মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ার প্রেক্ষাপটে মূল্যবান ধাতুগুলোয় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আরো বেড়েছে। স্বর্ণের উচ্চমূল্যের কারণে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে মূল্যবান ধাতু রুপার ওপর। গত মঙ্গলবার স্পট মার্কেটে রুপার দাম বেড়ে আউন্সপ্রতি ৩৭ ডলার ২৬ সেন্টে পৌঁছেছে, যা ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই দিনে নিউইয়র্কের ফিউচার মার্কেটেও ধাতুটির দাম বেড়ে আউন্সে ৩৭ ডলার ৩৩ সেন্টে পৌঁছে। খবর মাইনিং ডটকম ও রয়টার্স।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার চলমান উত্তেজনায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়ানোর আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আপৎকালীন বিনিয়োগ খাত হিসেবে ব্যবসায়ীদের কাছে মূল্যবান ধাতুর চাহিদা বাড়ছে।
সুইজারল্যন্ডভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এমকেএস প্যাম্পের স্ট্র্যাটেজিস্ট নিকি শিলস বলেন, ‘ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে সরাসরি সংঘাত শুরু হলে পারমাণবিক বিপর্যয় বা বৃহৎ যুদ্ধের ঝুঁকি রুপার চাহিদাকে আরো তীব্র করে তুলতে পারে।’
বাজার পর্যবেক্ষকদের মতে, স্বর্ণের রেকর্ড দামের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী বিকল্প নিরাপদ সম্পদ হিসেবে রুপার দিকেই ঝুঁকছেন। এতে ধাতুটির বাজারে চাহিদা ও বিনিয়োগ উভয়ই বাড়ছে। সামনের দিনগুলোয় এতে আরো ঊর্ধ্বমুখী চাপ তৈরি হতে পারে।
তবে বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্বর্ণের বাজারে তেমন বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়নি। এর পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদহারের বিষয়ে কঠোর অবস্থান। স্পট মার্কেটে গতকাল স্বর্ণের দাম দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। আউন্সপ্রতি মূল্য স্থির হয়েছে ৩ হাজার ৩৬৩ ডলার ৮৯ সেন্টে। অন্যাদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিউচার মার্কেটে এ সময় মূল্যবান ধাতুটির দাম দশমিক ৮ শতাংশ কমে আউন্সপ্রতি নেমেছে ৩ হাজার ৩৮০ ডলার ৬০ সেন্টে।
এ বিষয়ে এএনজেড কমোডিটি স্ট্র্যাটেজিস্ট সোনি কুমারী বলেন, ‘ফেডের ইঙ্গিত অনুযায়ী মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি এখনো বেশি। ফলে সুদহার কমানোর সম্ভাবনা কমে গেছে। এ কারণে কমেছে স্বর্ণের দাম। এছাড়া ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়াও মূল্যবান ধাতুটির দামে বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।’
জুলিয়াস বেয়ার গ্রুপের হেড অব নেক্সট জেনারেশন রিসার্চ কারস্টেন মেনকে বলেন, ‘স্বর্ণের দামের বর্তমান স্থিতিশীলতা প্রথমে বিস্ময়কর মনে হলেও অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাব সাধারণত স্বর্ণের ওপর দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী হয় না।’
তবে অনেক বিশ্লেষক স্বর্ণের বাজারের বর্তমান প্রতিক্রিয়াকে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ঊর্ধ্বগতি হিসেবে দেখছেন। সুইস ব্যাংক ইউবিএস এক বিশ্লেষণে জানিয়েছে, স্বর্ণের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ধারা এখনো বজায় আছে। মূল্যবান ধাতুটির দাম আবারো আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৫০০ ডলারে পৌঁছতে পারে।