রোববার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ধস

যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ জুন ২০২৫, ১০:০৩
পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ধস
ছবি: সংগৃহীত

ঈদের পবিত্র সকালে যখন সারা দেশের মানুষ কোরবানির উৎসবে ব্যস্ত, ঠিক তখনই শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা নদী তার ভয়ংকর রূপে ধেয়ে আসে। হঠাৎ ভোরে শুরু হওয়া নদীভাঙনে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নির্মিত রক্ষা বাঁধের প্রায় ২৫০ মিটার অংশ এক নিমিষেই বিলীন হয়ে যায়। আনন্দের দিনটি মুহূর্তে পরিণত হয় কান্না, আতঙ্ক আর ঘরহারা মানুষের হাহাকারে।

স্থানীয়রা জানান, ভাঙন থামাতে না পারলে হুমকির মুখে পড়বে আশপাশের শতাধিক ঘরবাড়ি, রাস্তা ও বাজার। ইতোমধ্যে মাঝিরঘাট বাজার এলাকার প্রায় ২০০টি দোকান চরম ঝুঁকিতে পড়েছে।

1

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ রক্ষা বাঁধ নির্মিত হয় মাঝিরঘাট থেকে পূর্ব নাওডোবা পর্যন্ত। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত প্রকল্পে ব্যয় হয় প্রায় ১১০ কোটি টাকা। কিন্তু নির্মাণের এক বছরের মধ্যেই শুরু হয় ভাঙন। সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে নাওডোবা অংশে ধসে পড়ে ১০০ মিটার বাঁধ, যার সংস্কারে খরচ হয় আরও ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এবার সেই মেরামত করা অংশসহ নতুন একটি জায়গা ধসে পড়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, “ঈদের বিক্রির জন্য নতুন মাল তুলেছিলাম। এখন সবই নদীতে চলে যাওয়ার পথে। শুধু ঈদ নয়, আমাদের পুরো জীবনটাই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।”

ঢাকা থেকে ঈদ করতে আসা জাজিরাবাসী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি নদী আমাদের ঘর গিলে নিচ্ছে। নামাজ পড়া দূরে থাক, ঘর সরিয়ে বাঁচাতে ব্যস্ত ছিলাম।”

ভাঙনের শিকার দেলোয়ার হোসেন ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, “ঈদের দিনেও ঘর-বাড়ি নদীতে চলে যাচ্ছে। খুব দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পুরো এলাকা ভেঙে যাবে।”

অভিযোগ রয়েছে, পদ্মা নদীতে বছরের পর বছর ধরে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন, যার ফলে নদীর প্রবাহ পরিবর্তিত হয়ে ভাঙন বাড়ছে। পদ্মার পাড়ের বাসিন্দা বাদশা শেখ বলেন, “অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে নদী এখন রক্ষা বাঁধের গায়ে লেগে গেছে। এখনই শক্ত প্রতিরক্ষা না গড়লে ভয়াবহ বিপর্যয় আসবে।”

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বনিক বলেন, “ভাঙনের খবর পেয়ে আমরা দ্রুত এলাকা পরিদর্শন করেছি। জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, বারবার কোটি কোটি টাকা খরচ করে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হলেও দুর্নীতি, পরিকল্পনার অভাব ও নজরদারির দুর্বলতায় পদ্মা পাড়ে স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। রক্ষা বাঁধ হওয়ার কথা ছিল সুরক্ষার প্রতীক, কিন্তু আজ তা যেন পরিণত হয়েছে জীবনের ঝুঁকিতে।

ঈদের দিন যখন পুরো দেশ উৎসবে মুখর, তখন জাজিরার পদ্মাপাড়ে মানুষের মুখে কেবলই প্রশ্ন—“আমাদের কী হবে?” এই ধস যেন প্রকৃতির নয়, বরং দায়িত্বহীনতার মাশুল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে