সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

হামলার আগেই ইরানকে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র!

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ জুন ২০২৫, ২০:৩৬
হামলার আগেই ইরানকে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র!
ছবি সংগৃহীত

ইরানে মার্কিন বিমান হামলার আগেই তেহরানকে গোপনে সতর্ক করেছিল ওয়াশিংটন। ‘সম্পূর্ণ যুদ্ধ’ এড়াতে এমন পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাষ্ট্র- এমন দাবি করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আমওয়াজ মিডিয়া।

রোববার (২২ জুন) টিআরটি গ্লোবাল তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, শনিবার (২১ জুন) মধ্যরাতে ইরানের ৩টি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ভয়াবহ বিমান হামলা চালানোর আগে তেহরানকে জানিয়ে দেয়- হামলার লক্ষ্য হবে শুধুই ফোরদো, ইসফাহান ও নাতানজ স্থাপনা একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পূর্ণমাত্রার সামরিক সংঘাতে জড়াতে চায় না।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আমওয়াজ মিডিয়াকে দেওয়া বক্তব্যে একজন জ্যেষ্ঠ ইরানি রাজনৈতিক সূত্র, নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ সতর্কবার্তার পর ইরানি কর্মকর্তারা তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পারমাণবিক সাইটগুলো থেকে ‘অধিকাংশ’ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম গোপন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। এর ফলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থেকে আংশিকভাবে রক্ষা পায় ইরান।

ইরানের সঙ্গে ‘দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতার’ চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র : ভ্যান্স

তবে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইরান- কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেনি।

এদিকে যুক্তরাজ্য সরকারকেও হামলার আগে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত থাকার কথা জানিয়েছেন দেশটির ব্যবসা ও বাণিজ্য মন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস। এতে বোঝা যায়, এই হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে সমন্বিত একটি সামরিক পদক্ষেপ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বি-২ বোমারু বিমান ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় ছোড়ে ছয়টি ১৩.৬ কেজি ওজনের ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ (এমওপি) বোমা। এর মধ্যে দুটি করে আঘাত হানে সাইটটির সুরক্ষিত দুটি প্রবেশপথে এবং দুটি বোমা ফেলা হয় বায়ুচলাচল নল লক্ষ্য করে।

এছাড়া একটি মার্কিন সাবমেরিন থেকে নাটানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ৩০টি টমাহক ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। এই দুই স্থাপনায় এর আগেও ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফক্স নিউজ-এর বরাত দিয়ে জানানো হয়, এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন- সবাই ফোরদো নিয়ে কথা বলছিল, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে কঠিন লক্ষ্য ছিল ইসফাহান।

এই মন্তব্য থেকেই ধারণা করা যায়, অপারেশনটি শুধু প্রতীকী ছিল না- বরং এতে ছিল জটিল পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারভিত্তিক লক্ষ্যবস্তুর হিসাব।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে যদি হামলা চালানো হয়, তাহলে তা হবে আরও ভয়াবহ।

অপরদিকে ইরান এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়ে কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পারমাণবিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

এর আগে তেহরান জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ-কে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ‘সত্য গোপনের’ অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, সামরিক উত্তেজনার পাশাপাশি এই ঘটনার ভেতর দিয়ে এক ধরনের ‘কূটনৈতিক সংকেত’ আদান-প্রদানও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগাম বার্তা পাঠানো, লক্ষ্য সীমাবদ্ধ রাখা এবং ইরানের পূর্বপ্রস্তুতি- সবই ইঙ্গিত দেয়, দুই পক্ষের মধ্যে এখনো কূটনৈতিক যোগাযোগের রেখা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে