শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে নাকাল কর্মজীবী মানুষ

বিশেষ প্রতিনিধি
  ২৯ মে ২০২৫, ১১:১৮
আপডেট  : ২৯ মে ২০২৫, ১১:৩২
সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে নাকাল কর্মজীবী মানুষ
বৃষ্টির কারণে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা, যানজট, গণপরিবহন সংকট-যাযাদি

সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে জনজীবন একপ্রকার থমকে গেছে রাজধানী ঢাকায়। অফিসগামী কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী, দিনমজুর, দোকানি- প্রায় সবাইকে নানা ধরনের ভোগান্তির মধ্য দিয়ে দিন শুরু করতে হয়েছে।

রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে দেখা গেছে জলাবদ্ধতা, যানজট, গণপরিবহন সংকট এবং চলাচলে চরম দুর্ভোগ। দীর্ঘ সময় রাস্তায় আটকে থেকে কর্মস্থলে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে হাজারো মানুষের।

1

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বুধবার রাত থেকেই আকাশ মেঘলা ছিল। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, যা সকাল ৭টার পর থেকে ক্রমশ বেড়ে যায়।

দুপুরের দিকে বৃষ্টি থেমে গেলেও সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ছিল সর্বোচ্চ দুর্ভোগের সময়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আরও দুই দিন এমন বৃষ্টিপাত চলতে পারে। ফলে দুর্ভোগ অব্যাহত থাকার আশঙ্কা করছেন নগরবাসী।

সড়কে জলাবদ্ধতা: প্রধান দুর্ভোগের কারণ: ঢাকার অনেক এলাকায় নালা-নর্দমা অকার্যকর হয়ে পড়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে যায়। মিরপুর, রামপুরা, মালিবাগ, বিজয় সরণি, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, ও মগবাজারে দেখা গেছে ঘন জলাবদ্ধতা।

যেসব রাস্তায় মেট্রোরেল বা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে, সেসব এলাকায় পানি জমে অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে পড়ে। বহু রিকশা ও সিএনজি আটকে পড়ে সড়কের মাঝখানে। কোথাও কোথাও মানুষ হাঁটু পানির মধ্যে হেঁটে গন্তব্যে গেছে।

গণপরিবহন সংকট ও যানজট: কর্মস্থলে পৌঁছানো চ্যালেঞ্জ: বৃষ্টির কারণে রাস্তায় চলাচলকারী গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে কম। সকাল ৮টার দিকে অফিস টাইমে বাস না পেয়ে অনেকেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় তীব্র যানজট, যার ফলে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে গাড়ির গতি প্রায় থেমে যায়।

উত্তরা থেকে মতিঝিলে অফিসগামী মো. সায়েম হোসেন বলেন, ‌‌‌সকালে বাস পাইনি। সিএনজি চাইলেই দ্বিগুণ ভাড়া। শেষে হেঁটে মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত গেছি। সেখান থেকেও বাসে নামার পর হাঁটতে হয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার পানি ভেঙে।

শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ: শ্রেণিকক্ষে পৌঁছাতে হিমশিম: স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা এই বৃষ্টিতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে পৌঁছাতে পারেনি, কেউ কেউ পুরো ভিজে ক্লাসে উপস্থিত হয়েছে। কাদা-পানির মধ্যে পড়ে গিয়ে আহতও হয়েছেন কেউ কেউ। অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায় ছিলেন সন্তানদের নিরাপদে স্কুলে পাঠানো নিয়ে।

রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা সালমা নাহার বলেন, ‌সকালে মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যেতে গিয়ে দেখি রাস্তা পুরো ডুবে গেছে। বাস আসছিল না, শেষ পর্যন্ত ভিজে ভিজে ওকে স্কুলে পৌঁছে দিয়েছি।

দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে থেমে যায় রোজগার: নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বৃষ্টি মানেই জীবিকা বন্ধ হয়ে যাওয়া। যারা রাস্তায় চা বিক্রি করেন, ভ্যান চালান, বা নির্মাণশ্রমিক—তাদের অনেকেই আজ কোনো কাজ পাননি। ফলে সারাদিন না খেয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে অনেককে।

নির্মাণ শ্রমিক রমজান আলী বলেন, আজ সাইটে কোনো কাজ হয়নি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বসে ছিলাম, কেউ তো ডাকে না। ঘরে চাল নেই, কী করব বুঝতে পারছি না।

দোকানপাটে ব্যবসায় মন্দাভাব : বৃষ্টির কারণে রাস্তায় মানুষ কম থাকায় ফুটপাথের দোকান, ছোট রেস্টুরেন্ট, কাপড় ও ফলের দোকানে বেচাকেনা কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সকাল থেকে প্রায় কেউই দোকানে আসেনি।

গুলিস্তানের জামা কাপড় বিক্রেতা কাইয়ুম বলেন, বৃষ্টি হলে ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পানি উঠলে দোকান বন্ধ করতে হয়। এইভাবে চলতে থাকলে ঈদের আগেও কিছু বিক্রি হবে না।

নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতা ও জনদুর্ভোগ: ঢাকার জলাবদ্ধতা নতুন কিছু নয়। কিন্তু প্রতিবছর সামান্য বৃষ্টিতেই যখন পুরো শহর অচল হয়ে পড়ে, তখন প্রশ্ন ওঠে প্রশাসনিক দায়িত্ব ও নগর পরিকল্পনার ওপর। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় ড্রেনেজ উন্নয়নের কথা বলা হলেও বাস্তবতা এখনো তেমন কিছুই দেখায় না।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. মাহবুব হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে রাজধানীতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের অভাব রয়েছে। নানা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও প্রকট। এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

দুর্ভোগের এই দিনে নাগরিকদের দাবি- এই সমস্যার যেন বার্ষিক তামাশা না হয়। বরং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পানি নিষ্কাশন, ও রাস্তাঘাট সংস্কারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে