মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

রেলে আশা দেখাচ্ছে পণ্য পরিবহণ

যাযাদি রিপোর্ট
  ১০ জুলাই ২০২০, ০০:০০
রেলে আশা দেখাচ্ছে পণ্য পরিবহণ
কমলাপুর আইসিডিতে পণ্যবাহী রেল

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে রেলে মানুষের চলাচল কমে গেলেও উল্টো চিত্র পণ্য পরিবহণে। ক্রমশ চাহিদা বাড়তে থাকায় এই উদ্যোগ রেলের জন্য লাভজনক হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

শুধু দেশের ভেতরে নয়, এই সময়ে ভারত থেকেও রেলে পণ্য পরিবহণ বেড়েছে। ভারত থেকে ফলমূল নিয়ে আসতে নতুন পার্সেল ভ্যান সেবা শুরু হতে যাচ্ছে।

রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম দিকে যাত্রী পরিবহণ বন্ধ থাকায় সেই সময় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল পণ্য পরিবহণে। যাত্রী পরিবহণে রেল ইঞ্জিন ব্যবহার না হওয়ায় সেই ইঞ্জিন ব্যবহার করা হচ্ছে পণ্য পরিবহণে, তাই আয়ের পথও খুলছে।

যাত্রী পরিবহণে রেলের আর্থিক ক্ষতি থাকলেও পণ্য পরিবহণে রেল শুধু লাভের মুখই দেখেছে সব সময়। মহামারিকালে সে আয়ের পথ আরও খুলছে বলে জানান রেল কর্মকর্তারা।

রেলের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান বলেন, 'পণ্য পরিবহণে রেলের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা বিবেচনা করে এ সেবা আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

গত মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারের 'সাধারণ ছুটি' ঘোষণার পর সারা দেশের কৃষকরা তাদের পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েন। পরে পণ্য বাজারজাত করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়, যার অংশ হিসেবে পণ্য পরিবহণে কয়েকটি ট্রেন চালু করা হয়।

রেল কর্মকর্তারা জানান, ওই সময় থেকেই রেলে পণ্য পরিবহণ বাড়তে শুরু করে।

এরপর গত ৬ জুন থেকে রাজশাহী-ঢাকা রুটে যাত্রা শুরু করে 'ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন'। এ উদ্যোগে রাজশাহী থেকে প্রতি কেজি আম এক টাকা ১৮ পয়সায় ঢাকায় আসছে।

রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. মিয়া জাহান জানান, গত এক মাসে এক হাজার টনের বেশি আম ট্রেনে এসেছে। প্রতিটি ট্রেনে ২০০ টন করে আম নিয়ে আসার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।

ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং আগামীতে এ ধরনের মৌসুমি ফল সরবরাহে আরও উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বর্তমানে কতটি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করছে জানতে চাইলে মিয়া জাহান বলেন, 'চাহিদার ওপর নির্ভর করে রেল পণ্য পরিবহণ করে থাকে। বুধবার পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে ২৫টি পণ্যবাহী ট্রেন চলেছে। চাহিদা মোতাবেক সেবা দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের রয়েছে।'

রেল কর্মকর্তাদের ভাষ্য মতে, লকডাউনের পর সবচেয়ে বেশি খাদ্যপণ্য রেলের মাধ্যমে পরিবহণ করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে মে মাসে এ পরিবহণ ছিল সবচেয়ে বেশি এবং আয়ও হয়েছে। তবে জুন থেকে চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় খাদ্যপণ্য পরিবহণ কিছুটা কমেছে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে জামালপুর, ঢাকা-ভৈরব-চট্টগ্রাম এবং খুলনা থেকে নীলফামারী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ঢাকা রুটে চারটি পার্সেল ট্রেন চলাচল করছে।

গত ১৯ মে থেকে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের উৎপাদিত পণ্য রেলে পরিবহণে কৃষকের ভাড়া ২৫ শতাংশ কমানোর পাশাপাশি সব ধরনের সার্ভিস চার্জ প্রত্যাহার করে নেয় রেল কর্তৃপক্ষ।

আগামীর পরিকল্পনা জানিয়ে মিয়া জাহান বলেন, 'আমের মৌসুম প্রায় শেষ, এসব পার্সেল ভ্যানে কোরবানির গরু নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এর ফলে ব্যবসায়ীদের যেমন লাভ হবে তেমন রেলেরও আয় বাড়বে।'

উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রেনে করে কোরবানির পশু পরিবহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদের তিন থেকে চার দিন আগে থেকে এ পরিবহণ শুরু করা হবে।

'গাইবান্ধা বা পাবনা অথবা কুষ্টিয়া থেকে চট্টগ্রামে প্রতিটি গরুর ভাড়া সর্বোচ্চ দুই হাজার ৫০০ টাকা এবং ঢাকায় এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা হতে পারে।'

