কুমিল্লার তিতাসে লাচ্ছির সাথে বিষ মিশিয়ে বাক প্রতিবন্ধী দুই মেয়েকে বিষ খাইয়ে বাক প্রতিবন্ধী বাবার আত্মহত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই মেয়ের মৃত্যু হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন বাবা।
সোমবার সকাল ৭টায় উপজেলার জগতপুর ইউনিয়নের সাগরফেনা তুলাকান্দি চকের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। অপরদিকে, উপজেলার বড় মাছিমপুর গ্রামের কবরস্থান থেকে বেলা ১১টায় অর্ধগলিত অজ্ঞাত যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
দুই শিশুকন্যাসহ অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তুলাকান্দি গ্রামের মোকবুল হোসেনের ছেলে বাক প্রতিবন্ধী মনু মিয়া (৩৫)। মনু মিয়ার দুই মেয়ে মনিরা (৮) ও সানজু আল ফাতেহা (৫) ও বাক প্রতিবন্ধী।
একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তি বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় এ নিয়ে মানুষজন কটুকথা বললে সহ্য করতে না পেরে লাচ্ছির সাথে বিষ মিশিয়ে দুই বাক প্রতিবন্ধী মেয়ে মনিরা ও সানজু আল ফাতেহাকে খাইয়ে নিজেও বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
স্থানীয়রা ৩ জনকেই তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুই মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন। বাবাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
নিহত দুই শিশুকন্যার মা হাসিনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী কাঠমিস্ত্রি কাজ করে সংসার চালায়। আমাদের মধ্যে কোন পারিবারিক কলহ নেই।
সকালে আমার ছোট মেয়েকে ব্রাশ করিয়ে বাবার কাছে রেখে আমি রান্না ঘরে নাস্তা তৈরী করতে ছিলাম। নাস্তা নিয়ে ঘরে যাওয়ার পর তিনজনকে বিছানায় দেখতে পাই।
আমার ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি দাবী করেন লাচ্ছির সাথে তিনজনই বিষপান করেছে।
তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ সরফরাজ হোসেন খান জানান, সকাল ৮টায় মনু মিয়া এবং তার দুই মেয়েকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আমরা পুলিশের কাছে লাশ হস্তান্তর করেছি। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে তারা কীটনাশক পান করেছে।
বিষক্রিয়ার পর দুই মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও আমরা মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে জানতে পুলিশকে ময়নাতদন্তের পরামর্শ দিয়েছি।
তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শহীদ উল্যাহ বলেন, বাক প্রতিবন্ধী দুই মেয়েকে বিষ খাইয়ে বাক প্রতিবন্ধী বাবা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে, বাক প্রতিবন্ধী, দারিদ্র্যতা ও পারিবারিক হতাশা থেকে এ ঘটনা ঘটতে পারে। অপরদিকে, উপজেলার কলাকান্দি ইউনিয়নের বড় মাছিমপুর গ্রামের কবরস্থান থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সেই অজ্ঞাত লাশসহ দুই শিশুর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ দাখিল হয়নি। অভিযোগ দাখিল হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।