আঙুল উচিয়ে নিজ বাড়ি নদীগর্ভে বিলীনের দৃশ্য দেখিয়ে বাবুল সূত্রধর বলেন, 'বাপদাদার ভিটে অনেক বড় ছিল। এর বেশিরভাগই নদীভাঙনে পড়েছে। অল্প যে জায়গাটুকু বাকী আছে তাও যে কোনদিন দাসে পড়তে পাড়ে।' তার দুই চোখে তখন অলে ছলছল করছিল।
বাবুল সূত্রধর আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নে কালনী-কুশিয়ারা ভাঙনকবলে পড়া সৌলরী গ্রামের বাসিন্দা।
আতঙ্কে রাতে ঘুম হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, 'বাড়ির টিকে থাকা অংশ রোজ একটু একটু করে কমছে। হঠাৎ করে পুরো বাড়িনিয়ে বাস্তুহারা হয়ে যাবো।'
একইভাবে ভাঙনকবলে পড়েছে সৌলরী গ্রামের রঞ্জিত সূত্রধর, মনোরঞ্জন সূত্রধর, অধীর সূত্রধর, পাশের গ্রামের সুজিত, অভিনাস, অধীর, অশ্বীনি, দিপঙ্কর, মনোরঞ্জন, অরবিন্দ, নিলকান্ত, মতিন্ড, যামিনি, রমাকান্ত, গৌতম, সুশেন, লবু ও ভূষেনসহ দুই শতাধিক লোকের বাড়ি।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কালনী-কুশিয়ারা নদীর তীর ঘেঁষা কয়েকটি গ্রামের আরও হাজারো পরিবার নদীভাঙনের শঙ্কায় দিনরাত পার করছেন। নদীভাঙন রোজ বাড়ছে। এতে বাস্তুহারা হচ্ছেন ইউনিয়নের মনিপুর, সৌলরী ও কালনীপাড়ার লোকজন। কয়েকটি বসতঘর যে কোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে-এমন শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বাড়িহারা অনেকে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
সৌলরী গ্রামে নদীভাঙন কবলিত রেখা রাণী সূত্রধর জানান, দুইদিন আগে তাঁর বসতবাড়ি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন। আশ্রয় পাওয়া ওই বাড়িটিও যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। তিনি বলেন, 'আমরা গরীব মানুষ, নদীতে ভেসে গেলেও আমাদের দেখার কেউ নেই।'
গ্রামের রঞ্জিত সুত্রধর, মনোরঞ্জনসূত্রধর ও অধীর সূত্রধর বলেন, "সরকারি কর্মকর্তারা কয়েকদিন পরপর এসে দেখে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন সহযোগিতা করেননি। আগের জনপ্রতিনিধিরাও শুধু আশ্বাস দিয়ে গেছেন। কেউ গ্রাম রক্ষায় এগিয়ে আসেননি।"
জানা গেছে, ২০২১ সালে কুশিয়ারা নদীর ভাঙন থেকে সৌলরী গ্রাম রক্ষায় ২০ হাজার জিও ব্যাগ ভরে বালু ফেলা হয়। অস্থায়ী ভাবে নদীভাঙন রোধে ব্যয় হয়েছিল ৮৯ লাখ টাকা। এসব ব্যাগের এখন অস্তিত্ব নেই।
সৌলরী গ্রামের বাবুল সূত্রধরসহ আরও কয়েকজন বলেন, 'নদীগর্ভে আমাদের বসতঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের গ্রাম রক্ষার জন্য যদি বাঁশের আড়া দেওয়ার একটা ব্যবস্থা তাহলেও কিছুটা সাহস বাড়তো। কিন্তু আমাদের বিপদে কেউ নেই। আর কিছুদিন এভাবে গেলে গ্রামের চিহ্নও থাকবে না।
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জের ইউএনও নিবিড় রঞ্জন তালুকদার বলেন, সৌলরীবাজার, মণিপুর, বদরপুর ও কালনীপাড়ার তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে মর্মে জানা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারি প্রকৌশলী পরিদর্শন করে রিপোর্ট করেছেন। দ্রুত আপদকালীন জরুরী নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু হবে। ডিজাইন ও ইস্টিমেট প্রস্তুত করে স্থায়ী প্রতিরক্ষার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।