২০০৮ সালে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ঘাট থেকে সাতটি কোরবানির পশুবাহী ট্রেন পরিচালনার কথা জানিয়ে মিয়া জাহান বলেন, এসব ট্রেনে ছাগল ও মহিষ পরিবহণ করা যাবে। ছাগলের জন্য আলাদা লাগেজ ভ্যান হবে এবং সে অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হবে।

প্রতিটি পশুবাহী ট্রেন স্টেশনে আসার পর তা পুরোপুরি পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান মিয়া জাহান।

রেলে পণ্য পরিবহণ বাড়লেও বর্তমানে চট্টগ্রাম রুটে কন্টেইনারবাহী রেল চলাচল কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'স্বাভাবিক সময়ে ছয়টি কন্টেইনার ট্রেন চলাচল করলেও বর্তমানে চারটি চলছে। আমদানি কমে যাওয়ায় এটি হতে পারে।'

রেলের পণ্য পরিবহণে পণ্যের ১৪টি ক্যাটাগরি রয়েছে এবং এসব ক্যাটাগরিতে ভিন্ন ভিন্ন ভাড়া নির্ধারণ করা আছে।

প্রতিটি পণ্যবাহী ট্রেনে কী পরিমাণ আয় হয় জানতে চাইলে মিয়া জাহান বলেন, 'একেক পণ্যে একেক ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। যেমন জ্বালানি তেল পরিবহণে প্রতিটি ট্রেনে সাত থেকে আট লাখ টাকা আয় হয়। কয়েকটি বিদু্যৎ কেন্দ্রে নিয়মিত তেল বা ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

'এছাড়া খাদ্যপণ্য, সার, নির্মাণ সামগ্রী, সিমেন্ট, ভুট্টাসহ নানা পণ্য রেলের মাধ্যমে পরিবহণ করা হয়।'

লকডাউন বা এর পরবর্তী সময়ে যাত্রী পরিবহণ সীমিত থাকায় পণ্য পরিবহণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান মিয়া জাহান।

'আগে হয়তো ইঞ্জিন স্বল্পতার জন্য অনেক চাহিদা থাকলেও পণ্য পরিবহণে সেবা দেওয়া সম্ভব হতো না। তবে এখন সেই সমস্যা না থাকায় চাহিদার প্রেক্ষিতে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।'

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দুই মাসের বেশি সময় দেশে সাধারণ ছুটির পর গত ৩১ মে থেকে আট জোড়া এবং ৩ জুন আরও ১১ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন নামানো হয়। ১৭ দিনের মাথায় যাত্রী সংকটে দুটি রুটে ট্রেন সাময়িক স্থগিত করে রেল কর্তৃপক্ষ।

রেলে ৩৬২টি ট্রেনের মধ্যে স্বাভাবিক সময়ে ১০২টি আন্তঃনগর ট্রেন এবং বাকি ২৬০টির মতো লোকাল, কমিউটার ট্রেন ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করে।

ভারত থেকে পণ্য পরিবহণে ট্রেনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে জানিয়ে মিয়া জাহান বলেন, 'ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে পার্সেল ভ্যান চালু করা হচ্ছে। ভারত থেকে ফলমূল আমদানিতে এসব পার্সেল সার্ভিস ব্যবহার করা হবে।'

'সাধারণত ভারত থেকে যেসব পণ্যবাহী ট্রেন আসে সীমান্তের ওপারে তাদের ইঞ্জিন ফিরে যায়। এরপর বাংলাদেশের রেল ইঞ্জিন সীমান্ত থেকে দেশে পণ্য পরিবহণ করে থাকে। তাদের ওয়াগন বা বগি দেশে নিয়ে আসলে প্রতিদিন ৮৩০ টাকা করে হায়ার চার্জ দিতে হয়।'

মহামারিকালে গত তিন মাসে পণ্য পরিবহণে রেলের আয় কত বেড়েছে সেই হিসাব পাওয়া না গেলেও মিয়া জাহান বলেন, 'শুধু জুন মাসে ভারত থেকে পণ্য পরিবহণে রেলের সাড়ে ১১ কোটি টাকার মতো ভাড়া আদায় হয়েছে।'

প্রচলিত ট্রাক বা ভ্যানের চেয়ে রেলে পণ্য পরিবহণে কত খরচ কম আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বিষয়টি অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে, দূরত্ব বেশি হলে তুলনামূলক কম খরচে পণ্য পরিবহণ করা যায়। তবে অবশ্যই অন্যান্য পরিবহণের চেয়ে রেলে পণ্য পরিবহণ তুলনামূলকভাবে সস্তা।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে