ইসরায়েলের বিমান হামলায় শহীদ হয়েছেন ইরানের উদীয়মান কবি ও ইংরেজি শিক্ষিকা পারনিয়া আব্বাসি। রাজধানী তেহরানের সত্তারখানপাড়ায় গত শুক্রবার ভোরে একটি আবাসিক ভবনে হামলার শিকার হন তিনি।
ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় তার নিথর দেহ। একই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন পারনিয়ার বাবা, মা ও ছোট ভাই—একটি পুরো পরিবার একসাথে শহীদ হলো।
পারনিয়ার বাবা পারভিজ আব্বাসি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, মা মাসুমেহ শাহরিয়ারি অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার এবং ভাই পাহরাম আব্বাসি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
পারনিয়া আব্বাসি ইরানের সমসাময়িক কবিদের মধ্যে এক উজ্জ্বল কণ্ঠস্বর হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। তার লেখা কবিতায় ফুটে উঠত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, আবেগ ও রাজনৈতিক বাস্তবতা।
বিশেষ করে তার লেখা ‘নিভে যাওয়া নক্ষত্র’ কবিতাটি ইরানি সাহিত্যে আলোড়ন তোলে। ভজন-ই-দুনিয়া সাহিত্য পত্রিকার একটি বিশেষ সংখ্যায় কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল। সংখ্যাটি মূলত জেনারেশন জেড কবিদের নিবেদিত ছিল।
পারনিয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমার সঙ্গে যা কিছু ঘটে, আমি চেষ্টা করি সেগুলোকে লেখায় ধরতে—সেই মুহূর্তের অনুভূতিকে কবিতায় রূপ দিতে।’ পারনিয়ার সেই কবিতার কয়েকটি পংক্তি এখন ফেসবুকে ঘুরছে—
‘তুমি আর আমি
একদিন শেষ হয়ে যাব
কোথাও, কোনোখানে
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কবিতা
চুপ হয়ে যাবে।’পেশাগতভাবে তিনি ব্যাংক মেল্লির প্রধান শাখায় কর্মরত ছিলেন। ইংরেজি অনুবাদে স্নাতক সম্পন্ন করেন কাজভিন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তরে ভর্তি হলেও চাকরির কারণে সেটি স্থগিত রাখেন।
হামলার লক্ষ্য ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে একই ভবনে বসবাসকারী পরমাণুবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক ড. আবদুলহামিদ মিনুশেহর। ফলে পারনিয়ার পরিবার সম্ভবত অনিচ্ছাকৃত হামলার শিকার হয়েছেন।
পারনিয়াকে তার বন্ধু ও সহকর্মীরা স্মরণ করছেন একজন ‘জীবন ও কবিতায় পরিপূর্ণ মানুষ’ হিসেবে। তার অকালমৃত্যু ইরানের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া ফেলেছে।
দেশের সাহিত্যিক মহল বলছে, যেমনভাবে বিজ্ঞানী হত্যাকে জাতীয় ক্ষতি হিসেবে দেখা হচ্ছে, তেমনি একজন তরুণ শিল্পীর মৃত্যু জাতীয় শোক ও ক্ষোভের কারণ হয়ে উঠেছে।
পারনিয়ার হত্যাকাণ্ড শুধু ইরান নয়, সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষকেই নাড়া দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পারনিয়ার কবিতা যেন আরও একটি নক্ষত্র পতনের নীরব সাক্ষী হয়ে রইল।