অন্যদিকে যারা অপেক্ষাকৃত কম আয়ের করদাতা, বিশেষ করে ৫ শতাংশের ট্যাক্স ব্র্যাকেটে রয়েছেন, আগামী অর্থবছর থেকে এ সুবিধা উঠে গেলে তাদের করের পরিমাণ বাড়বে। আবার বেশি আয়ের করদাতাদের ওপরও করের বাপ বাড়তে পারে। ফলে সবমিলিয়ে করমুক্ত আয়সীমা সামান্য বাড়লেও করদাতাদের ওপর করের চাপ বাড়তে পারে।
আগামী সোমবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় বিষয়টি তুলে ধরতে পারেন।
বর্তমানে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয় করমুক্ত। এর পরবর্তী এক লাখ টাকা আয়ের ওপর ৫ শতাংশ কর দিতে হয়। সেই হিসাবে, কারো বার্ষিক আয় সাড়ে ৪ লাখ টাকা হলে- তাকে ৫ হাজার টাকা কর দিতে হয়। তবে সমপরিমাণ আয়ের জন্য আগামী অর্থবছর থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা কর দিতে হতে পারে।
অর্থাৎ করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা হওয়ায়, এক লাখ টাকার মধ্যে ২৫ হাজার টাকার জন্য কর ছাড় পেলেও বাকি ৭৫ হাজার টাকার জন্যই এখন ব্যক্তিকে ১০ শতাংশ কর দিতে হতে পারে।
অন্যদিকে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, কারো বার্ষিক আয় সাড়ে ৩৮ লাখ টাকা অতিক্রম করলে অবশিষ্ট আয়ের ওপর ব্যক্তিকে ৩০ শতাংশ আয়কর দিতে হয়। কিন্তু নতুন করে যে প্রস্তাব করা হচ্ছে, তাতে ব্যক্তির আয় ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা অতিক্রম করলেই তিনি ৩০ শতাংশ কর হারের আওতায় পড়বেন। ফলে বিদ্যমান সুবিধা কর্তন করলে একজন করদাতাকে প্রায় সাড়ে ৮২ হাজার টাকা বাড়তি কর দিতে হবে।
এ বিষয়ে কর বিশেষজ্ঞ স্নেহাশীষ বড়ুয়াবলেন, প্রস্তাবিত ফাইন্যান্স অর্ডিন্যান্স ২০২৫ নিয়মিত করদাতাদের জন্য বড় একটা ধাক্কা। ইতোমধ্যেই তারা মূল্যস্ফীতির চাপে আছে, এর মধ্যে কর ছাড়ের বদলে তাদের আরও বেশি কর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এতে সমস্যায় থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্মীদের বেতন বাড়াতে হবে, নাহলে কর্মীদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। যারা নিয়ম মেনে কর দেন, তাদের শাস্তি না দিয়ে বরং যারা কর ফাঁকি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
দেশে বর্তমানে ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারীর (টিআইএন) সংখ্যা ১ কোটি ১৫ লাখ। এর মধ্যে গত বছর কর রিটার্ন দাখিল করেছেন ৪৫ লাখ। এই ৪৫ লাখের মধ্যে শূন্য রিটার্ন দাখিল করেছেন দুই-তৃতীয়াংশ, বা প্রায় ৩০ লাখ। অর্থাৎ রিটার্ন এর সঙ্গে কর দিয়েছেন ১৫ লাখ করদাতা।
আগামী অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যারা আয় করবেন, তাদের ওপর এই কর প্রযোজ্য হবে পরবর্তী কর বছরে, অর্থাৎ ২০২৬-২৭ কর বছরে।
প্রস্তাবিত কর হার অনুযায়ী, ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করমুক্ত। নারী ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য ৫ লাখ টাকা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও 'জুলাই যোদ্ধাদের জন্য ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা বার্ষিক আয় করমুক্ত হবে।
সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার পরবর্তী তিন লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। পরবর্তী ৪ লাখের ওপর ১৫ শতাংশ, ৫ লাখের জন্য ২০ শতাংশ, ২০ লাখের জন্য ২৫ শতাংশ এবং এর চেয়ে বেশি হলে তার ওপর ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে।