শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সোনালু-জারুলে বর্ণিল শিবচর

এস.এম.দেলোয়ার হোসাইন, শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
  ১৯ মে ২০২৩, ১২:০৯
ছবি-যাযাদি

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের ষড়্‌ঋতুর বাংলাদেশ। ষড়্‌ঋতুর এই দেশে বারো মাসে মোট ছয়টি ঋতু। একেক ঋতু প্রকৃতিতে একেক রকমের বার্তা নিয়ে আসে এখানে। প্রতি দুই মাস অন্তর ঋতু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এখানকার প্রকৃতিতে চলতে থাকে রূপের পালাবদল। সাধারণত কাঠফাটা রোদ আর গরমের জন্য গ্রীষ্ম ঋতুর খ্যাতি থাকলেও দৃষ্টিনন্দন ফুলে ফুলে প্রকৃতি সাজাতেও গ্রীষ্ম ঋতুর জুড়ি নেই।

গ্রীস্মের প্রখর রোদ্দুরে পুষ্পভারে আচ্ছাদিত রাস্তার দুইপাড়ের বৃক্ষরাজি। জারুলের গাঢ় বেগুনি রঙের বন্যা বয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। গ্রীষ্মের প্রখর উত্তাপের মাঝেও চারদিকে প্রশান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে মায়াবী কুকিলের ডাক। হালকা নিলুয়া বাতাসে সবুজ পাতার ফাঁকে মাথা তুলেছে জাফরুলের বেগুনি পাপড়ি। এমন দৃষ্টিনন্দন রঙের মায়াবী দৃশ্যে চোখ ভরে উঠবে যে কারোরই।

অন্যদিকে সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ। প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজিয়ে তুলতে সোনালু ফুলের জুড়ি নেই। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বৃদ্ধিতে সোনালু দারুণ এক মায়া এনে দিয়েছে। গ্রামের শিশু-কিশোরীরা এখনো ওই ফুলকে কানের দুল হিসেবে লাগিয়ে খেলায় মেতে ওঠে। সোনালু ফুলে শোভিত মাদারীপুর শিবচর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম-মহল্লা।

হাট, বাজার ও গঞ্জের চারপাশেও দেখা যেত হলুদিয়া সাজের সোনালুর উপস্থিতি। এখন হাতেগোনা কিছু গাছ দেখা যায় পথে প্রান্তরে। দিন দিন কমে আসছে সোনালুর সংখ্যা। তবে এখন শিবচর উপজেলার মহাসড়কসহ অনেক স্থানে দেখা যাচ্ছে এই সোনালু।

উপজেলার কুতুবপুর সীমানা নামক স্থানে গ্রামে এলে দেখা মেলে সোনালু গাছের। আর সেখানে ভ্যান থামিয়ে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পারভেজ ও রফিকুল ইসলাম নামের দুই যুবকের সঙ্গে কথা হয়।

পারভেজ যায়যায়দিনকে বলেন, ‘কোনো একদিন চলন্ত রাস্তায় দূর থেকে গাছটি দেখলেও কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি। পরে কাজ শেষ করে বন্ধু রফিকুল ইসলাম সঙ্গে নিয়ে সোনালু গাছটির কাছে গিয়ে এর রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। এ যেন প্রকৃতির অপার কারুকাজ।’

রফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘একসময় সোনালু গাছ প্রকৃতিতে অনেক বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে তা কমে আসছে। গাছটি সাধারণত যত্ন করে লাগানো হয় না বরং সে নিজেই বেড়ে ওঠে অযত্নে অবহেলায়। নিরবে বেড়ে ওঠে, থাকেও নিষ্প্রাণ নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে। যখন ফুল ফোটে তখন কারো সাধ্য নেই এই গাছকে দৃষ্টি না দিয়ে এড়িয়ে যাবার। বেড়ে ওঠার সময় তেমন দৃষ্টিতে না পড়লেও ফুল ফোটার পর দেখে সবার মন-প্রাণ প্রশান্তিতে ভরে যায়।’

পাঁচ্চর এলাকার বাসিন্দা কবি আব্দুল আজিজ যায়যায়দিনকে বলেন, জারুল ফুল আসলে অনেক সুন্দর গাছ হওয়ায় আমাদের এলাকার পরিবেশকে বেশ সজ্জিত করেছে। এই সৌন্দর্যময় পরিবেশ দেখে যে কেউ বিমোহিত হয়। আশ্চর্যের বিষয় জারুল ফুলে ভরপুর এই প্রাকৃতিক পরিবেশে মুগ্ধ হয়ে পথের পথিক কিছুটা সময় হলেও এখানে ব্যয় করে।

বিএমএসএফ শিবচর শাখার সভাপতি সাংবাদিক অপূর্ব জয় বলেন, ‘আমরা শৈশবে সোনালু গাছ বাড়ির আশপাশেই দেখেছি। তবে এখন আর দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে সোনালু গাছের দেখা মেলে। গ্রীষ্মকালে জারুল, কৃষ্ণচূড়ার মতো সোনালু ফুল আমাদের জন্য উপহার। তবে প্রকৃতিকে সাজাতে আমাদেরও সবার এগিয়ে আসা উচি ’।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন "দেশ" এর সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বৈশাখ মাসে গ্রামগঞ্জসহ রাস্তার ধারে জারুল গাছ এখন বেগুনি রংয়ের ফুলে প্রকৃতিকে এক অপার সৌন্দর্যে ফুটিয়ে তুলেছে। চমৎকার এই ফুল সবারই নজর কাড়ছে প্রতিনিয়ত। জারুল গাছের বেগুনি রঙের ফুলে মনোমুগ্ধকর এক আবেশ তৈরি হয়। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য দেখতে খুবই ভালো লাগে, যদিও বর্তমানে জারুল গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তাই সড়কের দুপাশেসহ বিভিন্ন স্থানে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এই গাছটি বেশি করে রোপণ করা খুবই জরুরি।’

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে