উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছিলেন ফেনীর সোনাগাজীর তরুণ ফয়জুল বিল্লাহ পাপ্পু। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সার্বিয়ায় অপহরণকারীদের হাতে বন্দি পাপ্পুকে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়ে তার পরিবারকে মুক্তিপণ দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নির্যাতনের ভিডিও ও আর্তনাদ হোয়াটসঅ্যাপ কলে শুনিয়ে পরিবারকে মানসিকভাবে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে ফেনী প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পাপ্পুর পরিবার। ছেলেকে জীবিত কিংবা মৃত—যেভাবেই হোক দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন পাপ্পুর মা আয়েশা বেগম।
তিনি জানান, “পাঁচ বছর আগে উন্নত জীবনের আশায় পাপ্পু সার্বিয়ায় যায়। গত ১৪ জুন রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে একটি অচেনা নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কল আসে। ভিডিওতে দেখা যায়, ছেলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম। সেইসঙ্গে ৪ লাখ ৯০ হাজার ইউরো মুক্তিপণ দাবি করে পাঠানো হয় বাংলাদেশের আটটি ব্যাংক ও মোবাইল নম্বর। তিন দিনের মধ্যে টাকা না দিলে ছেলেকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এরপর কয়েক দফা ভিডিও কলে পাপ্পুকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে সেই দৃশ্য ও শব্দ পরিবারের সদস্যদের দেখানো হয়, যেন তারা মুক্তিপণের অর্থ দিতে রাজি হয়।
এরই মধ্যে ১৭ জুন রাত ১টা ১৫ মিনিটে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি ফোনে জানায়, “পাপ্পু বসনিয়ার একটি হাসপাতালে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে।” তবে এ বিষয়ে কোনো সরকারি নিশ্চয়তা বা প্রমাণ পায়নি পরিবার।
ঘটনার পর ১৬ জুন সোনাগাজী মডেল থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ অনুযায়ী একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অপহৃত ফয়জুল বিল্লাহ পাপ্পু সোনাগাজী পাইলট হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক সেরাজুল ইসলামের বড় ছেলে।
পাপ্পুর মা আয়েশা বেগম সরকারের প্রতি আবেগঘন অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “আমার ছেলেকে বাঁচান। যেভাবেই হোক, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনুন। তার মৃত্যু হলেও যেন অন্তত জানাজা পড়াতে পারি।”