জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে ইসলামিক কনফারেন্স -২০২৪।শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহির রায়হান মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সোসাইটি অব ইসলামিক নলেজ সিকারস ( জেইউ সিকস) কতৃক আয়োজিত এ কনফারেন্সে সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮ টা পর্যন্ত বিভিন্ন বক্তারা বক্তব্য রাখেন। নামাজ এবং খাবারের বিরতির মাঝে মাঝে চলে ইসলামিক নাশিদ ও গজল।
কনফারেন্স আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রফেসর মোখতার আহমেদ, শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক, ড. মোহাম্মাদ সরোওয়ার হোসেন, ডা. শামসুল আরেফিন শক্তি, ইমরান রাইহান, আবু মোহাম্মাদ রাফিউজ্জামান, আব্দুল্লাহ আল মাসউদ, আহমেদ রফিক, জাকারিয়া মাসুদ, এম. মাহবুবুর রহমান, মুফতি তারিকুজ্জামান, এবং অন্যান্যরা। বক্তারা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, ইমান ও আকীদা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
আমন্ত্রিত বক্তা জাকারিয়া মাসুদ বলেন, 'আমরা এমন দিনের কথা বলি যেখানে দেখা হয় না কারা নিম্নশ্রেণীর আর কারা উচ্চ শ্রেণির। উসমান (রা:) কে একবার উটের মাংস দেয়া হলে তিনি বলেন যতদিন না আমার খেলাফতের সবাই এমন খাবার খেতে পারবে ততদিন আমাকে কেউ এ খাবার দিবে না। আর আমরা এমন সমাজ বানাই যারা বলেন আমার পিয়নের ৪০০ কোটি টাকা আছে। অর্থ থাকতেও তাদের অর্থের লোভ কমে না। 'স্বপ্নের' প্যাকেজ গুলো দেখেই আমরা বুঝতে পারি বর্তমানে ম্যাক্সিমাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে।'
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, 'প্রকৌশলী ইমারত তৈরির কাজ করে, ডাক্তার সেবা প্রদান করে, ধর্ম প্রচারক ইহ জগৎপর জগতের চর্চা করে। আমাদের বাবা আমা ডাক্তার প্রকৌশলী বানানোতে ইফোর্ট দেয় কিন্তু ইহজগৎ ও পরজগত নিয়ে জানতে এফোর্ট দেন না।'
কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিনুর রহমান বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আমরা ইসলাম চর্চার কথা ভুলে যাই। আমাদের আসল উদ্দেশ্য ভুলে যাই। এই কনফারেন্স আমাদের সেই ইসলাম এবং ইবাদতের কথা স্বরণ করিয়ে দিয়েছে। আমাদেরকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য এ ধরনের কনফারেন্স খুবই ফলপ্রসূ। আয়োজকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে এ ধরনের কনফারেন্স যেন আরও আয়োজন করা হয়। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও ইসলাম পালন সহজ হয়ে যাবে।'
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ৪৭ ব্যাচের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইয়্যেদ আহমেদ বলেন, 'আমাদের যে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন হলো এরপর থেকে সবাই যে যার মতামত প্রকাশ করতে পারছে। কিন্তু আমরা যারা ইসলাম প্রিয় তাদের নিয়ে স্পেসিফিক কোনো আয়োজন হয়নি। সেই প্রেক্ষিতেই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল এ ধরনের একটি আয়োজন করা। যাতে করে ইসলাম প্রিয় মানুষেররা যেন তাদের ভয়ভীতি কাটাতে পারে এবং এই ক্যাম্পাসে নির্দ্বিধায় ইসলাম পালন করে। আমাদের মতাদর্শ যেন সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি, সেজন্য এই আয়োজন। তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু এটি জাবিতে প্রথম আয়োজন, তাই এর আয়োজন করতে আমাদের টিমকে পরিশ্রম করতে হয়েছে। প্রায় দেড় মাস কাজ করার ফলে আজকের আয়োজন সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া আমাদের সিনিয়র যারা আছেন তারা অনেক হেল্প করেছেন আর্থিক সহযোগিতায়।'
কনফারেন্সে সর্বমোট দেড় হাজার পুরুষ এবং দুইশত ত্রিশ জন নারী অংশগ্রহণ করেন। দিনব্যাপী এ আয়োজনে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও বিকেলের স্ন্যাকস দেওয়া হয় অংশগ্রহণকারীদের। এছাড়া কনফারেন্স উপলক্ষে মিলনায়তনের সামনে ইসলামি বই মেলা আয়োজিত হয়। এসময় দশটির বেশি প্রকাশনা বইয়ের দোকান দেন। এছাড়া চৌদ্দটি প্রতিষ্ঠান এ আয়োজনে টাইটেল স্পনসর হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
যাযাদি/ এম