভাইরাল শিক্ষক ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  ০১ মে ২০২৫, ১৮:৩৪
আপডেট  : ০১ মে ২০২৫, ২০:৪২
ছাত্রীকে বিয়ে করে ভাইরাল শিক্ষক ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার
ছবি: যায়যায়দিন

নওগাঁর মান্দায় বাল্যবিবাহ করার অপরাধ থেকে নিজেকে বাঁচাতে সাড়ে ১৬ বছর বয়সী নিজ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্রী দোলাকে বিয়ে করার পর অস্বীকার করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন। এ ঘটনায় বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে মান্দা থানায় একটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা।

মামলায় প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের প্রথম স্ত্রী স্বপ্না খাতুনকেও আসামি করা হয়েছে। সে মামলায় র‌্যাব ও মান্দা থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে বৃহস্পতিবার বিকেলে নাটোরের বনপাড়ার তার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।

আটককৃত প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন উপজেলার ৮ নং কুসুম্বা ইউনিয়নের হাজীগোবিন্দপুর ফকিরপাড়া গ্রামের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আফসার আলী মন্ডলের ছেলে।

থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিয়ের প্রলোভনে তার বাড়িতে রেখে ধর্ষণ করেছে বলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী দোলার বাবা বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে আকরাম হোসেন পলাতক ছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলে মান্দা থানা পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে তাকে আটক করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ময়েজ উদ্দিন বলেন, গত ২৬ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা বালিকা বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বিয়ে করে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তোলেন প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন। বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ এলাকার লোকজন ফুঁসে উঠেন।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের অপসারণসহ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। একই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হন প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন।

কুসুম্বা গ্রামের বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের এসব কুকীর্তির ঘটনায় এলাকাবাসি মান্দা ইউএনও বরাবর অভিযোগ করেন। ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা পরিষদের হলরুমে এ তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। তদন্তে প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন ওই ছাত্রীকে বিয়ে করার কথা অস্বীকার করেন। এ সংবাদ প্রকাশ হয়ে পড়লে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর পরিবারসহ এলাকাবাসি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বাবা এমদাদুল বলেন, আমি অশিক্ষিত মানুষ। আমাদের এলাকার মুনসুর কাজীর সহযোগী আলম এসে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করে। আমাকে যেখানে স্বাক্ষর দিতে বলছিলো সেখানে আমি স্বাক্ষর দিয়েছিলাম। এরপর আমি কয়েকবার তার কাছে গিয়ে বিয়ের নকল চাইলে বিভিন্নভাবে তালবাহানা করে আমাকে নকল দেননি। এরমধ্যে স্থানীয়দের করা অভিযোগের জন্য গতকাল আমাকে ডাকলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে আমার মেয়েকে বিয়ে দিইনি বলতে বাধ্য করে। আমার মেয়েকে যদি বিয়ে না করে তাহলে সে তাকে ধর্ষণ করেছে। সেজন্য আমি তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছি।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মান্দা থানার অফিসার (ওসি) ইনচার্জ মনসুর রহমান বলেন, মামলার পর থেকে সে পলাতক ছিল। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে থানা পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে নাটোরের বনপাড়া থেকে তাকে আটক করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী এক শিক্ষার্থীকে বিয়ে করে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তোলেন প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন। এ ঘটনার পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী রীনা আক্তার পুতুল দুসন্তান নিয়ে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবা বাড়ি চলে যান।

এতে ফুঁসে উঠেন এলাকাবাসি, তোলপাড় শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ঘটনার তদন্তে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে