দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক পর্যায়ের লেভেল ১ সেমিস্টার ১ এ ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের দুইদিন ব্যাপী ৮ টি অনুষদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো ২০২৪ ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম।
২৭ ও ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম-১ ও ২ এ পর্যায়ক্রমে ৮ টি অনুষদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়।
সকল অনুষদের ওরিয়েন্টেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবির মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা। বিশষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট অনুষদের সকল বিভাগীয় চেয়ারম্যানবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. শামসুজ্জোহা, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. এস. এম. এমদাদুল হাসান।
ওরিয়েন্টেশন কার্যক্রমে সভাপতিত্ব করেন স্ব স্ব অনুষদের সম্মানিত ডীনগণ। ওরিয়ন্টেশন অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত ও গীতা পাঠ করা হয় এবং নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। পাশাপাশি স্ব স্ব অনুষদের পক্ষ থেকে একাডেমিক বিষয়সহ অনুষদের বিস্তারিত পরিচিতি তুলে ধরা হয়। এ সময় নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রতিটি অনুষদ থেকে দুজন করে শিক্ষার্থী তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
ওরিয়েন্টশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই হাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা নবীন শিক্ষার্থী ও উপস্থিত অভিভাবকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন,
তিনি বলেন, অনেকের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা মুক্ত পরিবেশে কথা বলতে পারছি । আমি বিগত স্বৈরাচার বিরাধী আন্দোলনে নিহত সকল শহীদগণের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের আশু রোগমুক্তি কামনা করছি। বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার এই আন্দোলন প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার ছাত্র-জনতার তাজা প্রাণ ঝড়ে গেছে। আমি সকল শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। আমি দেখেছি রংপুরের আবু সাঈদ কিভাবে একটার পর একটা গুলি বুকে নিয়েছে। প্রথম গুলির পর সে একটু ঝুঁকছিল, দ্বিতীয় গুলি লাগলে আরেকটু ঝুঁকছে এবং তৃতীয় গুলি লাগার পর সে পড়ে গেছে, এরপরও এক মুহূর্তের জন্য তাঁর হাতের লাঠিটা পড়ে যায়নি। এই লাঠি হলো শক্তি ও সাহসের প্রতিক। তোমরা তার সহযোদ্ধা এবং অনেকেই তোমরা এই আন্দোলনের সাথ ছিলে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে তোমরা এবারের এই আন্দোলনকে সফল করেছো। এই দেশটাকে আমরা নষ্ট করেছিলাম, তোমরা আমাদের পথ দেখিয়েছো। তোমাদের এই আন্দোলনের সেন্টিমেন্টকে আমি শতভাগ ধারণ করি এবং আমি শুরু থেকেই এই আন্দোলনের সাথে ছিলাম। আমরা চেষ্টা করেছি বলেই সৃষ্টিকর্তা আমাদের সাথে ছিলেন। এই আন্দোলনের অন্যতম বিষয় ছিল মেধার মূল্যায়ন ও বৈষম্য নিরসন করা। তাই মেধার মূল্যায়ন করতে হলে প্রথমেই তোমাদের মেধাবী হতে হবে। এজন্য মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। সকলের সাথে ভালো ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। তোমরা মনে রাখবা আবু সাঈদরা মেধার জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে, তাই মেধার মূল্যায়ন করিও।
র্যাগিং এর বিষয়ে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, হাবিপ্রবিতে র্যাগিং এর কোন স্থান নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে র্যাগিং চিরতরে বিলিন করা হবে এবং কেউ র্যাগিং এর সাথে জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে আগামী ২৯ তারিখ আমরা একটি র্যাগিং বিরোধী র্যালি করবো। পরিশেষে তিনি সুন্দরভাবে ওরিয়েন্টেশন কার্যক্রম আয়াজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ওরিয়ন্টেশন কার্যক্রমে নবীন শিক্ষার্থীদের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি সংক্রান্ত ফোল্ডার, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত কলম, ক্লাস রুটিন ও একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রদান করা হয়।
উল্লখ্য, আগামীকাল অডিটোরিয়াম ২ এ সকাল সাড়ে নয় টায় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ, দুপুর দুই টায় কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ, অডিটোরিয়াম ১ এ সকাল এগারো টায় ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ ও বিকেল তিন টায় বিজ্ঞান অনুষদের ওরিয়ন্টেশন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।
যাযাদি/ এসএম