রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তৃণমূলের এলাকাভিত্তিক বাজেট প্রনয়ণ প্রয়োজন: ড. মাহবুবা নাসরীন

যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ মার্চ ২০২৪, ২০:৪৪

শিক্ষা কর্ম পরিকল্পনা, তৃণমুলের অংশগ্রহণ ও বাস্তবায়ন জোরালো করতে হবে। টাকার অঙ্কে বাজেটে শিক্ষার বরাদ্দ বাড়লেও শতাংশে বরাদ্দ কমেছে। আর তাই আসন্ন বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ শুক্রবার গণসাক্ষরতা অভিযানের উদ্যোগে মালালা ফান্ড ও জিপিই-এর সহযোগিতায় ‘শিক্ষায় ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট: আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানান বিশিষ্ট আলোচকবৃন্দ।

এ সময় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (শিক্ষা), বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন বাউবির প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বেশ কয়েকটি সুপারিশসহ মতামত উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বাউবির প্রতিষ্ঠাকালীন দর্শন হলো শিক্ষাবঞ্চিত, অবহেলিত, নারী, আদিবাসীদের আলোকিত করে মূলসোপানে যুক্ত করা। শিক্ষা নিয়ে তার তিন দশকের গবেষণার আলোকে তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতার মাসে জাতির পিতার শিক্ষা ভাবনা দিয়ে শুরু করতে চাই। তিনি বলেছিলেন “শিক্ষায় বিনিয়োগ সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ”। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে জেন্ডার ও সামাজিক অন্তরভূক্তিমূলক শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। বাউবি সে সকল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা পরিবারে সংযুক্ত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। নতুন কারিকুলামে ডিজিটাল ও দক্ষ নাগরিক তৈরীতে বাউবি এগিয়ে আছে।কর্মজীবি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ।

এই আলোচনায় নানা সুপারিশ করা হয়: আমাদের উপবৃত্তি হিসেবে দেওয়া অর্থের পরিমাণ বাড়াতে হবে, প্রান্তিক অঞ্চল ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শতভাগ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করতে হবে। কারিগরি শিক্ষার শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপবৃত্তির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

শিক্ষাখাতে বরাদ্দকৃত বাজেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য মনিটরিং ও সমন্বয় জোরদার করা এবং বাজেট বিভাজনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের মধ্যে সমন্বয়হীনতা পরিহার করা প্রয়োজন।

শিক্ষা বাজেট নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ( ইউনিয়ন/উপজেলা) বিশেষ করে স্কুল পর্যায়ে আলোচনা করতে হবে। জেলা পর্যায়ে বাজেটের অব্যয়িত অর্থ সংশ্লিষ্ট জেলার চর, হাওর, উপকূলীয় ও ভৌগোলিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যয় করার নির্দেশনা বাজেটে থাকা দরকার।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবং মাদ্রাসাগুলোতেও মিড-ডে মিল ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এক সময় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েদের ফলিক এসিড দেওয়া হতো, এখন দেওয়া হয় না। এ ব্যবস্থা পুনরায় চালু করতে হবে। এজন্য বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন। দুর্যোগকালে যাতে শিক্ষা চলমান থাকে সেজন্য পূর্বপরিকল্পনা করা প্রয়োজন।

এ সময় অন্যান্য আলোচকবৃন্দ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন, মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সবার লেখাপড়া অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করতে হবে। সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের খাতা, কলম, টিফিনবক্স, ব্যাগ, ছাতাসহ বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য বাজেটে বরাদ্দ থাকতে হবে।

অনেক স্কুলে কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করা হয় না বলে এক সময় অকেজো হয়ে যায়। এগুলো চালু রাখা ও কম্পিউটার মেরামতের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। স্মার্ট নাগরিক গড়তে হলে স্মার্ট পরিকল্পনা নিতে হবে, স্মার্ট বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। সকল বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব ও সায়েন্স ল্যাব স্থাপন ও ব্যবহারের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। কারিকুলামে মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে জনবান্ধব করে তোলার লক্ষ্যে নতুন কারিকুলামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষানীতিকে যুগোপযোগী করা এবং কারিকুলাম বাস্তবায়নে জন্য যে অর্থ প্রয়োজন তার জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে।

বিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠদান পদ্ধতিতে যে বৈষম্য রয়েছে তা নিরসন করা এবং পাঠ্যবইয়ের মান উন্নয়ন করার জন্য বরাদ্দ প্রয়োজন। মাধ্যমিক স্কুলে বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত, দারিদ্রপীড়িত, প্রত্যন্ত এলাকার মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলে ভালো টয়লেট, স্যানিটারি প্যাড, সাবান, টিস্যু ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ সংক্রান্ত স্কুলভিত্তিক বাজেট রাখার জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করা হয়।

এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী।

বাজেট বিষয়ক আলোচনাপত্র উপস্থাপন করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

আলোচনাপত্রে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন আগেও আমরা দেখেছি সংশোধিত বাজেটে শিক্ষা খাত থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা ফেরত নেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি অন্ততপক্ষে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। অর্থ সংস্থানের জন্য প্রয়োজনে এডুকেশন সারচার্জ চালু করা এবং বিভিন্ন ব্যাংক ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সিএসআর ফান্ডের অর্থ ব্যবহার করা যেতে পারে।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার মানোন্নয়নে সমন্বিতভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষায় প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি পেয়েছে, এবার গুণগত মান নিশ্চিতে আমাদের কাজ করতে হবে। সরকার অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে, ভবন দিচ্ছে– এখন শুধু সমন্বয় করে বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাস্তবায়নের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের অদক্ষতার জন্য যদি টাকা ফেরত যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। শিক্ষকতায় তরুণদের আকর্ষিত করতে হলে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিসহ প্রশিক্ষণ, চাকরির পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে নইলে তারা অন্য পেশায় চলে যাবেন। শিক্ষা আইনের খসড়া কেন আলোর মুখ দেখছে না এ ব্যাপারে আমি উদ্যোগ নেবো। উপবৃত্তির অর্থবৃদ্ধির দাবিও যৌক্তিক। আমি এর সঙ্গে একমত এবং এই সুপারিশটিও যথাযথ জায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা করবো। এসব ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

সভায় অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোছা. নূরজাহান খাতুন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক তপন কুমার দাশ। এছাড়া শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ, গবেষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে