সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

মজুতদার সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা

বিশেষ প্রতিনিধি
  ২৩ জুন ২০২৫, ০৭:০৭
মজুতদার সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা
সংগৃহীত

হঠাৎ করেই রাজধানীসহ সারা দেশে চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি চালে পাঁচ থেকে সাত টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বোরোর এই ভরা মৌসুমে চালের এই দর বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে ভোক্তারা।

কিন্তু কেন বাড়ছে চালের দাম? যেখানে এখনো দেশের হাটবাজারগুলোতে বোরো মৌসুমের কাঁচা ধানের গন্ধই যায়নি। এছাড়া, এবার বোরোর উৎপাদনও ভালো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকারের মজুত নীতিমালার তোয়াক্কা না করে অসাধু মজুতদার ও কর্পোরেট চাল ব্যবসায়ীরা বেশি পরিমাণে ধান কিনে মজুত করে রেখেছেন। কৃষকের ধান সাধারণ মিলারদের হাতে একেবারে নেই বললেই চলে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। তবে বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ার কারণে চাতালে ধান শুকানো যাচ্ছে না। ফলে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণেও চালের দাম বেড়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।

গত কয়েকদিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন মোকামে খোঁজ নিয়ে চালের দাম বাড়ার এ তথ্য পাওয়া যায়। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বাড়ার তথ্য তুলে ধরেছে। গতকাল রাজধানীর খুচরাবাজারে মানভেদে প্রতি কেজি মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৫২ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারিমানের চাল পাইজাম/লতা ৫৬ থেকে ৬৫ টাকা ও সরু চাল নাজিরশাইল/ মিনিকেট ৭০ থেকে ৮২ টাকা দরে বিক্রি হয়। যা সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে চালের কেজিতে দুই থেকে সাত টাকা বেশি। আমাদের শেরপর (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, প্রতিকূল আবহাওয়া ও মজুদদারদের কারণে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম চালের মোকাম বগুড়ার শেরপুর ধান-চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।

ধানের মৌসুম শেষ হতে না হতেই ধান চালের দাম বাড়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে নিম্ন-আয়ের মানুষ ও ধান-চালের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের অন্যতম চালের মোকাম শেরপুর উপজেলায় আটটি অটোমেটিক রাইসমিল, পাঁচ শতাধিক রাইসমিল ও বেশ কয়েক জন আড়তদার রয়েছেন। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে এই মোকামের যমুনা সেমি অটো রাইচ মিলের মালিক আইয়ুব আলী জানান, বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ার কারণে চাতালে ধান শুকানো যাচ্ছে না। এ কারণে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ কমে গেছে। এছাড়া বড় বড় করপোরেট কোম্পানি এসিআই, রূপচাঁদা, আকিজ, প্রাণ, স্বপ্নসহ এসব কোম্পানির প্রতিনিধিরা এই মোকাম থেকে পর্যাপ্ত চাল কিনে তাদের গোদামগুলোতে মজুত শুরু করেছে। পাশাপাশি একশ্রেণির স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও চাল কিনে মজুত করছে। ফলে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।

নওগাঁর স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, দেশের ধান-চাল উৎপাদনকারী অন্যতম এ জেলা নওগাঁয় এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে প্রতি কেজি দুই থেকে সাত টাকা। পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে প্রতি কেজি চালরে দাম বেড়েছে দুই-চার টাকা। ভরা মৌসুমেও চালের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন-আয়ের মানুষ।

ভরা মৌসুমে মিলারদের সিন্ডিকেট এবং মজুতবিরোধী অভিযান না থাকায় চালের এমন আকস্মিক দাম বৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা। নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চালবাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মানভেদে কেজি প্রতি ৫-৮ টাকা বেড়ে জিরাশাইল ৭০-৭২ টাকা, কাটারি ৭৫-৮০ টাকা, শুভলতা ৬২-৬৪ টাকা, ব্রি আর-২৮ চাল ৬৫-৬৬ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এক সপ্তাহে আগে এই বাজারে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৬৫-৬৬ টাকা, কাটারি ৭০-৭২ টাকা, শুভলতা ৫৭-৫৮ টাকা, ব্রি আর-২৮ চাল ৫৯-৬০ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫২-৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। প্রকারভেদে তিন থেকে আট টাকা বেড়েছে চালের দাম। এই বাজারের ক্ষুদ্র চালবাজার সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ীরা বেশি দাম দিয়ে ধান কিনছে। তারা হাজার হাজার টন ধান কিনে মজুত করে রাখছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করার জোর দাবি জানান তিনি।

পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারের মজুত নীতিমালার তোয়াক্কা করছেন না অসাধু মজুতদাররা। এবার বোরো মৌসুমের শুরুতেই করপোরেট ব্যবসায়ীরা হাট-বাজারে আসা অর্ধেকের বেশি ধান কিনে মজুত করে রেখেছেন। কৃষকের ধান সাধারণ মিলারদের হাতে একেবারে নেই বললেই চলে।

নওগাঁর চালকল মালিকরা জানান, চালের দাম সাধারণ দুই-তিন টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ছয়-সাত টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ব্র্যান্ডিং কোম্পানির। তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। যার কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নলেজে থাকলেও তারা বরাবরের মতই শুধু চিঠি দিয়েই ক্ষ্যান্ত রয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চাল ব্যবসায়ীরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে