বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

দেশি ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিনিয়োগ বাড়ছে

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
  ২৩ মে ২০২৫, ১৬:৫৬
আপডেট  : ২৩ মে ২০২৫, ১৭:০৪
দেশি ব্যবসায়ীদের  বিদেশে বিনিয়োগ বাড়ছে
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় পুঁজি নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগের প্রবণতা বেড়েছে। তারা ভারত, আরব আমিরাত, হংকং, আয়ারল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বিনিয়োগ করছেন। এসব দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, খনিজ, মেশিনারিজ, টেক্সটাইল, ফার্মা, সেবা, ট্রেডিং খাতে পুঁজি নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে দেশ থেকে নিট মূলধন বা বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করা হয় ১ কোটি ১৩ লাখ ডলার বা ১৩৮ কোটি টাকা। গত বছর নেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৪৯ লাখ ডলার বা ৩০৪ কোটি টাকা। এক বছরে পুঁজি নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ডলার বা ১৬৬ কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ১২০ দশমিক ১০ শতাংশ। এসব অর্থের বড় অংশই বিনিয়োগ করা হয়েছে ভারতে।

1

তবে বিদেশে কার্যরত কোম্পানিগুলোর অর্জিত মুনাফা দেশে না এনে ফের বিনিয়োগ করার প্রবণতা গত এক বছরের ব্যবধানে কমেছে সাড়ে ৩৫ শতাংশ। পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের পরিচালিত এক কোম্পানি থকে অন্য কোম্পানি ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করার প্রবণতাও কমেছে। বরং তারা আগের ঋণ পরিশোধ করছে বেশি। গত এক বছরের ব্যবধানে এ ধরনের ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ১৯ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বৈদেশিক ঋণ, বৈদেশিক বিনিয়োগের হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতি ৬ মাস পরপর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এবারের প্রতিবেদনে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে। বিদেশে বিনিয়োগের এই তথ্য বাংলাদেশের যেসব উদ্যোক্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন তার হিসাব। এর বাইরে দেশ থেকে পাচার বা বেআইনিভাবে আরও অনেক বেশি পুঁজি বিদেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে। সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত কার্যক্রমে এসব তথ্যও বেরিয়ে আসছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা ৩ বছর দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বা এফডিআই কমেছে। একই সঙ্গে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বৈদেশিক ঋণ কিছুটা বাড়লেও ঋণ পরিশোধ বাড়ানোর ফলে সেপ্টেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে ঋণের স্থিতি কমেছে। আলোচ্য সময়ে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ কমছে, বাড়ছে দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ। যা ইতিবাচক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ স্বল্পমেয়াদি ঋণেই রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে দেশ থেকে বিদেশে নিট পুঁজি নেওয়া হয়েছিল ৫৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার। গত বছরে নেওয়া হয়েছে ৭১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এ হিসাবে এক বছরে বিদেশে পুঁজি নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে ১৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বৃদ্ধির হার ২৮ দশমিক ১০ শতাংশ। তিনটি পদ্ধতিতে এসব পুঁজি নেওয়া হয়। এর মধ্যে নিট মূলধন বা বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে, বিদেশে কার্যরত কোম্পানির অর্জিত মুনাফা দেশে না এনে পুনরায় বিদেশে বিনিয়োগ করা এবং বিদেশে এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি বা আন্তঃকোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা। এই তিন ধরনের বিনিয়োগকেই এফডিআই হিসাবে ধরা হয়। ২০২৪ সালে আয় থেকে ও ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ কমলেও দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় পুঁজি নিয়ে বিনিয়োগের প্রবণতা বেড়েছে।

দেশ থেকে ২০২৩ সালে নিট মূলধন বা বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করা হয়েছিল ১ কোটি ১৩ লাখ ডলার। গত বছর নেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। এক বছরে পুঁজি নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। বৃদ্ধির হার ১২০ দশমিক ১০ শতাংশ। এ ধরনের পুঁজি বিদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি রেকর্ড।

২০২৩ সালে মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ করা হয়েছিল ২ কোটি ডলার। গত বছরে করা হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে এ খাতে বিনিয়োগ কমেছে ৭১ লাখ ডলার। কমার হার ৩৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। আন্তঃকোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করার প্রবণতাও কমেছে। বরং কোম্পানিগুলো আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করছে। ২০২৩ সালে আন্তঃকোম্পানি ঋণ পরিশোধ করেছিল ২ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। গত বছরে পরিশোধ করা হয়েছে ৩ কোটি ৬ লাখ ডলার। ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৪৯ লাখ ডলার। পরিশোধের হার বেড়েছে ১৯ শতাংশ।

এদিকে বিদেশে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের স্থিতি কিছুটা কমেছে। ২০২৩ সালে স্থিতি ছিল ৩৫ কোটি ৬ লাখ ডলার। গত বছরে তা কমে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। ওই সময়ে কমেছে ৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। এর আগে ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতি বেড়ে সর্বোচ্চ ৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ডলার উঠেছিল। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে স্থিতি কমেছিল ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বেড়েছিল ৭ দশমিক ০৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পুঁজি নেওয়া হয়েছে ভারতে ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আরব আমিরাতে ১ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। তৃতীয় হংকংয়ে ১ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। আয়ারল্যান্ডে ২২ লাখ ডলার। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৭ লাখ ডলার।

বাংলাদেশে এফডিআই আসার প্রবণতা কমছে। ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা ৩ বছর দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। ২০২১ সালে বিনিয়োগ বেড়েছিল ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। ২০২২ সালে তা কমে সাড়ে ৩ শতাংশ। ২০২৩ সালেও কমেছে সাড়ে ৩ শতাংশ। ২০২৪ সালে এসে কমেছে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০২০ সালের পর এটি সর্বোচ্চ। ওই বছরে কমেছিল ২১ শতাংশ।

গত বছর বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১২৭ কোটি ডলার। গত বছর আসা বিদেশি বিনিয়োগের মধ্যে বেশি এসেছে দেশে কার্যরত বিদেশি কোম্পানিগুলোর এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ হিসাবে। এর মধ্যে আন্তঃকোম্পানির ঋণ হিসাবে এসেছে ৬২ কোটি ২০ লাখ ডলার। যা মোট বিনিয়োগের ৪৯ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছে নিট মূলধন হিসাবে ৫৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। যা মোট বিনিয়োগের ৪৩ শতাংশ। মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ এসেছে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে ট্রেডিং খাতে। মোট বিনিয়োগের ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ। বাকি বিনিয়োগ অন্যান্য খাতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে