২০২৫ সালে বিশ্ববাজারে সোনার দর ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক অস্থিরতা আর বৈশ্বিক সংঘাতের মধ্যে সোনা হয়ে উঠেছে বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু এই সোনার উৎস সম্পর্কে সাধারণ মানুষ অল্পই জানে। পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে এই মূল্যবান ধাতুর খনন অনেক ক্ষেত্রেই জঙ্গি গোষ্ঠী ও সামরিক সরকারের সহিংসতার অর্থের জোগানদাতা হয়ে উঠেছে।
মালির সামরিক শাসক জেনারেল আসিমি গোইতা সম্প্রতি একটি সোনা শোধনাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। রাশিয়ার ইয়াদরান গ্রুপের অংশীদারত্ব আছে সেখানে। বুরকিনা ফাসোও প্রথমবারের মতো সোনা পরিশোধনাগার তৈরি করছে। বিদেশী কোম্পানির স্থানীয় কার্যক্রমে ১৫% অংশীদারত্ব রাষ্ট্রীয়ভাবে নেয়া বাধ্যতামূলক করেছে দেশটি।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এই সোনার ব্যবসা একদিকে যেমন সরকারকে অর্থ জোগাচ্ছে, অন্যদিকে জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের শাখাগুলোও এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লড়াই করছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সাহেলে সোনার ছোট ছোট খনিগুলো থেকে আসা সোনা প্রধানত সংযুক্ত আরব আমিরাতে রফতানি হচ্ছে। সেখান থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্ববাজারে। তবে এসব সোনার কোনো উৎস-নির্ধারণী সনদপত্র থাকে না।
চ্যাথাম হাউসের গবেষক অ্যালেক্স ভাইনস বলেন, এই সোনার বড় অংশই যুদ্ধবাজদের হাতে যাচ্ছে। আর সাহেলের সাধারণ মানুষরা শোষিত হচ্ছে। তার মতে, এই ‘ব্লাড গোল্ড’ বা রক্ত সোনা আফ্রিকার নতুন প্রধান সংঘাতের জ্বালানি হয়ে উঠেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ— মালি ও বুরকিনা ফাসোর সেনাবাহিনী এবং রুশ ভাগনার গ্রুপ সাধারণ মানুষের ওপর বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে। অবৈধ খনিগুলোয় শ্রমিকেরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করে। সোনার দাম বাড়লেও তাদের বাড়েনি তাদের মজুরি। মালির এক খনি শ্রমিক বলেন, ‘মূল্য বাড়লেও লাভের ভাগ মালিকেরা রাখে। আমাদের কোনো সুরক্ষা নেই।‘
বিশ্বে হীরকের মতো সোনার উৎপত্তি নির্ধারণে কোনো কার্যকর পদ্ধতি নেই। ভাইনস বলেন, সোনা গলিয়ে ফেলা হয় প্রাথমিক পর্যায়ে, ফলে উৎস শনাক্ত প্রায় অসম্ভব। তিনি আরো জানান, সাহেল থেকে আসা এই সোনা সহজেই যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বাজারে প্রবেশ করছে। আর একবার আরব আমিরাতে শোধন হলে সেই সোনা আর চেনার উপায় থাকে না।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, জবাবদিহি আর নীতিমালার দুর্বলতার কারণে পশ্চিম আফ্রিকার মানুষদের রক্তের বিনিময়ে সোনার ব্যবসা আরো বিস্তৃত হবে। আর এই সংঘাত ও শোষণের গল্প হয়তো অদূর ভবিষ্যতে থামবেনা