দেশের শেয়ারবাজারে অব্যাহত টানা দরপতন চলছে। ফলে দিন যত যাচ্ছে শেয়ারবাজার তত তলানিতে নামছে। সেই সঙ্গে বেড়েই চলেছে বিনিয়োগকারীদের হাহাকার। কীভাবে বিনিয়োগ করা পুঁজি রক্ষা করবেন সেই উপায়ও খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। এতে পুঁজি হারা বিনিয়োগকারীদের বোবা কান্না কিছুতেই থামছে না। অব্যাহত দরপতনের সঙ্গে লেনদেনের গতিও কমে গেছে।
আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। ফলে কমেছে মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। অব্যাহত দরপতনের মধ্যে পড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে। অন্যভাবে বলা যায় করোনা মহামারির আমলে ফিরে গেছে দেশের শেয়ারবাজার।
২০১৯ সালের শেষদিকে মহামারি করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। করোনার প্রভাবে জনজীবনের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয় ২০২০ সালের মার্চে। এরপর দেশের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন শুরু হয়। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে টানা ৬৬ দিন শেয়ারবাজার বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটে।
করোনার সময় দেশের শেয়ারবাজারে যেমন ভয়াবহ দর পতন দেখা গিয়েছিল, এখন আবার সেই ধরনের ভয়াবহ দরপতন দেখা যাচ্ছে। অব্যাহত পতনের মধ্যে পড়ে মঙ্গলবার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪১ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৬৭৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে ২০২০ সালের ১২ আগস্টের পর সূচকটি এখন সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ ৪ বছর সাড়ে ৯ মাসের মধ্যে ডিএসই’র প্রধান মূল্য সূচক এখন সর্বনিম্ন অবস্থানে।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি কমেছে বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিকে দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে ডিএসইতে ৮৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩৭টির। আর ৭২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৪৯টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১২৫টির দাম কমেছে এবং ৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ১৭টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৫৪টির দাম কমেছে এবং ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পঁচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৭টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৮টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১৪টির দাম কমেছে এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৭২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৮২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে টানা ১২ কার্যদিবস ডিএসইতে ৩০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হলো।
এদিন ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেনে হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ১১ কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৬৭ লাখ টাকার। ৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিচ হ্যাচারি।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, আইএফআইসি ব্যাংক, শাইনপুকুর সিরামিক, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল, মিডল্যান্ড ব্যাংক, নাহি অ্যালুমেনিয়াম এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৪৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৫টির এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ১১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।