প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা সোমবার (২৬ মে) থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছে। তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলবে। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
এর আগে গত ৫ মে থেকে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি দিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এরপর দুই ঘণ্টা এবং পরে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন তারা। কিন্তু তিন দফা দাবির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের আশ্বাস না পেয়ে সোমবার থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে গেছেন তারা।
ফলে দেশের ৬৫ হাজার ৫৬৭টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে সব মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হজার ৬৮৫ জন। বিগত সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ২ কোটি ৯ লাখ ১৯ হাজার ২০১ জন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, এইচএসসি ও ডিপ্লোমা যোগ্যতায় নার্স ১০ম গ্রেড, এসএসসি ও চার বছরের ডিপ্লোমা যোগ্যতায় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ১০ম গ্রেড, বাংলাদেশ পুলিশের এসআইতে স্নাতক যোগ্যতায় ১০ম গ্রেড, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা একই শিক্ষাগত যোগ্যতায় ১০ম গ্রেড পেলেও বেতন বৈষম্যের শিকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।পূর্ণদিবস কর্মবিরতির প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এবং সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দশম গ্রেডের জন্য আন্দোলন করে আসছি। মানববন্ধন করেছি, সরকারকে স্মারকলিপি দিয়ে আমাদের বঞ্চনার কথা জানিয়েছি। কিন্তু সরকার এতে গুরুত্ব দেয়নি’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট কর্মদিবস ৮৫ দিন। এই ৮৫ দিনের কর্মঘণ্টায় সিলেবাস শেষ করা কঠিন। আর সে কারণে দিনের কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে ২০২৪ সালে আদেশ জারি করে প্রথিমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলবে। বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় খোলা থাকবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত।
রোজার সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। দুই শিফট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বার্ষিক কর্মঘণ্টা ৬০০ ঘণ্টা এবং এক শিফট বিদ্যালয়ের জন্য ৯২১ ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে দুই শিফট বিদ্যালয়ে ৭৯১ ঘণ্টা এবং এক শিফট বিদ্যালয়ে বার্ষিক কর্মঘণ্টা হবে ১ হাজার ২৩১ ঘণ্টা।
পরীক্ষাসূচি অনুযায়ী, ২৩ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে প্রথম সাময়িক, ৬ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে দ্বিতীয় সাময়িক এবং ১১ থেকে ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা (প্রথম-চতুর্থ শ্রেণি) নিতে হবে। এছাড়া পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার জন্য ২০ থেকে ৩০ নভেম্বর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
এই কর্মঘণ্টা ঠিক রাখতেই হিমশিম থেকে হয় শিক্ষকদের। শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি কমাতে আলাদা করে পরিশ্রম করতে হয় শিক্ষকদের। এরপর নতুন করে শিখন ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
গত ৫ থেকে ১৫ মে এক ঘণ্টা করে মোট ১১ ঘণ্টা, ১৬ থেকে ২০ মে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ৫ দিনে ১০ ঘণ্টা, ২১ থেকে ২৫ মে ৫ দিন অর্ধদিবস ধরে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে ১৫ ঘণ্টা শিখন ঘাটতিতে পড়ে শিক্ষকর্থীরা। আর সোমবার থেকে লেখাপড়াই বন্ধ হয়ে গেলো। তবে পরীক্ষা এই কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লেখাপড়া না করলে পরীক্ষা কীভাবে দেবে শিক্ষার্থীরা।