মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২
আওয়ামীলীগ সরকারের বাতিল করা

পূর্বধলা পৌরসভা পূনর্বহাল এখন সময়ের দাবি

পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
  ১৭ জুন ২০২৫, ১৪:৩০
আপডেট  : ১৭ জুন ২০২৫, ১৪:৫৩
পূর্বধলা পৌরসভা পূনর্বহাল এখন সময়ের দাবি
রোড রোলারটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে পরে আছে । ছবি: যায়যায়দিন

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা সদরকে পৌরসভায় উন্নীত করা হলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক জেদের বশবর্তী হয়ে নানা কৌশলে তা বাতিল করান।

এতে পৌরবাসী হতাশ হলেও তখন তার ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায়নি। বর্তমানে আওয়ামীলীগ সরকারে পতনের পর সর্ব মহলে দাবী উঠছে পূর্বধলা পৌরসভা পুনর্বহালের। তারা বলছেন পূর্বধলা পৌরসভা পুনর্বহাল এখন সময়ের দাবী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তৎকালীন এমপি ডাঃ মোহাম্মদ আলীর প্রচেষ্টায় ২০০৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৮টি ও আগিয়া ইউনিয়নের ২টি মৌজা নিয়ে পূর্বধলাকে পৌরসভায় উন্নীত করেন।

এমন কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে তৎকালীন সময়ে এলাকাবাসী বিশাল আনন্দ মিছিল করেন। পরে বিএনপি নেতা মুশতাক আহমদকে পৌর প্রশাসক ও অন্যান্য জনবল নিয়োগ করে উপজেলার পুরাতন কোর্ট ভবনে দাপ্তরিক কাজ চালান। এরই মাঝে বিভিন্ন উৎস থেকে মোটা অংকের রাজস্ব আদায় হতে থাকে।

পরে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পৌরসভার অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ন উপজেলা সদরের সকল রাস্তা ও ড্রেন পাকাকরন করা হলে পৌরবাসী পৌরসভার সুফল পেতে থাকে। এরই মাঝে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন, নাগরিকত্ব ইত্যাদি যাবতীয় কাজ পৌরনাগরিক হিসেবেই সম্পন্ন করা হয়।

পরে ২০০৯সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই স্থানীয় এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল পৌরসভা বাতিলের জন্য উঠে পড়ে লাগে। তারই প্রত্যক্ষ মদদে গত ২০০৯ সালের মার্চে পৌরবাসিন্দা আব্দুল হামিদ তালুকদারকে দিয়ে পৌরসভা বাতিলের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করান।

পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রুহুল আমিন বিষয়টি নিয়ে তদন্তে আসেন। তখন এমপির নির্দেশে তার লোকজন পৌরসভা বাতিলে পক্ষে মতামত দেয় এবং সে অনুযায়ী প্রতিবেদন দেন।

এরই প্রেক্ষিতে তে রাষ্ট্রপতির আদেশ ক্রমে ২০০৯সালে ৩১ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ খলিলুর রহমান সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে পূর্বধলা পৌরসভা বাতিল ঘোষনা করা হয়।

প্রজ্ঞাপনের পরেও পূর্বধলা ভুমি নিবন্ধন অফিসে রাজস্ব আদায় ও বিবাহ নিকাহ রেজিষ্ট্রারের কাজ চলে দীর্ঘদিন। একটি সূত্রে জানা গেছে পৌরসভার তহবিলে সর্বশেষ বিশাল অংকের টাকা জমা ছিল। সে টাকার কি হয়েছে তা কেউ বলতে পারেনি।

পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলে পৌরসভার পক্ষে স্থানীয় আর এক পৌর বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক হাই কোর্টে রীট আবেদন করেন। সেখানেও এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল প্রভাব বিস্তার করলে উক্ত আবেদন খারিজ করে দেন।

সেই সাথে ভেস্তে যায় পূর্বধলা পৌরসভা হওয়ার স্বপ্ন। এরই মাঝে পৌরসভার জন্য বরাদ্দকৃত একটি মূল্যবান রোড রোলার এখানো পৌরসভার সাক্ষী হিসেবে উপজেলা পরিষদ মাঠে পড়ে আছে। ধারনা করা হয় এর দাম ৩০-৪০ লক্ষ টাকা হলেও অযত্ন অবহেলায় এটি বিনষ্ট হয়। এর মুল্যবান যন্ত্রাংশ ইতিমধ্যেই চুরি হয়ে গেছে।

পূর্বধলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ আরিফুজ্জামান বলেন, অনেক আশা আকাঙ্খার পর আমরা যখন পূর্বধলা পৌরসভা পেলাম এবং বিভিন্নভাবে এর সুবিধা পাচ্ছিলাম তখন পৌরসভা বাতিলের ঘোষণায় আমরা হতাশ হয়েছি। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ৫জুলাই পূর্বধলা পৌরসভার পুর্নবহালের দাবীতে নাগরিক কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধন অনু্িষ্ঠত হয়।

পরে স্থনীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করা হলে আজও কোন ব্যবস্থা হয়নি।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ¦ বাবুল আলম তালুকদার বলেন, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে স্থানীয় এমপি ডাক্তার মোহাম্মদ আলীর প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্বধলা পৌরসভা। এর মাধ্যমে পূর্বধলাবাসীর দীর্ঘদিনের জন আকাংখা পুরণ হয়েছিল। পরবর্তীতে আওয়ামী সরকারের আমলে এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের পৌরসভা বাতিলের বিষয়টি ছিল একটি ফ্যাসিবাদী আচরনের বহি:প্রকাশ। আমরা অতি দ্রুত পূর্বধলা পৌরসভা পুনর্বহাল চাই।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজওয়ানা কবির বলেন, ‘পূর্বধলা পৌরসভা পুনর্বহালের দাবীতে কেউ এগিয়ে আসলে প্রশাসনিকভাবে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে