শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
পরিচালক ডা. মজিবুর রহমানের চমক

দীর্ঘদিন পর জলাবদ্ধতামুক্ত হলো আইসিএমএইচ

বিশেষ প্রতিনিধি
  ০৬ জুন ২০২৫, ১০:৫১
আপডেট  : ০৬ জুন ২০২৫, ১৪:০২
দীর্ঘদিন পর জলাবদ্ধতামুক্ত হলো আইসিএমএইচ
জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ পরিচালনা করছেন আইসিএমএইচের পরিচালক ডা. মজিবুর রহমান ও যুগ্ম পরিচালক ডা. এহসানুল হক- যাযাদি

দীর্ঘদিনের চলমান সমস্যার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে জলাবদ্ধতামুক্ত হলো রাজধানীর মাতুয়াইলের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ)।

স্থানীয়রা জানান, গত প্রায় এক দশক ধরে আইসিএমএইচের প্রবেশপথ, হাসপাতাল চত্বর এবং প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক ভবনের আশপাশে সামান্য বৃষ্টিপাতেই দেখা দিত জলাবদ্ধতা। যা রোগী, দর্শনার্থী এবং হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াত। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও শিশুদের চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটত। ঘটতো ছোট-বড় নানা দূর্ঘটনা।

1

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হাসপাতালের বোর্ড মিটিংয়ে ক্যাম্পাসের জলাবদ্ধতা সংকট সমাধানের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম আইসিএমএইচ-এর জলাবদ্ধতার দীর্ঘদিনের সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের তাগিদ দেন। এ সংকট সমাধানে বড় অংকের অর্থ খরচ হলেও তাতেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পিছুপা না হতে বলেন। এর আগে এ বিষয়টি নিয়ে ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একাধিক বৈঠক করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালে জলাবদ্ধতা সমস্যার প্রধান কারণ ছিল দূর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং পানি নিষ্কাশনের অনুপযুক্ত পথ । দীর্ঘদিন ধরে এর সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছিলেন হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ জনগণ, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবরই এ ব্যাপারে ছিল উদাসীন।

তবে গত বছরের ৫ আগস্টে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর ডা. মজিবুর রহমান আইসিএমএইচ-এর পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেই দীর্ঘদিনের এ সমস্যা নিরসনে উদ্যোগ নেন। তার নেতৃত্বে এবং স্থানীয়দের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার, পানি নিষ্কাশনের জন্য নতুন পাইপলাইন স্থাপন করার কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়। এ কর্মযজ্ঞে আইসিএমএইচ হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ডা. মো. আহসানুল হক স্বক্রিয়ভাবে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধন করেন।

ডা. মজিবুর রহমান বলেন, ‌‌‌এই সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র অফিসিয়াল পদক্ষেপে সম্ভব ছিল না। স্থানীয়দের সহযোগিতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ আমাদের এই কাজকে সহজ করেছে।

তিনি জানান, সম্প্রতি টানা বৃষ্টিপাতে আইসিএমএইচ ক্যাম্পাস ডুবে গেলে হাসপাতালের চিকিৎসক-রোগসহ সবাই অবর্ননীয় দূর্ভোগে পড়েন। মানবিক দিক বিবেচনায় তিনি দ্রুত সময়ের মধ্য এ সংকট সমাধান করবেন বলে মনে মনে প্রতীক্ষাবদ্ধ হন। তিনি বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. এমদাদুল হকের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে তার নির্দেশনা এবং উৎসাহে তিনি জলাবদ্ধতার দীর্ঘস্থায়ী সংকট নিরসনে সুনির্দিষ্ট ছক তৈরি করেন।

ডা. মজিবুর রহমান বলেন, আমরা শুধু জলাবদ্ধ আইসিএমএইচ ক্যাম্পাসের দিকে নজর নিবদ্ধ না রেখে মূল সমস্যা কোথায় তা খুঁজে বের করতে স্বচেষ্ট হই। জলাবদ্ধ পানির গতিপথ অনুসরণ করে কোথায় গিয়ে পানি আটকে যাচ্ছে তা চিহ্নিত করি।

সেখানকার রাস্তা খুঁড়ে দেখি, পানির ড্রেনেজ লাইনের পাইপ ভেঙ্গে কে বা কারা বিপুল সংখ্যক সিমেন্টের বস্তা ঢুকিয়ে রেখেছে। যে কারণে আইসিএমএইচ ক্যাম্পাসে জমা বৃষ্টির পানি নিস্কাষণ হতে পারছে না।

ডা. মজিবুর রহমান জানান, পাইপের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখা সিমেন্টের বস্তা বের করে দেয়ার পাশাপাশি ভাঙ্গা পাইপ পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। এতে আইসিএমএইচ ক্যাম্পাসে বৃষ্টির পানি জমার আগেই তা সহজেই নিস্কাষিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে আইসিএমএইচ-এর জলাবদ্ধতার দীর্ঘদিনের ভয়াবহ সংকটের স্থায়ী সমাধান হয়েছে বলে আশাবাদী তিনি।

এদিকে, এ উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স, স্থানীয় বাসিন্দা ও রোগীর স্বজনরা। তাদের মতে, এটা শুধু একটি ভৌত সমস্যা সমাধান নয়, এটি জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এক বড় অর্জন।

হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. এমদাদুল হক বলেন, এই হাসপাতাল প্রতিদিন হাজারো মা ও শিশুকে সেবা দিয়ে থাকে। এখানে পরিবেশ যদি মানবিক না হয়, তাহলে স্বাস্থ্যসেবাও ব্যাহত হয়। আমি বিশ্বাস করি, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যে কোনো বড় সংকটের সমাধান করা সম্ভব। ডা. মজিবুর রহমান তা করে দেখিয়েছেন।

স্থানীয় এলাকাবাসীদের নিয়ে আইসিএমএইচের জলাবদ্ধতা নিরসন কার্যক্রমে স্বক্রিয় অংশগ্রহণকারী মো. নাছির বলেন, এ কাজে অংশ নিতে পেরে আমরা গর্বিত। কারণ এ হাসপাতালটিতে হাজার হাজার মা ও শিশু চিকিৎসা নিয়ে থাকে। জলাবদ্ধতার সংকট দূর হওয়ায় এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দীর্ঘদিনের দূর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আগে টানা বৃষ্টির পর শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যেত না। দূর্ঘটনার ভয়ে গর্ভবতী মা, অসুস্থ রোগী, এমনকি সুস্থ মানুষ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ঢুকতে ভয় পেতো। ডা. মজিবুর রহমানের উদ্যেগে জলাবদ্ধতার সংকট নিরসনের পর টানা বৃষ্টিতে পুরো এলাকা পরিষ্কার ও শুকনো থাকে। এটা আমাদের সবার অর্জন।

মাতুয়াইল এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সমাজসেবীরা মনে করেন, এ উদ্যোগটি শুধু একটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বরং এটি এক সফল জনসম্পৃক্ত উন্নয়নের উদাহরণ। যখন একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেন, তখন প্রতিকূল সমস্যারও সমাধান সম্ভব হয় - আইসিএমএইচ সম্প্রিত তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে