ভিনদেশি ফল রাম্বুটান এখন রাঙ্গামাটির পাহাড়ে চাষ হচ্ছে বা পাওয়া যাচ্ছে । এর মধ্য দিয়ে পাহাড়ে উৎপাদিত ফলগুলোর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে রাম্বুটানের নাম।
এ ফলটি পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ না হলেও আস্তে আস্তে এই ফলের সম্প্রসারণ হচ্ছে।এ ফল অনেকটা লিচুর মতো, তবে লিচুর চেয়ে আকারে বড়, ডিম্বাকৃতি, কিছুটা চ্যাপ্টা। পাকা ফল উজ্জ্বল লাল, কমলা বা হলুদ আকর্ষণীয় রঙের হয়ে থাকে। ফলের পুরু খোসার উপরি ভাগ কদম ফুলের মতো শত শত চুল দিয়ে আবৃত। মালয়েশিয়া ভাষায় রাম্বুটান অর্থ চুল। একই কারণে এ ফল চুল বা দাড়ি বিশিষ্ট লিচু বলে অনেকের নিকট পরিচিত। রাম্বুটান লিচুর মতোই চিরহরিত, মাঝারি উচ্চতা বিশিষ্ট লম্বা গাছ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন সরকারি প্রতিষ্ঠান নানিয়ারচর হর্টিকালচার সেন্টার উদ্যান ফসল সমূহের চারা উৎপাদন এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে তা সর্বসাধারণের মাঝে বিপণন করে থাকে।নানিয়ারচর হর্টিকালচার সেন্টারে রাম্বুটানের তিনটি মাতৃগাছ রয়েছে। এ বছর এ সেন্টারের দুটি গাছে রম্বুটানের ফল এসেছে।
রাম্বুটান গাছে মার্চ মাসে ফুল ফোটা শুরু হয় এবং এপ্রিল মাসে কচি সবুজ রঙের ফল ধরতে আরম্ভ করে। ফুল ফোটার ৩-৪ মাস পর জুলাই-আগস্ট মাসে ফল পাকে। ফল পুষ্ট হলে সবুজ রঙের ফল হঠাৎ করে লাল, মেরুন রঙে রূপান্তর হতে থাকে। এ অবস্থা শুরু হওয়ার ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হয়।লিচু ফল সংগ্রহের ন্যায় এ ফল হাত দিয়ে সংগ্রহ করা হয়।এ ব্যবস্থায় তথা হতে নতুন শাখা গজিয়ে পরের বছর বেশি ফল ধরতে সহায়ক হবে।কোনো কোনো গাছে দ্বিতীয় বার অমৌসুমে কিছু ফুল-ফল ধরতে দেখা যায়।পিঁপড়ার আক্রমণ ছাড়া এ ফলে রোগবালাই নেই। আম, লিচু ও কাঁঠাল শেষ হয়ে যাওয়ার পর এ ফল পাকে।রাম্বুটান ফল গাছ থেকে সংগ্রহের পর প্রায় দশ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে অর্থাৎ এই ফলের শেলফ লাইফ বেশী দিন। তাই বাজারে এ ফলের চাহিদা ব্যাপক।
প্রধানত বীজ থেকে উৎপাদিত চারা দিয়ে রাম্বুটান ফল চাষ করা হয়। পাকা ফলের বীজ বের করে তা তাজা অবস্থায় চারা তৈরির কাজে ব্যবহার করতে হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় রাম্বুটান বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ৫-৭ দিনের বেশি থাকে না। এজন্য বীজ সংগ্রহের পর পরই বীজ বপনের প্রয়োজন হয়।এছাড়া এক বছর বয়স্ক চারায় বাডিং, সাইড গ্রাফটিং অথবা জোড় কলম পদ্ধতি অবলম্বনে কলম করা চারা রোপণ করার প্রচলন এখন বাড়ছে।
সেচ সুবিধা ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে বছরের যে কোনো সময় রাম্বুটান চারা/কলম লাগানো যায়। তবে বর্ষা আরম্ভ হওয়ার আগে এপ্রিল-মে মাসে গাছ রোপণ করা হলে বর্ষা ও শীত আরম্ভের আগে শিকড় দ্রুত ছাড়ানোর সুযোগ পায়।এ ফলের খোসা বেশি পুরু এবং সুতালো আবরণ থাকার ফলে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ অনেক কম। তবে মাঝে মাঝে ফল ছিদ্রকারী পোকা, পাতা খেকো লেদা পোকা, মিলিবাগ ও স্কেল পোকার উপদ্রব দেখা যায়। গাছে ফুল-ফল ধরা আরম্ভ করলে নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা দরকার। পোকার উপদ্রব বেশি দেখা গেলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় স্প্রে করে তা দমন ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
এ ফলের খোসা বেশি পুরু এবং সুতালো আবরণ থাকার ফলে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ অনেক কম। তবে মাঝে মাঝে ফল ছিদ্রকারী পোকা, পাতা খেকো লেদা পোকা, মিলিবাগ ও স্কেল পোকার উপদ্রব দেখা যায়। গাছে ফুল-ফল ধরা আরম্ভ করলে নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা দরকার। পোকার উপদ্রব বেশি দেখা গেলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় স্প্রে করে তা দমন ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
বর্তমানে বাংলাদেশে এ ফলের বাজার মূল্য প্রতি কেজি প্রায় ১০০০-১২০০/- টাকা। এ লাভজনক ফল চাষে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই রামবুটান ফল চাষ সম্প্রসারণে অনুপ্রেরণা পাচ্ছে এবং এ ফল চাষ সম্প্রসারণ এ দেশে বেগবান হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল রামবুটান চাষের জন্য উপযোগী। প্রায় সব ধরনের মাটিতে এ ফল চাষ করা যায়। তবে পানি সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধা যুক্ত উর্বর দো-আঁশ মাটি এ ফল চাষে বেশি উপযোগী। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশের এক দশমাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত। এখনো পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ জমি পতিত অবস্থায় পড়ে আছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা সমতল না হওয়ায় সেসব এলাকা ফল চাষের জন্য বেশী উপযোগী। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল তথা রাঙ্গামাটিতে রাম্বুটান একটি সম্ভাবনাময় ফল,বিস্তার আরম্ভ হয়,শীতের তীব্রতা কম এমন দেশে যেমন ভারত ও বাংলাদেশের এমন অংশেও এ ফলের বিস্তার ও চাষ জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া এ ফলের আদি উৎস। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইনস, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, ব্রুনাই ও শ্রীলংকায় প্রচুর রামবুটান ফল উৎপাদন হয়ে থাকে। এ সব দেশ থেকে অনুরূপ আবহাওয়া বিশিষ্ট দেশে বা দেশের অংশ বিশেষে এ ফলের প্রধানত বীজ থেকে উৎপাদিত চারা দিয়ে রাম্বুটান ফল চাষ করা হয়। পাকা ফলের বীজ বের করে তা তাজা অবস্থায় চারা তৈরির কাজে ব্যবহার করতে হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় রাম্বুটান বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ৫-৭ দিনের বেশি থাকে না। এজন্য বীজ সংগ্রহের পর পরই বীজ বপনের প্রয়োজন হয়।এছাড়া এক বছর বয়স্ক চারায় বাডিং, সাইড গ্রাফটিং অথবা জোড় কলম পদ্ধতি অবলম্বনে কলম করা চারা রোপণ করার প্রচলন এখন বাড়ছে।
যাযাদি/ এস