ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কোরবানির মাংসের ভাগ নেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল রবিবার সকাল ৯ টার দিকে উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বানিয়ারী গ্রামে এ সংঘষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে মারাত্মক আহত মো. হুমায়ুন মোল্যা (৫৫) রাজধানীর একটি হাসপাতালে একদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার (৯ জুন) সকাল সাড়ে আটটার দিকে মারা যান। এ খবর এলাকায় পৌঁছলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে বোয়ালমারী থানা পুলিশ।
নিহত হুমায়ুন মোল্যা ৪ সন্তানের জনক। তিনি ব্যাটারী চালিত অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই গোলাম মোস্তফা (৭০), মেয়ে বেনু বেগম (২৫) ও একই গ্রামের চুন্নু শেখের ছেলে আলি কদর (১৯) আহত হয়েছেন। আহত গোলাম মোস্তফা ও আলি কদর বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সরেজমিন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অধিপত্যে বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় লিয়াকত মাস্টারের সাথে ময়না ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নবীর হোসেন চুন্নু ও জামাল হোসেনের দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিলো। নিহত হুমায়ুন তার ভাই-ভাতিজা নিয়ে সম্প্রতি লিয়াকত মাস্টারের দল ত্যাগ করে প্রতিপক্ষ নবীর হোসেন চুন্নুর দলে যোগ দেন। এতে লিয়াকত গ্রুপের লোকজন ক্ষুব্ধ হয় তার প্রতি।
বিষয়টি এতদিন প্রকাশ না করলেও ঈদের দিন নবীর হোসেন চুন্নুর দলের কোরবানির মাংসের সামাজিক ভাগ নেন হুমায়ুন মোল্যা। এ নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজন ঈদের পরের দিন সকালে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হুমায়ুনের উপর আক্রমণ চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন।
এতে মারাত্মক আহত হন হুমায়ুন মোল্যাসহ ৪ জন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য হুমায়ুন মোল্যাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও তার অবস্থার পরিবর্তন না হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় চিকিৎসকগণ।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে মারা যান তিনি। এ ঘটনার পর এটিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন একটি পক্ষ।
ময়না ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির মোহাম্মদ সেলিম জানান, এটি গ্রাম্য দলাদলির কারণে সংঘটিত হয়েছে। অনেকে একে রাজনৈতিক কোন্দলে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। তা সত্য নয়।
নিহতের ভাতিজা ছোলনা সালামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মো. ফসিয়ার রহমান মোল্যা বলেন, লিয়াকত মাস্টারের দল ছেড়ে নবীর হোসেন চুন্নুর দলে যোগ দেওয়ায় মাস্টারের লোকজন আমাদের উপর আক্রমণ করতে চেয়েছিলো। ঘটনার দিন আমার দুই চাচাকে একা পেয়ে তারা আক্রমণ করে। এটা গ্রাম্য কোন্দল। দুই গ্রুপেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থক রয়েছে। লিয়াকত মাস্টারের নাম্বার বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহমুদুল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সংঘর্ষে আহত হুমায়ুন নামে একজন সোমবার (৯জুন) সকাল সাড়ে আটটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা গেছেন।
এ খবরে গ্রামটিতে উত্তেজনা বিরাজ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করে। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।