বরগুনার পাথরঘাটায় দুটি ট্রলার কোস্টগার্ড সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় জেলেদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাত ১০টার দিকে পাথরঘাটা কোস্টগার্ড জেটি সংলগ্ন ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, সংঘর্ষ চলাকালে কোস্টগার্ডের স্টেশন ঘেরাওয়ের চেষ্টা করেন স্থানীয় জেলেরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে ও লাঠিচার্জ করেন কোস্টগার্ড সদস্যরা।
এসময় জেলেরা কোস্টগার্ডের একটি গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। প্রথমে পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং পরে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নৌবাহিনীর সদস্যরা আসলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সাগর থেকে মাছ ধরে পাথরঘাটায় ফেরার পথে দুটি টলিং ট্রলার জব্দ করে কোস্টগার্ড। এর প্রতিবাদে ৫ শতাধিক জেলে সন্ধ্যার পর থেকে কোস্টগার্ড স্টেশনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় জেলেরা ট্রলার দিয়ে কোস্টগার্ডের নৌযান ও ঘাট আটকে দেয়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। পরে জেলেদের সঙ্গে মৎস্য ব্যবসায়ীরা অংশ নিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে। একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে জেলেরা কোস্টগার্ড ক্যাম্প ঘেরাওয়ের চেষ্টা করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় কোস্টগার্ডের দুটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কোস্টগার্ড সদস্যরা ফাঁকা গুলি ও লাঠিচার্জ করেন।
আটক ট্রলারের মালিক ও বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম আকন বলেন, ‘৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ ধরার জন্য যান উপকূলের হাজার হাজার জেলে। বঙ্গোপসাগরে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে আমার একটি ট্রলার ঘাটের দিকে আসে। এ সময় কোস্ট গার্ড ট্রলার আটক করে। এর পরপরই আলম কোম্পানির আরেকটি ট্রলার আটক করে। পরে আমাদের উপস্থিতিতে কোস্ট গার্ডের সদস্যরা ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তখন আমরা বৈধ কাগজপত্র দেখালেও তা গ্রহণ না করে ট্রলার ধ্বংসের চেষ্টা করে কোস্ট গার্ড।
এ সময় পাথরঘাটা মৎস্য কর্মকর্তা আমাদের বৈধ কাগজপত্র ও হাইকোর্টের আদেশ দেখে ট্রলার ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে চলে যান। তবে কোস্ট গার্ড সদস্যরা বিষয়টি না মেনে মঙ্গলবার রাতে ট্রলার ধ্বংস করা শুরু করেন। এ সময় জেলেরা আপত্তি জানালে দুজন জেলেকে মারধর করা হয়। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং সংঘর্ষ শুরু হয়।
মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘ঈদের ছুটির আগেও কোস্ট গার্ড কর্মকর্তাকে ১ লাখ টাকা দিয়েছি। ঈদের ছুটির পর বাড়ি থেকে এসে আবারও আমাকে তাঁদের স্টেশনে ডেকে নিয়ে ট্রলিং ট্রলারের তালিকা চায় এবং এর থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন।’ তিনি আরও জানান, এর আগেও কয়েক দফা টাকা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পাথরঘাটা সার্কেল) শাহেদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, গতকালকের ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। এছাড়াও কোস্টগার্ড ক্যাম্পেও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।
পাথরঘাটার ইউএনও মিজানুর রহমান বলেন, কোস্টগার্ড দুটি ট্রলিং বোট জব্দ করে কাটিং ওয়েল্ডিংয়ের তার কাটার সময় জনগণ বাধা দেয় ও কোস্টগার্ডকে উদ্দেশ্য করে ঢিল নিক্ষেপ করে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যে কোস্টগার্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ও নৌবাহিনীর সহায়তায় মধ্য রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। তবে উভয় পক্ষের মধ্যে কিছু ভুল বোঝবুঝি রয়েছে, তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় বসে সমাধান করবো।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান জানান, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে উভয় পক্ষকে অনুরোধ করেছি। ঘটনার পরপরই পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কোস্ট গার্ড পাথরঘাটা স্টেশন এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন অধীনস্থ বিসিজি স্টেশন পাথরঘাটা কর্তৃক অবৈধ ট্রলিংবোট জব্দ করে পরবর্তীতে স্হানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনগণ একতাবদ্ধ হয়ে কোস্টগার্ড স্হাপনায় হামলাসহ সরকারি গাড়ী ভাংচুর ও কোস্টগার্ড সদস্যদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লে আত্মরক্ষার্থে কোস্টগার্ড বিধি মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহন হবে।