সরকারি নতুন পাঠ্যবই পাচারের ঘটনা থেকে এক প্রভাবশালী ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে রক্ষায় স্বজনপ্রীতি ও প্রশাসনিক পক্ষপাতিত্ব করে নিরীহ এক ভ্যানচালককে হয়রানির ফাঁদে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরির বিরুদ্ধে।
ভ্যানচালক শফিকুল জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বিকালে উপজেলার পিঙ্গলাকাঠী এলাকার ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী সুজন বেপারী সরকারি বিনামূল্যে বিতরণযোগ্য শতাধিক নতুন পাঠ্যবই তাকে (ভ্যানচালক শফিকুল) উপজেলার কাসেমাবাদ হেলিপ্যাড সংলগ্ন মেসার্স মদিনা স্টোর নামের মজিবর বেপারীর ভাঙ্গারি দোকানে পৌঁছে দিতে বলেন।
এটা যে অপরাধ তা তার (ভ্যান চালক) জানা ছিলোনা। তাহলে তিনি এই বই নিয়ে আসতেন না।
স্থানীয়রা জানান, মজিবরের ভাঙ্গারি কারখানায় বিপুল পরিমাণ নতুন বই নামানো হচ্ছে দেখে সন্দেহ হলে তারা স্থানীয় সাংবাদিকদের খবর দেন।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইউএনও রিফাত আরা মৌরি ও গৌরনদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ মাহবুবুর রহমান থানা পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভ্যানে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন সরকারী পাঠ্যবই ও ভাঙারির গোডাউন ভর্তি বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের সরকারি পাঠ্যবইয়ের বিশাল মজুত দেখতে পান।
ইউএনও উপস্থিত এলাকাবাসী ও সাংবাদিকদের সামনেই নয়ন সরদার নামে একজনকে বই গণনার নির্দেশ দেন। এ সময় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী (মজিবর) ঝালকাঠি জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) মোঃ কাওছার হোসেন তার ভাই বলে ইউএনও রিফাত আরা মৌরি’কে পরিচয় দেন।
বই গণনার একপর্যায়ে এডিসি ইউএনও’র সরকারী ফোনে কল করেন এডিসি মোঃ কাওছার হোসেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো চোখের সামনে গোডাউন ভর্তি বিপুল সরকারী বই থাকা সত্ত্বেও ইউএনও এলকাবাসী ও সকল সাংবাদিকদের সামনেই ফোনে এডিসিকে ‘ভ্যানে বই পাওয়া গেলেও গোডাউনে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।’ বলে জানান এবং নিরীহ ভ্যানচালক শফিকুল তালুকদারকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে পুলিশে হস্তান্তর করেন।
অভিযোগ রয়েছে, ভ্যানে থাকা বই জব্দ করা হলেও গোডাউনে থাকা বিপুল বই অপ্রকাশিত ও অরক্ষিতই থেকে যায় এবং গোডাউন মালিক মজিবর বেপারীর বিরুদ্ধেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে আজ শুক্রবার সকালে হঠাৎ পাল্টে যায় সব চিত্র। অভিযোগ উঠেছে, পুরো ঘটনায় এডিসির আত্মীয় মজিবরকে বাঁচাতে ইউএনওর মৌখিক নির্দেশে বই বিক্রেতা সুজন বেপারী, ভ্যানচালক শফিকুল ও একটি মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী সাগর হোসেনসহ তিনজনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে ঘটনার আরেক হোতাকে মামলায় অন্তর্ভূক্ত না করায় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী মজিবর বেপারী বলেন, ইউএনও স্যার গোডাউনে আসলে আমি আমার ভাই কাওছারকে (এডিসি) কল করি পরে আমার কল কেটে সে (এডিসি) ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে।
বইগুলো আমার কাছে বিক্রি করতে নিয়ে আসা হয়নি। এমনকি আমার গোডাউনেও কোন বই ছিলোনা। এখন রাস্তা দিয়ে কেউ কিছু বহন করে নিয়ে গেলে সেই দায় তো আমার নয়।
প্রত্যক্ষদর্শী গৌরনদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ মাহবুবুর রহমান গোডাউনে অনেক পাঠ্যবই বই ছিল উল্লেখ করে বলেন, ঘটনাস্থলে ইউএনও স্যার এবং অন্যান্য সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন এবং আমি নির্বাহী কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেছি। শুক্রবার সকালে অভিযান চালিয়ে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ি সুজনকে গ্রেফতার করার পর বই বহনকারী ভ্যান চালক শফিকুল ও ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী সুজনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি বলেন, এলাকাবাসী ও সাংবাদিকদের সামনেই গোডাউন সার্চ করে পুরাতন কিছু বই পাওয়া গেলেও এ বছরের কোন নতুন বই তখন সেখানে পাওয়া যায় নি। তবে ভ্যান থেকে এ বছরের কিছু বই জব্দ করা হয়েছে তাই ভ্যানচালককে আসামী করে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
পরবর্তীতে তার জবানবন্দী অনুযায়ী তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে একজন এডিসির ভাই বলে স্বজনপ্রীতি করে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে রক্ষার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি।
বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে।