শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৫ বছরেও শেষ হয়নি কাজ, মাঠে পাঠদান

আবু-বিন-আজাদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
  ২৩ মে ২০২৫, ২০:৪৩
৫ বছরেও শেষ হয়নি কাজ, মাঠে পাঠদান
ছবি: যায়যায়দিন

নীলফামারীর সৈয়দপুরে উপজেলার কুমারগাড়ী দাখিল মাদরাসার চারতলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করে ২০২০ সালের মধ্যেই ব্যবহার উপযোগি করার কথা থাকলেও পাঁচ বছরেও নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রেখে ঠিকাদার উধাও হওয়ায় শ্রেণিকক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে মাঠেই। ঝড়, বৃষ্টি, শীত সব উপেক্ষা করেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খোঁজ মিলছে না ঠিকাদারের। তিনি গা’ ঢাকা দেয়ায় নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। যার ফলে শ্রেণিকক্ষ সংকটে বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে খেলার মাঠে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। অন্যদিকে, নির্মাণাধীন ভবন দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় মাদরসার কার্যক্রম বন্ধ থাকলে সেখানে চলে মাদকের আড্ডা ও অসামাজিক কাজ।

1

মাদরাসা ও নীলফামারী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শ্রেণিকক্ষ সংকট দূর করতে ১২ কক্ষবিশিষ্ট চারতলা ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিলে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে ৩ কোটি ২৬ লাখ ৫ হাজার ৫১৩ টাকা ১৯ পয়সা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পায় দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মোহাম্মদ শাহ আলমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা’ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড জিন্নাত আলী জিন্নাহ (জেভি)। কাজ শুরু হয় একই বছরের ১৭ জুন।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এরপর নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার অজুহাতে ২০২১ সাল থেকে ৩ বছর কাজ বন্ধ রাখে। পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালে পুনরায় কাজ শুরয করার ৩ মাসের মাথায় আবারও কাজ বন্ধ করে দেন। ২৫ শতাংশ বাকি থাকলেও বর্তমানে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার।

সরেজমিন গেলে সংবাকর্মিরা দেখতে পান, চারতলা ওই বহুতল ভবনের কাজ বন্ধ রয়েছে। নির্মাণাধীন ওই ভবনজুড়ে এলোমেলোভাবে ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণ-সামগ্রী। শ্রেণিকক্ষ না থাকায় খোলা আকাশের নিচে খেলার মাঠে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। নির্মাণাধীন ভবনের দুই পাশে শিডিউল করে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। পুরাতন টিনশেড যে ভবনটি রয়েছে তাও অত্যন্ত জরাজীর্ণ। চালার টিনগুলো ফুটো হয়ে গেছে। মাদরাসাটির দশম শ্রেণির ছাত্রী লাবনী আক্তার সংবাদকর্মীদের জানায়, এই মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে দেখছে নির্মাণাধীন চারতলা ওই ভবনের কাজ বন্ধ রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে চরম কষ্টে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। বেশিরভাগ সময় তাদের খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হয়। শীত, ঝড়-বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ সময় তাদের নিয়মিত পড়াশোনা ব্যাহত হয়। এই মাদরাসার পড়া অবস্থায় মনে হয় না নতুন ভবনে ক্লাস করার সৌভাগ্য হবে।

কুমারগাড়ী দাখিল মাদরাসার সুপার মোছা. ফেরদৌসী সংবাদকর্মীদের জানান, বার-বার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেওয়া সত্বেও তারা নির্মাণকাজ শেষ করছে না। তা’ ছাড়া এ ব্যাপারে আমরা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর নীলফামারীর প্রধান প্রকৌশলী বরাবর কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। এরপরও কাজ শেষ করতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় মাদরাসার কার্যক্রম বন্ধ থাকলে সেখানে এলাকার কিছু মাদকসেবী মাদকের আড্ডা বসায় ও নানা অসামাজিক কাজ করে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হাজেরুল ইসলাম সংবাদকর্মীদের জানান, এ পর্যন্ত ভবনটির ৭৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ওই ঠিকাদারকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরপর তিন দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ করতে পারেনি। এ বিষয়ে এর আগে আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বললে তারা আমাদের চলতি বছরের আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা জানান। কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। যোগাযোগের চেষ্টা করেও খোঁজ মিলছে না ঠিকাদারের। মোবাইল ফোনেও যোগাযোগের চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। জুনের মধ্যে কাজ শেষ না হলে চুক্তি বাতিল করে অবশিষ্ট কাজের জন্য আবার দরপত্র দিয়ে কাজটি শেষ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে