গত কয়েক বছরে দেশের পেঁয়াজ বাজারে বেশ উত্থান-পতন দেখা গেছে। তবে দেশীয় উৎপাদন ও বিকল্প একাধিক উৎস থেকে আমদানি সচল থাকায় সাম্প্রতিক মাসগুলোয় স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিগত বছরগুলোয় দেশে পেঁয়াজের বাজার বারবার অস্থিশীল হয়ে উঠতে দেখা গেছে। ২০২১-২২ সালের দিকে ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পর দেশে পেঁয়াজের দাম উঠে দাঁড়ায় প্রতি কেজি রের্কড ৩০০ টাকায়। এমনকি গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বরেও দেশে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ১০০ টাকার ওপরে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল রয়েছে পেঁয়াজের বাজার।
গত ছয় মাসে পেঁয়াজের দাম মাসভেদে সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ টাকায় ওঠানামা করেছে। তারও আগের ছয় মাসে দামের ওঠানামা ছিল কেজিপ্রতি সর্বনিম্ন ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকার মধ্যে।
সাধারণ উৎপাদন মৌসুমের পর নতুন রোপণ ও উৎপাদন মৌসুম শুরুর আগে দেশীয় মজুদ শেষ হয়ে আসা কিংবা ভারত থেকে আমদানি বন্ধ কিংবা সীমিত হওয়ার ফলে বছরের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছে পেঁয়াজের বাজার। যেমন ২০২৪ সালের নভেম্বরে দেশে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১৩০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। মূলত ১৫ অক্টোবর থেকে রবি শস্য মৌসুম শুরু হয়। ফলে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ আসার আগে সরবরাহ সংকটে দাম বেড়ে যায়। আবার দেশীয় উত্তোলন মৌসুম শেষ হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়তে বাড়তে অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে দামের চূড়ায় উঠে যায় বাজার। কিন্তু মৌসুম শেষ হওয়ার কয়েক মাস পরও দেশে পেঁয়াজের বাজার এখনো স্থিতিশীল রয়েছে।
পেঁয়াজের বাজারে স্থিতিশীলতার জন্য বাজার মনিটরিং, মজুদদারি প্রবণতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ সরকারি একাধিক উদ্যোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে বিকল্প উৎস থেকে আমদানির পাশাপাশি বাড়তি দামের কারণে কৃষকদের মধ্যে নিজ উদ্যোগে বাড়তি চাষের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
দেশে পেঁয়াজের মোট চাহিদা ৩০-৩২ লাখ টন। সর্বশেষ মৌসুমে ৩৯ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। তবে উৎপাদন থেকে সরবরাহ ও সংরক্ষণ অবস্থায় ৩০ শতাংশ পচন হিসাব করলে পেঁয়াজের মোট দেশীয় সরবরাহ ২৭ লাখ টনের মতো।
আগে প্রতি বছর ৮-১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হলেও চলতি মৌসুমে বাড়তি সরবরাহের কারণে আমদানি কমে এসেছে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে ৫-৮ শতাংশ হারে চাহিদা বাড়তে থাকায় উৎপাদন বৃদ্ধি, পচন প্রতিরোধের বিকল্প নেই বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।