মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অব্যবস্থাপনা ও জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
  ১৪ জুন ২০২৫, ১৭:৪২
মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অব্যবস্থাপনা ও জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত
ছবি: যায়যায়দিন

‘পেটে ব্যাথা নিয়ে আল্ট্রাসেনাগ্রাফি করতে এসে অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর জানতে পারেন আজ আর ডাক্তার আসবেন না। বাধ্য হয়ে সরকারি খরচের প্রায় তিনগুন টাকা দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে একটি বেরসরকারি ডায়াগণস্টি সেন্টারে পরীক্ষা করান’।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যশোরের মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সে নিতে এসে এসব কথা বলেন আব্দুল বাছেদ আলী। তার বাড়ি মণিরামপুর পৌর এলাকার বিজয়রামপুর গ্রামে। চিকিৎসক সংকটে শুধু আব্দুল বাছেদ আলীই নন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগীরই যথাযথ স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন না। শুধু কাগজে কলমেই ৫০ শয্যা যশোরের মণিরামপুরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে !

1

প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা। এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ জনঅধ্যুষিত এই জনপদের মানুষ। বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ছুটছেন ভূক্তভোগিরা। বেশি দামে পরক্ষিার পাশাপাশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। কার্ডিওলোজি, মেডিসিন, নাক, গলাসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে চিকিৎসক নেই। চিকিৎসকের পদের বিপরীতে প্রায় অর্ধেকই শুন্য।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব), রেডিওগ্রাফিসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতকরা ৬৫ ভাগ পদ খালি। যে কয়জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন, তার সিংহভাগই ঠিকমত কর্মস্থলে না থাকায় চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রোগীদের। পরিত্রানে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৭ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠার পর ২০২১ সালে ৩১ শয্যা হতে ৫০ শর্যায় উন্নীত হয়। কিন্তু নির্মান হয়নি আধুনিক ভবন। যা আছে বছরে সংস্কার না করলে রোগী থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গড়ে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৩০০ থেকে ৩৫০ রোগী দেখা হয়। বছরে প্রায় ৪৭ থেকে ৪৮ হাজার রোগী স্বাস্থ্য সেবা নেয়। সূত্র আরো জানায়, এখানে চিকিৎসকের ৩৪টি পদের বিপরীতে ২০জন কর্মরত থাকলেও একজন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্ত আছেন।

কনিষ্ঠ বিশেষজ্ঞের ১০টি পদের মধ্যে ৫টি পদই শুন্য। সহকারি সার্জন ও মেডিকেল অফিসারের মধ্যে ১০টি পদ খালি, মেডিকেল টেকনোলজিস্টের মধ্যে ২টি, নার্সের ২টি, স্বাস্থ্য সহকারির ৩৬টি, সিএইচসিপি (কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রভাইডার)-এর ১৮টি, স্যাকমো (উপ-স্বাস্থ্য কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার)-এর ১০টিসহ ওয়ার্ড বয়ের সবকটি পদ শুন্য। সবমিলিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৬৬ পদের মধ্যে ৯৫টি পদ শুন্য রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসক সংকটের কারনে স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে। চক্ষু, নাক, কান, গলা (ইনএনটি), চর্ম ও যৌন, অর্থপেডিক্স ও কার্ডিওলজির মত পদগুলো শুন্য থাকায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

বুধ ও বৃহস্পতিবার সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে দাড়িয়ে থেকে বহির্বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ লাইনের চিত্র চোখে পড়ে। এসময় চিকিৎসকদের মধ্যে ডাঃ মোঃ খালেকুজ্জামান মুজাহিদ, ডাঃ জেসমিন সুমাইয়া, ডাঃ দিলরুবা ফেরদৌস ডায়না, ডাঃ মোঃ ইদ্রিস আলী, সাইফুদ্দীন আহম্মেদ, ডাঃ দেবাশষি বিশ্বাস, ডাঃ নাহিদ হাসান, ডাঃ রুহুল আমিনসহ অনেকেরই দেখা মেলেনি। চিকিৎসা নিতে আসা মোহনপুর গ্রামের মরিয়ম বেগম জানান, সেই সকালে এসে টিকিট কেটে ডাক্তারের ঘরের সামনে বসে আছি;কিন্তু এখনো ডাক্তার আসেনি।

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফাইয়াজ আহমদ ফয়সাল বলেন, ঈদে কয়েকজন চিকিৎসক একটানা কাজ করেছেন, তাদের বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। এরপর প্রশ্ন করতেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাবার কথা বলেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। জানতে জেলা সিভিল সার্জন মোঃ মাসুদ রানা বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে